ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভ্রাম্যমাণ বেদে জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া

সোলার প্যানেলে চলে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনে ভিডিও কল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৯ মে ২০১৬

সোলার প্যানেলে চলে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনে ভিডিও কল

মোরসালিন মিজান ॥ জীবন নয়। যেন ঝরা পাতা। বাতাসে ওড়ে। মাটিতে গড়াগড়ি খায়। উড়তে উড়তে, গড়াগড়ি খেতে খেতে যেখানে গিয়ে থামে, সেখানেই নোঙর। ঘর বাঁধা। আশ্চর্য এই ঘর বাঁধতে লাগে ২০ মিনিট। ভাঙতে তারও কম সময়! তবু ঘর। তবু সংসার। বলাবাহুল্য, এই ঘর এই সংসার বাংলার ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায়ের। আগের মতো দীর্ঘ নদীপথ নেই। হঠাৎই একসঙ্গে অনেক নৌকো এসে ভেড়ে না কোন অচেনা ঘাটে। তবু বেদেরা আছে। এমনকি রাজধানী শহরের আশপাশেও দিব্যি চোখে পড়ে তাদের উপস্থিতি। ঠিক এই মুহূর্তে ঢাকার অদূরে ডেমরায় অবস্থান করছে একটি বহর। চিরচেনা দুঃখগুলো নিয়েই আছে ওঁরা। জীবন সংগ্রামও আগের মতো। তবে যা দেখে চোখ ছানাবড়া সেটিÑ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে বিরল সখ্য। কাছিমের পিঠের মতো উঁচু ঘরের চালে সোলার প্যানেল বসানো! তাতে গ্রীষ্মের গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুরছে ফ্যানের পাখা। সন্ধ্যা নামল কী নামল না, সঞ্চিত সৌরবিদ্যুত থেকে জ্বলে উঠছে বাল্ব। এখানেই শেষ নয়, আছে ল্যাপটপ কম্পিউটার। ছোট্ট নোটপ্যাডে জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার শো চলছে। মোবাইল ফোনে কথা নয় শুধু, আছে ইন্টারনেট সংযোগ। অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, অনেকেই ব্যস্ত ভিডিও কলে! এভাবে বেদে সংস্কৃতি ঐতিহ্য আর আজকের আধুনিকতা যেন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলেছে। বইয়ের ভাষায় বেদে বটে। সাধারণত বাইদ্দ্যা নামে পরিচিত। বৈদ্য শব্দটির মানে চিকিৎসক। বৈদ্য থেকে অবজ্ঞাসূচক বাইদ্দ্যা। বাইদ্দ্যা বলতে হাতুড়ে ডাক্তারদের বোঝায়। এখানকার বেদেরাও গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজস্ব পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেন। যতদূর তথ্যÑ বেদেরা ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সঙ্গে ঢাকায় আসে। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। প্রথমে বসবাস শুরু করে বিক্রমপুরে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ঝিনাইদহে আছে বড় একটি অংশ। সেখান থেকেই কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে এসেছে ডেমরায়। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন লিখেছিলেনÑ এদের গাঁয়ের কোন নাম নাই, চারি সীমা নাহি তার,/উপরে আকাশ, নিচে জলধারা, শেষ নাহি কোথা কার।/পড়শী ওদের সূর্য, তারকা, গ্রহ ও চন্দ্র আদি,/তাহাদের সঙ্গে ভাব করে ওরা চলিয়াছে দল বাঁধি...। হ্যাঁ, একসময় দল বেঁধে নৌকোয় করে ঘুরে বেড়াত বেদেরা। দীর্ঘ নদীপথ ছিল। এখন অত নেই। নৌকো ডাঙ্গায় তুলে রেখে বাসে চড়তে হয়। হাঁটতে হয় মাইলের পর মাইল। এভাবেই তারা এসে পৌঁছেছেন ডেমরায়। আমুলিয়া পূর্বপাড়া এলাকার ওপর দিয়ে যে সড়কটি রূপগঞ্জের দিকে চলে গেছে, তার ঠিক ডান পাশে বিস্তীর্ণ খোলা অঞ্চল। অধিকাংশই জলাশয়। মাঝখানে সামান্য ডিবির মতো। শুকনো পতিত ভূমি। ছায়া