ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাংবাদিক বৈঠকেই গ্রেফতার আপ বিধায়ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২৬ জুন ২০১৬

সাংবাদিক বৈঠকেই গ্রেফতার আপ বিধায়ক

অনলাইন ডেস্ক ॥ বেলা ১২টা ১০ মিনিট। ‘লাইভ’ সাংবাদিক বৈঠক চলছে। দিল্লির খানপুরে নিজের বাড়িতে বসে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গুন্ডাগিরি’-র অভিযোগ তুলছেন আম আদমি পার্টির বিধায়ক। হঠাৎ সেই দিল্লি পুলিশের অফিসাররাই সশরীর হাজির। কেউ সাদা পোশাকে, কেউ বা খাকিতে। সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যেই গ্রেফতার করা হলো বিধায়ক দীনেশ মোহনিয়াকে। চেয়ার থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে তোলা হলো গাড়িতে। তার মধ্যেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে মোহনিয়া বলতে থাকেন, ‘‘দেখতে পাচ্ছেন, আপনাদের সামনেই পুলিশ কী ভাবে গুন্ডার মতো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে!’’ গত কাল ‘ব্রেক্সিট’-এর ফল ঘোষণার পরই অরবিন্দ কেজরীবাল ঘোষণা করে দিয়েছেন, দিল্লিতেও এ বার ব্রিটেনের ধাঁচে গণভোট হবে। মানুষই ঠিক করবেন, দিল্লির পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের তকমা পাওয়ার অধিকার আছে না নেই। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লি ও তার পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোদী-কেজরীবাল যুদ্ধের নতুন এক পর্ব শুরু হলো নাটকীয় এই গ্রেফতারির মাধ্যমে। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অর্থাৎ মোদী সরকারের অধীন। তাই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। দিল্লিবাসী যাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি, তল্লাশি চলছে। সন্ত্রাস তৈরি করা হচ্ছে। দায়ের করা হচ্ছে ভুয়ো মামলা।’’ দিল্লি পুলিশের অবশ্য দাবি, বিধায়ক মোহনিয়ার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মোহনিয়া অভিযোগ তুলেছেন, নয়াদিল্লি পুরসভার আমলা এম এম খানকে খুনের ঘটনায় বিজেপি সাংসদ ও নেতাদের দিকে আঙুল উঠেছে। সে দিক থেকে নজর ঘোরাতে আপ-এর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা সাজানো হচ্ছে। কেজরীবালের প্রশ্ন, ‘‘সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যেই বিধায়ককে গ্রেফতার করে বাকিদের কী বার্তা দিতে চাইছেন মোদী?’’ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিপুল ভোটে জিতে কেজরীবাল দ্বিতীয় বারের জন্য দিল্লির ক্ষমতায় আসার পর এই নিয়ে ৮ জন আপ-বিধায়ক দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন। কেজরীবাল প্রথম দিন থেকেই দিল্লি পুলিশকে তাঁর সরকারের অধীনে আনার দাবি তুলেছেন। কিন্তু মোদী সরকার তাতে নারাজ। তাই এক ধাপ এগিয়ে কেজরীবালের দাবি, পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন থেকে সরিয়ে দিল্লি সরকারের হাতে আনতে দিল্লিকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হোক। ব্রেক্সিটে উৎসাহিত আপ নেতা এ বারে গণভোটেরও হুমক দিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র তাঁকে কাজ করতে দিচ্ছে না। বিধানসভায় পাশ হওয়া তাঁর সরকারের ১৪টি বিল ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু কেন গ্রেফতার করা হলো দীনেশ মোহনিয়াকে? দক্ষিণ দিল্লির সঙ্গম বিহারের বিধায়ক মোহনিয়া দিল্লি জল বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার নেব সরাই থানায় অভিযোগ জানান সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা কয়েক জন মহিলা। তাঁদের দাবি, বুধবার জলের সমস্যা নিয়ে তাঁরা বিধায়কের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। তখন বিধায়ক ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পুলিশ অবশ্য প্রথমে শুধুমাত্র দুর্ব্যবহার ও হামলার অভিযোগই দায়ের করেছিল। পুলিশের দাবি, ওই মহিলারা পরে ম্যাজিস্ট্রিটের কাছে জবানবন্দিতে যৌন হেনস্থার কথা বলেন। এর পরই মহিলাদের যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত জামিন অযোগ্য বিভিন্ন ধারাতেও মামলা করা হয়। দিল্লি পুলিশের ডিসি (সাউথ) ঈশ্বর সিংহ বলেন, ‘‘মোহনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তদন্তে সাহায্য করেননি। গুরুতর অপরাধের মামলা হওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা ছাড়া উপায় ছিল না।’’ গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হলে মোহনিয়াকে ২৭ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নিদেশ দেওয়া হয়। এই ঘটনায় কংগ্রেস অবশ্য আপ-এর পাশে দাঁড়ায়নি। কংগ্রেসের মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অভিযোগ প্রমাণ হলে বিধায়কের শাস্তি পাওয়াই উচিত।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সতীশ উপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনা থেকেই আপ-এর নারীবিদ্বেষী চরিত্র খোলসা হয়ে গিয়েছে।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×