ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের ছুটি এবং আনন্দ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৭ জুন ২০১৬

ঈদের ছুটি এবং আনন্দ

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। রমজানের তিনটি শুক্রবার অতিবাহিত হওয়ার পর সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঈদ বুঝি এসেই গেল। এখন শুধু চাঁদ দেখার অপেক্ষা। খুশি ও আনন্দটা এবার বুঝি তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হচ্ছে আগেভাগে সরকারী ছুটি ঘোষণা করায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ছুটি একদিন, সাপ্তাহিক ছুটি, শব-ই-কদরের ছুটি ও ঈদের টানা তিন দিন মিলিয়ে একটানা নয় দিনের লম্বা ছুটি। এর আগে টানা পাঁচদিন, সাতদিন ছুটির কথা শোনা গেছে। একটানা নয়দিন ছুটি বোধকরি এবারই প্রথম। জনসাধারণ বিশেষ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার-পরিজনের সদস্যরা নিশ্চয়ই ভাসছেন আনন্দের জোয়ারে। টানা নয়দিনের ছুটির পরেও বুঝি রয়েছে ছুটির ফাঁদ ও ফাঁক-ফোকর। যেমন, ঐচ্ছিক ছুটি, সিক লিভ, সমঝোতা ছুটি ইত্যাদি। এটি হলো উর্ধতন ও অধস্তনদের মধ্যে অদৃশ্য বোঝাপড়া বা সমঝোতা। আপাতদৃষ্টিতে ধারণা করা যায় যে, সরকার যখন ১৬ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিসে আসা বাধ্যতামূলক করেছে, তখন ফিরতি টিকেট সময়মতো পাওয়া যাবে তো! রাজধানীর বাইরে প্রতিটি শহর-নগর-উপজেলায় ফিরতি টিকেটের তীব্র চাপ ও সঙ্কটের কথা শোনা যাচ্ছে ঢাকায় বসেই। এই সুযোগটা কী পরিবহন ব্যবসায়ীরা নেবেন না পুরোপুরি। বিশেষ করে বাস ও নৌযান মালিকরা। সরকারী ট্রেনের টিকেটের কী হবে! শেষ পর্যন্ত ফিরতি যাত্রীদের প্রবল চাপও চাহিদা সামাল দেয়া যাবে তো? এটা কী নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ১০ জুলাই সরকারী অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার স্বাভাবিক থাকবে? এই অবস্থায় ১৬ জুলাই শনিবার পর্যন্ত উপস্থিতির হার কত হবে, সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ঈদের ছুটির ছোঁয়া লেগেছে কেনাকাটায়ও। ঈদ মানে নতুন পোশাক, আনন্দে যা যোগ করে বাড়তি মাত্রা। নতুন পোশাক সবার জন্য চাই-ই চাই। নতুন জামা-কাপড় ব্যতিরেকে পূর্ণতা পায় না ঈদের আনন্দ। আর তাই প্রতিবারের মতো এবারও সাধ ও সাধ্যানুযায়ী পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন এমনকি গৃহকর্মীর জন্যও কেনাকাটায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। সত্যি বলতে কী, কেনাকাটা বা বেচাকেনা যা-ই বলি না কেন, জমে উঠেছে সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম পর্যায়ে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে বিলাসবহুল শপিংমল, সর্বত্রই সব শ্রেণী ও পেশার সর্বোপরি সব বয়সের নর-নারী ও শিশুর উপচেপড়া ভিড়। অভিজাত শপিংমল, সুপার মার্কেটগুলোয় আনন্দ-মুখরিত মানুষজনের হাস্যোজ্জ্বল রঙিন ও বর্ণাঢ্য মিছিল। তীব্র গরম, অসহনীয় রোদ এমনকি হাল্কা-পাতলা বৃষ্টিও মানুষের অবাধ উচ্ছ্বাস, চলাচল ও কেনাকাটায় বিঘœ সৃষ্টি করতে পারেনি। অবশ্য এর পাশাপাশি উত্তরার একটি মার্কেটে লিফট ছিঁড়ে দুর্ঘটনা ও অগ্নিকা-ে কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর দুঃখজনক খবরও আছে। ছোটখাটো ছিনতাই, রাহাজানিও যে হচ্ছে না তাও নয়। তবে মোটের ওপর কেনাকাটার এহেন আনন্দ-মুখরিত আবহ বিরাজ করছে রাজধানীসহ সারাদেশেই। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে, বেড়েছে বোনাস। সাধারণভাবে সর্বস্তরের মানুষের আয়-উপার্জন বেড়েছে বৈকি। সুতরাং সর্বস্তরের মানুষ এখন বাড়তি পয়সা খরচ করার সুযোগ পাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় গরিব ও দুস্থরাও ভাগ করে নিতে পারছে ঈদের আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেও প্রতিবছর নতুন জামা-কাপড় ও অন্যবিধ উপকরণ বিলি-বণ্টন করা হয়। সুতরাং ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবের’ মধ্যেই সবার জন্য পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ঈদের আনন্দ। ঈদে সবার চলাচল ও যাতায়াত নিরুপদ্রব ও নির্বিঘœ হোক, এটাই প্রত্যাশা।
×