ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৬ জুন ২০১৬

মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ শুরু আজ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ যোগাযোগ খাতের বড় দুই প্রকল্প নির্মাণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। নিত্য যানজটে জ্বলে-পুড়ে যাওয়া নগর জীবনে স্বস্তি দিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। মেট্রোরেলের ডিপোর নির্মাণ কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে সূচনা হতে যাচ্ছে এই প্রকল্পের। শেষ হবার পর ১৬টি স্টেশন পাড়ি দিয়ে উত্তরা হতে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। ৫ মিনিট পর পর ছাড়বে ট্রেন। উত্তরা হতে আগারগাঁওয়ের কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালে, ২০২০ সালে শাপলা চত্বর পর্যন্ত। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি রুটে ১৫টি স্টেশন থাকবে। নির্দিষ্ট লেনে চলবে ১২০টি আর্টিকুলেটেড বাস। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড়াল সড়কের চাইতে মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্পের বেশি সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ। তাছাড়া যানজট এড়াতে মেট্রোরেলের কোন বিকল্প নেই। এই প্রকল্পটিই হবে যানজট নিরসনে সবচেয়ে কার্যকর। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাজধানীর যানজটের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) অনুযায়ী প্রস্তাবিত সব কটি মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের। আজ রবিবার মেট্রোরেল (এমআরটি) ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় প্রকল্প দুটির কাজের উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পটি নতুন গতি পাবে এবং নির্দিষ্ট সিডিউল অনুযায়ী চলমান কাজ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) অংশ হিসেবে পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল এবং গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণ করা হবে। পাঁচটি রুটের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল-৬ (এমআরটি-৬) রুটের নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর শুরু হতে যাচ্ছে। ২০২০ সালে এ রুটের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে মেট্রোরেল ॥ রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি খালের দুই পাশে বিশাল জমি। এখন পর্যন্ত এই এলাকায় স্থাপনা বলতে খালের ওপর একটি সেতু মাত্র। এর উত্তর পাশে কয়েকদিন ধরে জোরেশোরে চলছে নির্মাণ কাজ। খালের দু’পাশে মাটি ভরাটের পর সমান করা হচ্ছে। কারণ, এখানেই হবে মেট্রোরেলের ডিপো। এখান থেকেই ২০১৯ সালে চলবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। মাত্র ৩৭ মিনিটে পৌঁছা যাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল। উত্তরা থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিমি দীর্ঘ মেট্রোরেল-৬ রুটের নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে প্রায় ১৬ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ এলিভেটেড রুটের মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থাকবে। প্রতিঘণ্টায় উভয়দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি আরও দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল রুট-১ (এমআরটি-১) হচ্ছে গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত ৪২ কিমি দীর্ঘ। প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত হতে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কি.মিটারের কাজ করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিমি হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেল-৫ (এমআরটি-৫) এর রুট। রুটটি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৩৫ কিমি দীর্ঘ। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিমি কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬ কিমি আন্ডারগ্রাউন্ড। ইতোমধ্যে জাইকা মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল-৬ এর রুট উত্তরা ৩য় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। প্রকল্পের ৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৬টির দরপত্র আহ্বান কাজ শেষ হয়েছে। ১টি প্যাকেজের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গণপরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সবচেয়ে সফল ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। ফ্লাইওভার পৃথিবীর কোন দেশে যানজট দূর করতে পারেনি। ঢাকায়ও পারবে না। ফ্লাইওভারের সুফল স্বল্পমেয়াদি। মেট্রোরেলের সুফল দীর্ঘমেয়াদি। যাদের গাড়ি আছে, শুধু তারাই ফ্লাইওভারের সুফলভোগী। মেট্রোরেল মানেই গণপরিবহন। এর সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাস্তার মাঝ বরাবর উড়াল পথের (ভায়াডাক্ট) ওপর স্থাপিত ডবল রেললাইন থাকবে। ছয় মিটার চওড়া এই উড়াল পথে উভয়দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রাস্তার ওপর ঝুলন্ত স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম দৈর্ঘ্য হবে ১৭০ মিটার। নিচতলায় হবে টিকেট কাউন্টার ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবেন। ইলেকট্রিক ট্রেনগুলো চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। মোট ২৪ জোড়া ট্রেন থাকবে। প্রতিট্রেনে থাকবে ছয়টি করে বগি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরা থেকে পল্লবী, মিরপুর, সংসদ ভবন সংলগ্ন খামারবাড়ি হয়ে যাবে মেট্রোরেল পথ। ১৬টি স্টেশন হবে উত্তর উত্তরা, মধ্য উত্তরা, দক্ষিণ উত্তরা, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও মোড়, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, শাপলা চত্বরে। প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর স্টেশনে থামবে। প্রতিঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য রক্ষায় একাধিকবার এ পথ পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি মেট্রোরেল। প্রকল্পের অগ্রগতিকে নির্বিঘœ করতে মেট্রোরেল আইন-২০১৫ প্রণয়ন করেছে সরকার। ভূমি অধিগ্রহণে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে আইনে। উত্তরায় রাজউকের প্রায় ৫৯ একর জমিতে মেট্রোরেলের ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। ৫৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ পেয়েছে টোকিং কনস্ট্রাকশন। তাদেরই এদেশীয় সহযোগী সিনাম ইঞ্জিনিয়ারিং। