ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চারটি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন

উচ্চতায় বেশি, কোমর সমান পানিতেও হেলবে না

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ মে ২০১৬

উচ্চতায় বেশি, কোমর সমান পানিতেও হেলবে না

এমদাদুল হক তুহিন ॥ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রবল সম্ভাবনাময়- এমন ৪টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের নিরলস পরিশ্রমে উদ্ভাবিত জাতগুলো এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। জাতীয় বীজ বোর্ড মাস খানেকের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত ৪টি জাতকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বলে আশা করছে ব্রি’র কর্মকর্তারা। উদ্ভাবিত জাতগুলো উচ্চতায় লম্বা, কোমর সমান পানিতেও হেলে পড়বে না এবং উচ্চফলনশীল। শুধু তাই নয়, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও। ব্রি’র বিজ্ঞানী কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো হলো- ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৭৬, ব্রি ধান ৭৭ ও ব্রি ধান ৭৮। চারটি জাতই আমন মৌসুমে চাষযোগ্য। তবে এর মধ্যে ব্রি ধান ৭৬ আউশ ও আমন দুই মৌসুমেই চাষের উপযোগী। আর দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল বিশেষত বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলার যেসব জমিতে লবণ পানি নেই- সেসব অঞ্চলে চাষের উপযোগী ব্রি ধান ৭৭ ও ব্রি ধান ৭৮’র ফলন অন্য যেকোন ধানের তুলনায় প্রতি হেক্টরে ১ টন বেশি। আর ওই অঞ্চলগুলোতে প্রায় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে থাকা এমন জমি রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। ওই জমিগুলোতে চাষ হওয়া প্রচলিত সাদা মোটা ও লাল মোটা ধানে পরিবর্তে উদ্ভাবিত নতুন ব্রি ধান ৭৭ ও ব্রি ধান ৭৮ চাষ হলে মৌসুম প্রতি দেশের ফলন বাড়বে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন, এমন আশাবাদ ব্রি’র বিজ্ঞানীদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিজ্ঞানীরা আরও ৪টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে, যা এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। মাস খানেকের মধ্যে তা অনুমোদন পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জাতগুলোর আবাদে ধানের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। উৎপাদন বৃদ্ধির বিরাট সম্ভাবনাময় জাতগুলো যত দ্রুত কৃষকের কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে ততই মঙ্গল।’ প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্রি’র বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানান ব্রি’র মহাপরিচালক। আর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) মোঃ আনছার আলী জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে থাকা প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। ওইসব জমিতে আবাদযোগ ব্রি ৭৭ ও ব্রি ৭৮ ধান চাষে হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়বে ১ টন। ওই অঞ্চলের সব জমিতে উদ্ভাবিত নতুন এই দুই জাতের ধান চাষ হলে দেশে এক মৌসুমেই উৎপাদন বাড়বে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের নিরলস পরিশ্রমের ফসল উদ্ভাবিত নতুন চারটি জাত। ব্রি ধান ৭৫ ॥ এটি আমন মৌসুমের ধান, যার চাল চিকন। সুগন্ধিযুক্ত এ জাতের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। প্রতি হেক্টরে ফলন ৫ টন। উদ্ভাবিত জাতটির জীবনকাল অল্প হওয়ায় বিশেষত যেসব স্থানে শীতকালীন সবজি চাষ হয় সেসব মাঠে সবজি উৎপাদন শেষে এ জাতের ধান চাষযোগ্য। এটি আমনের অন্য যেকোন জাতের চেয়ে উন্নত এবং অধিক ফলনসম্পন্ন। উদ্ভাবিত এ জাতের ধান গাছের আকার মাঝারি সাইজের। দক্ষিণ বঙ্গ, যশোর, নরসিংদীসহ যেসব স্থানে উঁচু এবং সেচ ব্যবস্থা আছে সে সব স্থানে চাষযোগ্য নতুন এ জাতটি খরা সহিষ্ণু নয়। ব্রি ধান ৭৬ ॥ ম্যারিকা ন্যানট ও খরা সহনশীল জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য ব্যবহারে উদ্ভাবিত ব্রি ৭৬ জাতের ধানটি আউশ ও আমন দুই মৌসুমেই চাষযোগ্য। এটি মাঝারি মোটা জাতের ধান। এর রোগ বালাই অন্যান্য যেকোন আউশ তুলনায় কম। আফ্রিকা থেকে আমদানি করা বিভিন্ন জাতের সংমিশ্রণে উদ্ভাবিত এ জাতটি আউশ মৌসুমে হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৪ টন ফলন দেবে, আর আমনের উৎপাদন গিয়ে দাঁড়াবে ৫ টনে। ব্রি ধান ৭৭ ॥ ব্রি’র জন্মলগ্ন থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপজেলাগুলোর যেসব জমিতে কোমর সমান পানি থাকে সেসব জমিতে চাষযোগ্য উন্নত তেমন কোন জাত ছিল না। ফলে আঞ্চলিকভাবে চাষ হওয়া ধান হেলে পড়ে ধান ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে।
×