দেয়ার জন্য আছে কয়েকটি গাছও। ব্যস, তাতেই সন্তুষ্ট বেদের দল। এখানেই ভিড়িয়েছে বহর। তারা গড়েছে অস্থায়ী বসতি। মূল সড়ক থেকে সামান্যই দেখা যায়। ঢাল ধরে নিচে নেমে গেলে নাতিদীর্ঘ আল-পথ। এর শেষ মাথায় অনেকগুলো ঘর। ঘর বলতে, বাঁশ ও পলিথিনে তৈরি মাচা। একটি মাচার সামনে উদোম গায়ে বসে ছিলেন বহরের প্রবীণ সদস্য আইয়ুব আলী। প্রথমে কথা বলায় অত গরজ দেখালেন না। ধীরে ধীরে তাকে স্বাভাবিক করা গেল। এক মুঠো কাঠের একটি পিঁড়িও এগিয়ে দিলেন এই প্রতিবেদকের দিকে। বললেন, ১৮ দিন হলো এখানে এসেছি। আমাদের মূল ঠিকানা ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ। সেখান থেকে গত কোরবানির ঈদের পর তিন বহরে ভাগ হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। নিজেদের সুবিধামতো বহর পরিবর্তনের সুযোগ আছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকেই অন্য বহরে চলে গেছেন। তিন দলের তিন সর্দার আর অবশিষ্টরা মিলে নতুন এই বহর গড়েছি। বেদেদের পরিভ্রমণকে বলা হয় গাওয়াল। আইয়ুব আলী জানান, তারা ফরিদপুর থেকে গাওয়াল শুরু করেছিলেন। প্রথমে টেকেরহাট দিয়ে খুলনা ঢোকেন। খুলনা থেকে পিরোজপুর, ঝালকাটি, বরিশাল হয়ে মহাস্তাপুর দিয়ে প্রবেশ করেন মাওয়া ঘাটে। পরে বিক্রমপুরসহ কয়েকটি স্থান হয়ে ডেমরায় আসেন। এখন অল্প একটু জায়গা। ২৫টির মতো ঘর। ক্ষুদ্র পরিসর ঘরে একটি করে পরিবারের বাস। স্বামী-স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে যে যার মতো থাকছেন। আবার সবকটি পরিবার নিয়ে বৃহৎ আরেকটি পরিবারের রূপ। বর্তমানে মোট সদস্য ৮০ জনের মতো। সোমবার দুপুরের পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত আছেন। কাজে তেমন কেউ যাননি। কয়েকদিন ধরেই নাকি শুয়ে বসে কাটাচ্ছেন। কারণটা বিচিত্র বৈকি। বহরের একজন অসুস্থ। আর কেউ একজন অসুস্থ হলে তাকে ফেলে রেখে বাকিরা কেউ বাইরে যাবেন না। এটাই নাকি নিয়ম! বাড়িতে থেকে সবাই মিলে রোগীর সেবা করছেনÑ এমন নয় বরং বেদেদের ইতিহাস বলে, পুরুষ সদস্যরা প্রায়শই অলস। ছুঁতো পেলেই হলো। হয়ত সে কথারই প্রমাণ দিচ্ছিল জমজমাট লুডুর আসর। গাছের ছায়ায় বসে খেলা চলছিল। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ের সংখ্যাও অনেক। হাসি-কান্না হৈহুল্লোড় লেগে ছিল। ইভানা নামের একটি শিশুর মাথার পেছনের কিছু অংশ আগুনে ঝলসে গেছে। শোভা নামের আরেক শিশুর পায়ে ছোট গর্তের মতো। শিশুটির মা জলি বেগম সবে শিশু বয়স পার করেছে। অল্প বয়সে বিয়ে। সন্তান। বলল, ‘মোল্লার বান্দর কামুড় দিছে। গোস্ত নিয়ে ছাড়ছে।’ হ্যাঁ, প্রতিটি ঘরের সামনে একটি করে বানর বাঁধা। পুরুষ সদস্যরা সাপ ধরার পাশাপাশি হাটে ঘাটে ঘুরে বানরের খেলা দেখান। একই বানর রাতে মালিকের প্রহরীর হয়ে বাড়ি পাহারা দেয়। অপরিচিত কাউকে দেখলেই হামলে পড়ে একসঙ্গে! তবে সাপ দেখা যাচ্ছিল না। কোথা থেকে কখন বের হয়ে আসে, সেটাই ছিল ভয়। বহরের সর্দার পাটালী অবশ্য আশ্বস্ত করলেন। একটি গাছে অনেক কাঠের বাক্স ঝুলছিল। দেখিয়ে বললেন, সব সাপ বাক্সবন্দী। ষাট বছরের প্রবীণ সর্দার জানান, এখানে অবস্থান করা পুরুষ সদস্যদের পেশা মূলত সাপ ধরা। সাপ ও সাপের বিষ ইত্যাদি বিক্রি করে চলে তাদের। কারও বাসায় সাপ ঢুকে গেলে, টাকার বিনিময়ে তাড়িয়ে দেন। তবে, সাপের খেলা দেখান না। মেয়েরা দুই তিনজন একসঙ্গে যান, যেদিকে যান। তাদের মূল কাজ তাবিজ কবচ বিক্রি। সিঙ্গা লাগানো। বিষ ব্যথার ওষুধ দেয়া। ধর্মীয় গোঁড়ামিও আছে। কোন কোন স্বামী এখন আর স্ত্রীকে বাইরে কাজে যেতে দেন না। মোঃ আমির আলীর স্ত্রী রান্নাবান্না আর স্বামীকে সঙ্গ দিতেই বহরে আছেন। তিনি অসুস্থও। গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। স্বামীর কামাই নেই। