ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি আইনে মহাচমকের একদিন!

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ মে ২০১৬

বৃষ্টি আইনে মহাচমকের একদিন!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃষ্টিতে সব সময়ই আগে ব্যাট করা দল সুবিধা পায়। সেই সুবিধা যেন এবার ক্রিকেট কোচিং স্কুলের (সিসিএস) কাছে আশীর্বাদ হয়েই আসল। ভিক্টোরিয়াকে বৃষ্টি আইনে ৫৩ রানে হারিয়ে দিল সিসিএস। আর এ ম্যাচের ফলটি সবার কাছে মহাচমক হয়েই ধরা দিল। সিসিএস যে ৬ ম্যাচে টানা হারের পর ১টি ম্যাচ জিতল। তাও আবার যে দলটি জিতলেই এককভাবে শীর্ষে উঠে যেত, সেই শক্তিশালী ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে দিল সিসিএস। বৃষ্টি আইন ভিক্টোরিয়ার জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই উপহার দিল না! শুধু এ ম্যাচই নয়, বৃষ্টি ম্যাচে কোন বাধা হয়ে না আসলেও ব্রাদার্স-কলাবাগান ক্রীড়া চক্র (কেসি) ম্যাচেও চমকই দেখা গেছে। জয়ের এত সুযোগ থাকার পরও ব্রাদার্সের কাছে ৯ রানে হেরে গেল কলাবাগান কেসি। বৃষ্টি গাজী ট্যাংক-শেখ জামাল ম্যাচটি পুরোপুরি হতে দেয়নি। আজ হবে বাকি অংশ। তাতে করে জিততে ২১.৫ ওভারে ১১৩ রান করতে হবে গাজী ট্যাংককে। হাতে আছে ৭ উইকেট। শাওনের স্পিনে সিসিএসের আনন্দ জিতলেই সব দলকে পেছনে ফেলে দিয়ে এককভাবে ঢাকা লীগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে যেত ভিক্টোরিয়া। কিন্তু বৃষ্টি তাদের জন্য এতটাই দুর্ভাগ্য বয়ে আনল যে হারতেই হল। এছাড়া আর কোন গতিও ছিল না। সিসিএস ঠিকই ৫০ ওভার খেলল। যদিও ৪ উইকেট করে নেয়া চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা ও কামরুল ইসলাম রাব্বির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪৯.৪ ওভারে ২৫৯ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় সিসিএস। সাইফ হাসান সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন। জবাব দিতে নেমে ভিক্টোরিয়াও ভালই খেলছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, জয়টি ভিক্টোরিয়ার হাতেই ধরা দেবে। কারণ ১৭ ওভার খেলে ৯৫ রানও করে ফেলে ভিক্টোরিয়া। তবে হারায় ৫ উইকেট। ১৭.৪ ওভারে ধীমান ঘোষ আউট হতেই বৃষ্টি নামা শুরু করে। ভিক্টোরিয়ার ঘাড়েও যেন দুর্ভাগ্য নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দেয়। ভিক্টোরিয়ার সামনে তখন জিততে এক লাফে ১৭ ওভারে ১৫৪ রানের টার্গেট দাঁড় হয়ে যায়। বলের চেয়ে রান অনেক বেশি দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে মেরে খেলা ছাড়া আর কোন গতিও ছিল না। তাতেই ভিক্টোরিয়ার বারোটা বাজে। তবে শুরুতেই সালেহ আহমেদ শাওন তার স্পিন ঘূর্ণিতে ভিক্টোরিয়াকে কাবু করে রাখে। প্রথম তিনটি উইকেটই তুলে নেন শাওন। নাদিফ চৌধুরী (৫০) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানও চাপ নিতে পারেননি। ৩৫ ওভারে জিততে ২৫৩ রান লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে ৩১.১ ওভারে ১৯৯ রানের বেশি করতে পারেনি ভিক্টোরিয়া। হারও হয়। এ হারে শীর্ষস্থানে ওঠার স্বপ্নও ভঙ্গ হয়ে যায়। তাতে করে সিসিএস বাজিমাত করে। ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে এবার লীগে প্রথম জয়ও পায় সিসিএস। যে দলটিকে মনে করা হচ্ছিল কোন জয়ই পাবে না। সেই দলটি সপ্তম ম্যাচে এসেই বৃষ্টির আশীর্বাদে জয় তুলে নেয়। সিসিএসের জয়ে আর কোন দলই জয়শূন্য থাকল না। শেষ ওভারে হারল মাশরাফির দল শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬ বলে ১০ রান। খুবই সম্ভব। তবে হাতে ছিল ২ উইকেট। টপাটপ ২টি উইকেট শিকার করে নিলেন স্পিনার সাদিকুর রহমান। তাতে করে ম্যাচও জিতে গেল ব্রাদার্স। যেখানে তুষার ইমরানের ৭৭ ও ইমরুল কায়েসের ৬৭ রানে ২৬২ রান করেই অলআউট হয় ব্রাদার্স। এরপর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র এত ভাল খেলছিল যে মনে করা হচ্ছিল জিতে যাবে মাশরাফির দল। ১২ বলে যখন জিততে ১৫ রানের প্রয়োজন পড়ে, জয় তাদেরই হওয়ারও কথা। কিন্তু তানভির হায়দারকে ৪ উইকেট নেয়া নাবিল সামাদ এমন মহূর্তে আউট করে দেন। শেষ ওভারেও জেতা সম্ভব ছিল। