ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পিঠাভোগ থেকে জোড়াসাঁকো

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২১ মে ২০১৬

পিঠাভোগ থেকে জোড়াসাঁকো

ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ- গাছালিতে ঠাসা সৌম্য-শান্ত গ্রাম দক্ষিণডিহি। খুলনা ও যশোর জেলার শেষ সীমানায় খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। ওই বাড়িতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য দোতলা ভবন। এটাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। কবির শ্বশুরবাড়ির প্রাচীন ভবনটিকে সংস্কার করে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ সেখানে স্থাপন করেছে দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর। অপরদিকে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্র্ব পুরুষের বাস্তভিটা। কুশারীবাড়ি। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা। ওই ভবনের পাশেই আরেকটি একতলা উন্মুক্ত মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে সেখানে। দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর ও পিঠাভোগ গ্রামে কবির পূর্বপুররুষের বসতবাড়িকে ঘিরে রবীন্দ্র ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। দেশী-বিদেশী রবীন্দ্র ভক্তসহ পর্যটক ও দর্শনার্থীরা এ দুটি ঐতিহাসিক স্থান ও জাদুঘর পরিদর্শনে আসে। দুটি স্থানেই কবির জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে ঘিরে জাতীয় কর্মসূচীর নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকিমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি দক্ষিণডিহি গ্রামে মামা বাড়িতে এসেছিলেন। পরে বিয়ে সূত্রে দক্ষিণডিহিতে এসেছেন। তবে কবি দক্ষিণডিহিতে এসেছিলেন কিনা এ নিয়ে দ্বিমতও আছে। মৃণালিনী দেবীর স্মৃতিধন্য পৈত্রিক বাড়িটি দীর্ঘ চার যুগ ধরে অবৈধ দখলে ছিল। খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক, ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রমুখের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৯৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাড়িটি দখলমুক্ত হয়। এরপর সেখানে প্রশাসনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মিলিত এক সভায় বিশ্ব কবির শ্বশুরবাড়িকে ঘিরে দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর সেখানে কবি গুরুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কবিগুরুর শ্বশুরবাড়ি প্রতœতাত্ত্বিক আইনে সংরক্ষণের জন্য প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর থেকে ১৯৯৬ সালে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। দীর্ঘ এক দশক পর ২০০৬ সালে বিশ্ব কবির শ্বশুরবাড়ি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ওই বাড়ির মোট ৩.২৪ একর জমি পুরাকৃর্তি আইন অনুযায়ী গেজেটভুক্ত হয়। তবে ভবনসহ ০.৪০ একর জমি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের দখলে রয়েছে। বাকি ২.৮৪ একর জমি আছে প্রশাসনের অনুকূলে। পিঠাভোগ গ্রামটি ফকিরহাট উপজেলার নওয়াপাড়া বিশ্বরোড থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পিঠাভোগ কাহজদিয়া সেতু পার হয়ে ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা ধরে সামান্য এগিয়ে প্রাচীন ভৈরব নদের উত্তর পাড়ে বিশ্বকবির পূর্ব পুরুষের বসতভিটা কুশারীবাড়ির অবস্থান। ওই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষরা বসবাস করতেন। জনশ্রুতি আছে, ব্যবসার সুবিধার্থে পরিবারটি কলকাতার জোড়াসাঁকোয় পাড়ি জমায়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক প্রয়াত শীহাব উদ্দিন আকবর তাঁর দায়িত্ব পালনকালে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে বাড়িটিতে পরীক্ষমূলক খনন কাজ চালানো হয়। তখন বাড়িটির মূল ভবনের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর খনন কাজ বন্ধ রেখে প্রতœসম্পদ সংরক্ষণ আইনে এটি সংরক্ষণের জন্য প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পিঠাভোগের এই স্থানটিকে ‘সংরক্ষিত পুরাকৃর্তি সংরক্ষণ’ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষ থেকে সেখানে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি সংরক্ষণ’ সম্বলিত নোটিস টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খানম মিতা বলেন, দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘরে ভবনটি সংস্কারের আগে ও পরের ২২টি আলোকচিত্র সম্বলিত চারটি ও কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত দু’টি নতুন ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পাঁচটা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। রমজান মাসে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। Ñঅমল সাহা, খুলনা থেকে
×