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বললেন, আল্লা আছে। দেখব। বেদেরা নিজেরাও নিজেদের চিকিৎসা করে থাকেন। চোখের সামনেই দুরন্ত এক কিশোরী পা কেটে ফেলেছিল। রক্তাক্ত পা নিয়ে বড় বোনের কাছে আসতেই তিনি ক্ষতস্থানে পান খাওয়ার চুন লেপে দিলেন। হয়ে গেল চিকিৎসা! বেদেদের প্রতিদিনের জীবন সংস্কৃতি এ-ই। মোটামুটি চেনা জানা। পুরনো রেওয়াজ রীতি যত, মেনে চলেন সবাই। ঐতিহ্যের প্রতি প্রেম অটুট আছে। তবে অভিভূত হতে হলো তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাদের বিরল সখ্য দেখে! কষ্টের জীবনে যেটুকু সুখ স্বস্তি এনে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। বাইরের দুনিয়া থেকে ওরা নিতে শিখেছে। প্রায় প্রতি ঘরে সোলার প্যানেল। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে। এভাবে সারাদিন। সঞ্চিত সৌরশক্তি দিয়ে চলছে ফ্যান। এইটুকুন দেখতে হলেও, দারুণ বাতাস! একটি ঘরের ভেতরে ফ্যান চালিয়ে শুয়ে ছিলেন মোঃ আজিজ। গ্রীষ্মের এই গরমে আপনি তো বেশ আছেন। বড়লোক মানুষ। বলতেই কেমন যেন লজ্জায় গুটিয়ে গেলেন। বললেন, আমাদের মতো গরিব লোক ভাই এই দুনিয়ায় নাই। কী গরম পড়ছে দেখেন, বাঁচতে হবে না? এই জন্য সোলার নিছি। ফ্যান ছাড়াও, সন্ধ্যা হতেই একটির পর একটি ঘরে আলো জ্বলতে দেখা গেল। ঘুপচি ঘরের ভেতরটা এত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল যে, বন জঙ্গল ঘেরা কোন জায়গা বলে মনে হয়নি। ওই আলোতেই খাওয়া-দাওয়া। ছোট ছোট বাচ্চা কেউ কেউ বসে গিয়েছিল বই নিয়ে। চলছিল লেখাপড়া। একজন তো এবার এসএসসি পাস করেছে। নাম অন্তর। জানাল, কলেজে ভর্তি হতে হবে। তাই সে চলে যাচ্ছে। বহরে গান-বাজনার ব্যবস্থাও আছে। আলী আকবর নামের এক যুবকের ঘর থেকে গানের সুর ভেসে আসছিল। উঁকি দিয়ে দেখা গেল, বিছানা পাতা মেঝের এক পাশে হাঁড়ি-পাতিল। অন্য পাশে মাঝারি মাপের সাউন্ড সিস্টেম। মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ডে অসংখ্য গান। সেখান থেকে একটির পর একটি বেজে যাচ্ছিল। গানের সাউন্ড সামান্য কমিয়ে তিনি বললেন, সারাদিন সাপের খোঁজে আশপাশের বনে জঙ্গলে ছুটে বেড়াই। ঘরে এসে তো একটা কিছু করতে হয়। গান ভাল লাগে, শুনি। এই গান শোনার উৎসও সৌরবিদ্যুত। মোবাইল ফোনও চার্জ করা হয় সৌরবিদ্যুতে। প্রায় সবার হাতেই দেখা গেল একটি করে মোবাইল ফোন। মাভুরী নামের প্রবীণ এক নারীর বয়স প্রায় ৭০। যাপিত জীবন নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন তিনি। একটু পর পরই দুঃখ করে বলছিলেন, সব খোদার ইচ্ছা বাবা। কিসের যে এক বেদে জাত বানিয়ে পাঠিয়ে দিল। তাই করে গেলাম। কথার ফাঁকেই ঘরের ভেতরে রাখা ফোনটি বেজে উঠল। ওমনি চোখে মুখে আনন্দ। অভ্যস্ত হাতে ফোন রিসিভ করলেন। কণ্ঠে সে কী আবেগ! বললেনÑ হ, আব্বা ভাল আছি। তার পর আরও কিছু কথা। শেষ করে জানালেন, বড় ছেলে, ছেলের বউ অন্য একটি বহরের সঙ্গে ফরিদপুর আছে। সেখান থেকে ফোন করে তার খবর নিল। বৃদ্ধ মা বললেন, এখন ভাল হয়েছে। মোবাইল করতে পারি। ছেলেরাও করে। মরলে তো খোঁজ নিতে পারবে, কি কন আব্বা? অল্পস্বল্প লেখাপড়া করেছেÑ এমন ছেলেরাও আছে বহরে। এক তরুণ স্মার্টফোন মুখের সামনে ধরে কথা