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক ও দেওয়ান সাব্বিরকে টানা দুই বলে সাদিকুর আউট করে দিয়ে ব্রাদার্সকে জিতিয়ে দেন। ৪৯.২ ওভারে ২৫৩ রানের বেশি করতে পারেনি কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। তবে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ঠিকই শতক করেছেন। ১১১ রান করে রান আউট হয়েছেন। বুধবার দিনটিতে এ একটি শতকই হয়েছে। ব্রাদার্স জিতলেও ম্যাচসেরা হয়েছেন মাসাকাদজাই। ম্যাচটি জিতে ব্রাদার্সের পয়েন্ট তালিকায় ৮ পয়েন্ট যুক্ত হলো। আবাহনীর ওপরে উঠে গেল ব্রাদার্স। গাজী গ্রুপ-শেখ জামাল ম্যাচের ফয়সালা আজ মিরপুরে গাজী গ্রুপ-শেখ জামাল ম্যাচের দিকে সবারই দৃষ্টি ছিল। সেই দৃষ্টি ভালভাবে কাড়তে পেরেছেন গাজী গ্রুপের মোহাম্মদ শরীফ। হ্যাটট্রিক করেছেন। শুধু তাই নয়, টানা চার বলে চার উইকেট নিয়ে শেখ জামালকে ধসে দিয়েছেন। ৩৩.৩ ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে, পরের বলে জাবিদ হোসেনকে, ৩৩.৫ ওভারে নাজমুস সাদাতকে ও ওভারের শেষ বলে মুক্তার আলীকে আউট করেন শরীফ। তার এ দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেখ জামাল ৩৮ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান করে। এমন সময়েই আসে বৃষ্টি। যে বৃষ্টি শেখ জামালের জন্যও আশীর্বাদ হয়েই এসেছে বলা চলে। কারণ গাজী গ্রুপের সামনে ৩৮ ওভারে জিততে ১৯৬ রানের টার্গেট দাঁড়িয়ে যায়। বেড়ে যায় আরও ২৮ রান! গাজী গ্রুপ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাতে করে ১৬.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান করেও ফেলেছে। এমন সময়ে বৃষ্টিতে আর খেলাই হলো না। আজ রিজার্ভ ডে’তে খেলাটির বাকি অংশ হবে। এনামুল হক বিজয় ৩৬ ও অলক কাপালী ১৪ রানে ব্যাট করছেন। দেখা যাক, গাজী গ্রুপ শেষ পর্যন্ত জিততে পারে কিনা। বৃষ্টি আইন ভিক্টোরিয়ার পর গাজী গ্রুপকেও দুর্ভাগ্যের সামনে ঠেলে দিয়েছে। এ আইনে সিসিএসও তাদের প্রথম জয়টি তুলে নিয়েছে। এ জন্য দিনটি মহাচমক হয়েও ধরা দিয়েছে। স্কোর ॥ সিসিএস-ভিক্টোরিয়া ম্যাচ-ফতুল্লা সিসিএস ইনিংস ২৫৯/১০; ৪৯.৪ ওভার (সাইফ ৭৮, পিনাক ৪২, রাজিন ৪২, সালমান ৪১; সিলভা ৪/৪৭, রাব্বি ৪/৫৪)। ভিক্টোরিয়া ইনিংস (টার্গেট ৩৫ ওভারে ২৫৩ রান) ১৯৯/১০; ৩১.১ ওভার (নাদিফ ৫০, মজিদ ৩৯, ডলার ২৯; শাওন ৪/১৫)। ফল ॥ বৃষ্টি আইনে ৫৩ রানে জয়ী সিসিএস। ম্যাচসেরা ॥ সালেহ আহমেদ শাওন (সিসিএস)। ব্রাদার্স-কলাবাগান কেসি ম্যাচ-বিকেএসপি ব্রাদার্স ইনিংস ২৬২/১০; ৪৯.৩ ওভার (তুষার ৭৭, ইমরুল ৬৭, মিলিন্দ ২৭; সাব্বির ২/১৮)। কলাবাগান কেসি ইনিংস ২৫৩/১০; ৪৯.২ ওভার (মাসাকাদজা ১১১, তাসামুল ৪৫, জসিমুদ্দিন ৩০; নাবিল ৪/৪৭)। ফল ॥ ব্রাদার্স ৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (কলাবাগান কেসি)। গাজী গ্রুপ-শেখ জামাল ম্যাচ-মিরপুর শেখ জামাল ইনিংস ১৬৮/৯; ৩৮ ওভার (মামুন ৬৯, মাহমুদুল্লাহ ৩০, জয়রাজ ২৮; শরীফ ৪/৪৩)। গাজী গ্রুপ ইনিংস (টার্গেট ৩৮ ওভারে ১৯৬ রান) ৮৩/৩; ১৬.১ ওভার (বিজয় ৩৬*, কাপালী ১৪*; সানি ২/১৩)। ফল ॥ বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত। আজ রিজার্ভ ডে’তে হবে খেলার বাকি অংশ।
×