ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৬ জুন ২০১৬

দেশে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে

সংবাদদাতা, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ ॥ ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার দেশী তাঁতে তৈরি তাঁতের শাড়ি রফতানি হচ্ছে ভারতে। ফলে দেশী তাঁতে তৈরি শাড়ির জন্য বহির্বিশ্বে খুলে গেছে সম্ভাবনার নবদিগন্ত। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির শতকরা ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে। নানা রঙের বাহারি ডিজাইনের দেশী তাঁতের শাড়ির গুণগত মান ও বাজার দর ভারতীয় বস্ত্র বাজারের অনুকূলে থাকায় শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির কদর ও চাহিদা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্রমশই বাড়ছে। ভারতে ব্যাপকভিত্তিতে দেশীয় তাঁতের শাড়ি রফতানি করতে পারায় সংশ্লিষ্ট তাঁতিরা সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এছাড়া শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে তাঁতের শাড়ি জার্মানি, ইটালি, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। গতকাল উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের লালমিয়া সুপার মার্কেটের আকন্দ টেক্সটাইল পরিদর্শনকালে তাঁতবস্ত্র রফতানিকারক লুৎফর রহমান লিটন আকন্দ জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রতি হাটে শতাধিক ভারতীয় শাড়ি কাপড় ব্যবসায়ী আসেন। তারা একেকজন কমপক্ষে ২ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে ১৫ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি কিনে থাকেন। তার দোকানে সাড়ে ৭’শ টাকা জোড়া থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সাড়ে ৩৫শ’ টাকা জোড়া তাঁতের শাড়ি রয়েছে। যার সিংহভাগ কাপড়ই ভারতীয় পাইকাররা কিনে থাকেন’। বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্ড পাওয়ারলুম এন্ড হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর উত্তরাঞ্চলের প্রতিনিধি পরিচালক ও সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ হায়দার আলী জানান, ‘শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকায় ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী তাঁতের কাপড়ের উৎপাদনের মোট অংশের শতকরা ৪০ ভাগ কাপড় শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে শুধুমাত্র ভারতে রফতানি হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তাঁতের শাড়ির ব্যাপক কদর রয়েছে। এসময় তিনি অতীতে এদেশের তাঁতিদের তৈরি বিশ্ববিখ্যাত মসলিন শাড়ি উৎপদনের সময়ে বিখ্যাত ইংরেজী পর্যটক র‌্যালফ্ ফিশের করা মন্তব্যটি প্রসঙ্গে বলেন, ওই সময় বিখ্যাত পর্যটক র‌্যালফ্ ফিশ বস্ত্র উৎপাদনকারীরা ভবিষ্যতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী হবে বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আমাদের দেশের তাঁতে তৈরি শাড়ি একসময় যেমন বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিল তেমনি সরকারীভাবে বিশ্বের প্রতিটি দেশে দেশী তাঁতবস্ত্র রফতানির উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে তেমনি র‌্যালফ্ ফিশের করা মন্তব্যটি বাস্তবে পরিণত হবে। এদিকে, চলতি অর্থবছরে পাওয়ারলুমের ওপর ১৫% হারে মূল্য সংযোজন কর বসিয়ে বিলটি পাশের জন্য সংসদে উত্থাপন করায় তিনি চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ঐহিত্যবাহী তাঁতশিল্প রক্ষায় এই উত্থাপিত বিল প্রত্যাহারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সরেজমিন শাহজাদপুর কাপড়ের হাট পরিদর্শন করে ও অসংখ্য তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, নরসিংন্দী, ঢাকার মিরপুরের, বেনারসী, সোঁনারগাঁর জামদানি, যশোরের মোমিননগর নওদ গ্রামে তৈরি হস্তচালিত ও বৈদ্যুতিক পাওয়ারলুলে উৎপাদিত তাঁতের শাড়িসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ প্রায় সকল এলাকা থেকে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি বিক্রির জন্য হাজার হাজার ব্যবসায়ী সপ্তাহে দুইদিন শাহজাদপুরে আগমন করছেন। আবার অনেকে শো-রুম নিয়ে স্থায়ীভাবে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। দেশের তাঁতসমৃদ্ধ জনপদের প্রায় সব জায়গারই তাঁতের শাড়ি বিক্রির শো-রুম রয়েছে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে। শাহজাদপুর একটি উপজেলা শহর হলেও উত্তরাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায় সফল এলাকা হওয়ায় এখানে সরকারী ব্যাংকগুলোর শাখার পাশাপাশি বেসরকারী ডাচ্বাংলা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাক, আল আরাফা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ফলে সব ধরনের ব্যাংকিং লেদনের সুযোগ থাকায় ব্যাপারী পাইকারদের শাড়ির ব্যবসা করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। উত্তর জনপদের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে সপ্তাহে দুইদিন ভারত থেকে অর্ধশতাধিক ব্যাপারী পাইকার ঈদকে সামনে রেখে হাজার হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি ক্রয় করছেন। সুবিধাজন আধুনিক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা থাকার ফলে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে সপ্তাহের দুই দিনের প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার দেশী তাঁতে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি ভারতে রফতানি করা হচ্ছে। ভারতীয় বস্ত্রের বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির ব্যাপক কদর ও চাহিদা থাকায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত মোট শাড়ির শতকরা ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে। ভারতের সাথে ব্যাবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপে ওই বিপুল পরিমাণ দেশী তাঁতের শাড়ি ভারতে রফতানি সম্ভব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এজন্য দেশের সর্ববৃহৎ কুটিরশিল্প খ্যাত তাঁত শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ তাঁতি ভারতে প্রতি সপ্তাহের দুইদিন রবিবার ও বুধবারে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে কোটি কোটি টাকার তাঁতের শাড়ি রফতানি করতে পারায় সরকারের যুগোপযোগী কার্যকর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে একইভাবে এদেশের হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমে উৎপাদিত বিশ্বমানের তাঁতের শাড়ি বিশ্বের প্রতিটি দেশে রফতানির যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো দাবির পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের তাঁতের শাড়ি তৈরিতে তাঁতিদের ব্যাপকভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচীর দাবি জানানো হচ্ছে।
×