ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির আলোচনায় বক্তারা

বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন প্রণোদনা নেই

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৬ জুন ২০১৬

বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন প্রণোদনা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় বাজেট শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন প্রণোদনা নেই। নেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধিরও কোন দিক নির্দেশনা। বিগত বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সত্ত্বেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি। সরকারী বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়নি। বিনিয়োগ বৃদ্ধির বাধাসমূহ অপসারিত করার কোন পদক্ষেপ বাজেটে নেই। এছাড়া, প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব নয় বলেও মনে করছে বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি। তারা বলছে, বাজেটে দেশীয় শিল্প সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও বিকাশের সুযোগ না থাকলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বর্ণের ডিম একসঙ্গে না নিয়ে আস্তে আস্তে নিতে হবে। এছাড়া বলা হয়েছে বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাসী, বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এম. এ. জলিলের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. নাজমা বেগম। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর হান্নানা বেগম, প্রফেসর ড. প্রিয়বত পাল, প্রফেসর ড.এ.কে.এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরদার প্রফেসর সৈয়দ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রেজাউল করিম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন প্রণোদনা নেই এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিরও কোন দিক নির্দেশনা নেই। বিগত বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সত্ত্বেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি। সরকারী বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়নি। বিনিয়োগ বৃদ্ধির বাধাসমূহ অপসারিত করার কোন পদক্ষেপ বাজেটে নেই। গ্যাস-বিদ্যুত সঙ্কট, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকুল নয় বলে ব্যবসায়ের খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। এসব কারণে শিক্ষিত বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করেছে। বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের আওতা অনেক সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ভ্যাট যেহেতু একটি পরোক্ষ কর কাজেই সাধারণ জনগণকেই এই করভার বহন করতে হবে। বাজেটে ভ্যাটের অংশ ৩০ শতাংশ। প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে না পেরে পরোক্ষ কর বাড়ানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণের কর দেয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আহমেদ বলেন, বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জন করা কঠিন। জমিদারি আমলে করের জন্য যে অত্যাচার ছিল এখনও তার চেয়ে কম অত্যাচার হয় না। মানুষ কিছু না বললেও কষ্টের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বর্ণের ডিম একসঙ্গে না নিয়ে আস্তে আস্তে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করের বোঝা অনেক বেশি। বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আসবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্র্ভূত কর আহরণের লক্ষ্য ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থই আসবে জনগণ থেকে। এজন্য জনগণকে বড় অঙ্কের বাড়তি কর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬২ দশমিক ৯০ শতাংশ অর্থ সংগ্রহণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণ থেকে পূরণ করা হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারী বিনিয়োগকারীরা ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। সঞ্চয়পত্র ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের কারণে অনেক বেশি সুদ গুনতে হবে সরকারকে। প্রফেসর এম.এ. জলিল বলেন, বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় অনেক বেশি। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) প্রকল্পের ছড়াছড়ি। অনেক বেশি প্রকল্প না নিয়ে মানসম্মত কম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে সাধারণ মানুষ তার সুফল পেতে পারে। সরকারের অগ্রাধিকার ৮ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। কালো টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই টাকা বিদেশে পাচার না হয়ে দেশে থাকলে গরিব লোকদের করের বোঝা থেকে রেহাই দেয়া সম্ভব হতো। প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত সুফল আসেনি। অবকাঠামো, বিদ্যুত, গ্যাস ইত্যাদির উন্নয়ন করতে হবে। তাছাড়া গ্রাম শহরের বৈষম্য কমাতে হবে। দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু কর্মসংস্থানে তার দৃশ্যমান কোন সুফল নেই। প্রবৃদ্ধিকে কর্মমুখী করতে হবে। প্রফেসর এ.কে.এম. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে রাজস্ব আদায় এবং অন্যটি হচ্ছে বাজেটের মানসম্মত বাস্তবায়ন। প্রফেসর প্রিয়বত পাল বলেন, মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে নীতিমালা তৈরি করে এই মেধাবীদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। প্রফেসর নাজমা বেগম বলেন, বাজেটের আয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সুশাসন, এনবিআর এর দক্ষতা ও সৎ জনশক্তির প্রয়োজন রয়েছে। বেসরকারী বিনিয়োগ না বৃদ্ধি পাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়।
×