বলছিল। তার কথাগুলো এ রকমÑ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তো, তাই অস্পষ্ট দেখছিস। আমি তো তোরে দেখতেছি। ততক্ষণে বোঝা হয়, সে ভিডিও কলে ব্যস্ত! কার সঙ্গে কথা হচ্ছিল? প্রেমিকা? এমন প্রশ্নে অনেকটা থামিয়ে দিয়েই বলল, ঝিনাইদহে বোন থাকে। সেই কবে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি। ভিডিও কল করে বোনের মুখটা দেখলাম। ভাবতে ভাল লাগে, এই মুখ দেখাদেখির আনন্দ ওদের দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। এত এত ডিভাইসের ব্যবহার যেখানে, ল্যাপটপ কেন থাকবে না? এর ওর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মামুন নামের এক বেদের ঘরে আছে ল্যাপটপ কম্পিউটার! দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তার দেখা মিলল। গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ। সেখানে তিনি ফেরি করে মেয়েদের হাতের চুরি প্রসাধনী চাবির রিং ইত্যাদি বিক্রি করেন। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে এসে হাজির হলেন তিনি। ল্যাপটপ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম জানাতেই একটি বাঁশের ঝুড়ির ভেতর থেকে প্যাকেট করা নোটপ্যাড বের করলেন। তার পর গায়ের গামছা দিয়ে ওপরের অংশটা আলতো করে মুছলেন। ফুঁ দিলেন। তার পর ডিভিডিতে দেখালেন জনপ্রিয় একটি বাংলা সিনেমা। কথা বলে বোঝা গেল, মামুন অপেক্ষাকৃত বড় জাত। বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। বিয়ে করেছিলেন ঝিনাইদহের মেয়ে। সেই সূত্রে এই বহরে যোগ দেয়া। তিনি সাপ-টাপ আর ধরেন না। বিভিন্ন জিনিস ফেরি করে বেড়ান। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলতে শৌখিন তরুণ ল্যাপটপে সিনেমা দেখেন। কখনও কখনও বাইরে শো’র আয়োজন করেন। সবাই মিলে মজা করে দেখেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হতে পারে, বেদেরা অর্থকড়ির মালিক হয়েছে। প্রচুর খরুচে হয়েছে। শিখে গেছে বিলাসিতা। আদতে তা নয়। একদমই স্বল্প খরচে নিজেদের বড় প্রয়োজন মেটানোর যে সহজ প্রক্রিয়া, তারা তার সন্ধান পেয়েছেন মাত্র। যে সৌরবিদ্যুতের এত ব্যবহার, নামমাত্র মূল্যে তার ব্যবস্থা করেছেন। খরচের হিসাবটি জেনে তো প্রথমে বিশ্বাসই হয় না। মামুনই নিশ্চিত করলেন। বললেন, চকবাজার থেকে ২০ ওয়াটের একটি সোলার প্যানেল কিনেছি ১২০০ টাকায়। আর অটোরিক্সার পুরনো ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারির কিনেছি ৮০০ টাকায়। মানে, ২০০০ টাকার মধ্যে সব হয়ে গেছে। অন্যরাও প্রায় একই দামে ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল কিনেছেন বলে জানান তিনি। তা দিয়েই মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চার্জ করা হয়। ফ্যান চলে। বাল্ব জ্বলে। স্পীকারে গান শোনা যায়। চলে সিনেমা। ব্যথা-বেদনায় ভরা ভাসমান জীবনে এ তো কম পাওয়া নয়! বহরের সকলেই প্রযুক্তির সুবিধার কথা স্বীকার করেন। দারুণ উপভোগ করেন। তবে এ-ও সত্য যে, মাত্র ২০০০ টাকা জমিয়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। হচ্ছে না। একাধিক ঘরে মিটমিট করে হারিকেন জ্বলছিল। তার চেয়ে গভীর সত্য, অনেকের ঘরে খাবার নেই। দীর্ঘ সময় বহরে থেকে চলে আসার সময় প্রতিবদেককে উদ্দেশ করে কেউ কেউ বলেই ফেললেন, কিছু তো দিয়ে গেলেন না! সঙ্গে সঙ্গে মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। সৌরবিদ্যুতের সব আলো যেন নিভে গেল একসঙ্গে!
×