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শেষ হবে ডিপো নির্মাণের কাজ। একই সময়ে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট নির্মাণের কাজ। প্রকল্প পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের আট শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের শেষপ্রান্ত মতিঝিল পর্যন্ত ভূমি জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে সর্বাত্মক চেষ্টার কথা জানান তিনি। ঢাকা শহরের যানজট নিরসন এবং পরিবেশবান্ধব ও দ্রুতগতির সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বা এসটিপি প্রণয়ন করে। এসটিপিতে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি রুট (লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৩) ও ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি রুট (লাইন-৪, লাইন-৫, লাইন-৬) এর সুপারিশ করা হয়। সরকার ২০০৮ সালে এসটিপি অনুমোদন করে। পরবর্তীতে এসটিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি বা ডিটিসিএ’র তত্ত্বাবধানে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা ২০০৯ ও ২০১১ সালে আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট স্টাডি (ডিএইচইউটিএস) শিরোনামে দুটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। প্রথম সমীক্ষার আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এবং বিআরটি লাইন-৩ কে অগ্রাধিকার দেয়। দ্বিতীয় সমীক্ষার আওতায় ২০১১ সালে এমআরটি লাইন-৬ এর ওপর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (লোন নং. বিডি-পি৬৯, ইন্টারেস্ট রেট ০.০১%, রিপেমেন্ট পিরিয়ড ৪০ বছর, ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড)। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ॥ এদিকে গাজীপুরের টঙ্গী ও ঢাকার উত্তরার সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর করতে সরকার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে কম সময়ে বেশি যাত্রী দ্রুত পারাপার, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক সেবা নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করাও অনেকাংশে সহজ হবে। বিআরটি হচ্ছে সড়কের নির্দিষ্ট লেনে দ্রুতগতির বাস চলাচল অবকাঠামো স্থাপন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংরক্ষিত আলাদা লেনের মাধ্যমে উভয়দিকে প্রতিঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার করা যাবে। প্রতি তিন মিনিট পর পর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। এ প্রকল্প হচ্ছে গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। ২০ দশমিক ৫ কিমি দীর্ঘ বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। নির্মাণ করা হবে ৬টি ফ্লাইওভার। উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিমি থাকবে এলিভেটেড বিআরটি লেন। ১৬ কিমি থাকবে সমতল বা এট গ্রেড। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১২০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাসগুলোয় ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেট্রনিক স্মার্টকার্ড। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে ১ হাজার ৬ শ’ ৫১ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড অর্থায়ন করছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বিআরটি চালু হবে বলেও জানা গেছে। উন্নত বিশ্বের আদলে দ্রুতগতির ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)’ সার্ভিস চালু করা হবে। বাসগুলো চলাচলের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মাণ করা হবে আলাদা বিশেষ লেন। কেউ অননুমোদিতভাবে বিআরটি টিকেট বা পাস বিকৃত বা জাল করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ- বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। বিআরটি লেন নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট আইন-২০১৬’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আইনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে খসড়ায় বলা হয়, জনগণকে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত বাসভিত্তিক গণপরিবহন সেবা দিতে এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদী জেলায় আইনটি কার্যকর হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি জেলা শহরগুলোতে এ সার্ভিস চালু করা হবে। আর এ লাইন নির্মাণ সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও করা যাবে। এ লাইনে বাস পরিচালনা করতে সরকারের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে। বিআরটি বাস ছাড়া অন্য কোন ধরনের যানবাহন ওই লেনে প্রবেশ করতে পারবে না। সরকার বিআরটি যাত্রীদের ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেবে। প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। পাশাপাশি বিআরটি ও এর যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আফিল উদ্দিন বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও বিআরটি বাস সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এজন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে; যার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। স্বল্প খরচে দ্রুততার সঙ্গে যাতায়াত নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের আদলে বিরতিহীন এ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোথাও থামবে না। আর বাসগুলোকে বিরতিহীন রাখতে নির্মাণ করা হবে বিশেষ ধরনের লেন। মহাসড়ক থেকে এটি ৮-১০ ইঞ্চি উঁচু থাকবে এবং ডিভাইডার দিয়ে মহাসড়ক থেকে আলাদা করা হবে। উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে। কারণ এ রাস্তাটুকু তুলনামূলকভাবে সরু। এছাড়া মহাসড়কের ৫টি সংযোগ সড়কের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট ১১৩টি সংযোগ সড়কও সংস্কার করা হবে প্রকল্পের আওতায়। প্রয়োজনে বাড়ানো হবে মহাসড়কের দুই ধারে আরও লেন। এসব করতে গিয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বা ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে প্রকল্পের আওতায় ১০টি ছোট মার্কেট স্থাপন করা হবে। সব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় বিমানবন্দর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত বিআরটি লাইন নির্মাণ করা হবে। যার অর্থায়ন করার কথা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের।
×