ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিন্মমানের সেমাই

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৬ জুন ২০১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিন্মমানের সেমাই

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ সেমাই ছাড়া ঈদের উৎসব পালন যেন ভাবাই যায় না। তাই ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ দিয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব লাচ্ছা সেমাই নামক বিষ অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। ভেজাল বিরোধী অভিযান শিথিল হয়ে পড়ায় বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই এসব লাচ্ছা সেমাই বিক্রি করা হচ্ছে খোলা অবস্থায় ও ক্ষতিকর পলি প্যাকেটে। অধিকাংশ লাচ্ছা তৈরির কারখানা বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া যে সকল কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন হাইজিন নিয়মনীতি। নামি-দামি অনেক কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব লাচ্ছা বাজারজাত করে আসছে মালিকরা। মানুষের খাওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব লাচ্ছা সেমাই ঠাকুরগাঁও শহরের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে অবাধে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে ভেজাল বিরোধী অভিযান শিথিল হয়ে পড়ায় লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। অতি নিম্নমানের উপাদানে দিয়ে তৈরি এসব লাচ্ছা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা। ঈদকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও শহরের পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য লাচ্ছা সেমাই কারখানা। এছাড়াও বিভিন্ন হোটেল, কনফেকশনারীতেও লাচ্ছা তৈরি হচ্ছে। যত্রতত্র লাচ্ছা সেমাই তৈরির মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই ঈদে শহরের এসব মৌসুমী ব্যবসায়ী কোনো সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তৈরি করছে এসব সেমাই। শহরের অলি-গলিতে অস্থায়ী কারখানায় দিনরাত চলছে সেমাই তৈরির কাজ। আর অধিক মুনাফার আশায় এসব লাচ্ছায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ময়দা, পামওয়েলসহ পুড়ে যাওয়া তেল। শহরে হাতেগোনা কয়েকটি সেমাই ও লাচ্ছা তৈরির বৈধ কারখানা থাকলেও তারা বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দাপটে। ঠাকুরগাঁও শহরের রোড, বিসিক শিল্প নগরী, সত্যপীর ব্রীজ, চৌদ্দহাত কালী সহ বিভিন্ন এলাকার আনাচে-কানাচে মৌসুমী লাচ্ছা তৈরির কারখানা চালু করা হয়েছে। সরেজমিনে, ঠাকুরগাঁও চৌদ্দহাত কালী এলাকার ভাই ভাই লাচ্ছা তৈরির কারখানা ঘুড়ে দেখা যায়, অতি নিম্ম মানের পামওয়েল, ডালডা দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, হাতে গ্লোবস ছাড়া, স্বেতস্বেতে পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এসব লাচ্ছা নামক বিষ। কারখানায় মানা হচ্ছে না কোন হাইজিন এর নিয়ম কানুন। কিন্তু মালিক জোর গলায় বলছে আমাকে সব ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এত খারাপ পরিবেশ ও নিম্ম মানের জিনিস দিয়ে কিভাবে সকল প্রকার অনুমতি নিয়ে লাচ্ছা তৈরি হয় এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। এ সম্পর্কে কারখানার মালিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ঈদে লাচ্ছা তৈরি করে বিক্রয় করি। লাইসেন্স ও বিএসটিআই অনুমতি নেওয়া আছে। শুধু মাত্র ঈদ এর জন্যই আমার এখানে লাচ্ছা তৈরি করা হয়। উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) লাচ্ছা উৎপাদন হচ্ছে। স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি। এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা রাতের আধারে চলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। পরে তা সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট দোকানে চলে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সাঈদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের সংগঠনের সদস্য হলে আর কোন সমস্যা থাকে না। আর সেমাই হাত দিয়ে ছাড়া তৈরি করা সম্ভব না। আর এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আগের মতো ভেজাল লাচ্ছা তৈরি হয় না। জেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ফারুক হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে এসব ভেজাল কারখানায় নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং কোন প্রকার অনিয়ম পেলে জরিমানা করা হবে।
×