ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার চারপাশে দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৮ মে ২০১৬

ঢাকার চারপাশে দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ রাজধানী ঢাকা মহানগরীর মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে এবার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষার্থীর চাপ বাড়লেও ঢাকায় মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে না-শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন মহলের এমন অবস্থানের প্রেক্ষিতে এবার সম্পূর্ণ নতুন ও আধুনিক শিক্ষার সুযোগসম্পন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগ। জানা গেছে, ঢাকা শহরের আশপাশের দশটি এলাকায় একটি করে নতুন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই হবে দুই শিফটের। যেখানে অন্তত ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে এসব বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন হতে যাওয়া এসব স্কুলের প্রতিটিই হবে ঢাকা জেলার মধ্যে। তবে ঢাকা মহানগীর আশপাশের এলাকায়। প্রতিটির একাডেমিক ভবন হবে ১০ তলার। এসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হলে ঢাকা শহরের হাতেগোনা মানসমসম্মত বিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। ঢাকা জেলার নবীনগর, ইপিজেড/আশুলিয়া, ধামরাই, পূর্বাচল, হেমায়েতপুর, জোয়ারসাহারা, সাইনবোর্ড, চিটাগং রোড, শাহজাহানপুর/নূরের চালা, ইকুরিয়া/ঝিলমিল এলাকায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। ‘ঢাকা শহর নিকটবর্তী এলাকায় দশটি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ, প্রতি প্রতিষ্ঠানে একটি করে দশ তলা ভবন নির্মাণ, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, ল্যাব স্থাপন, খেলাধুলার সামগ্রী সরবরাহ, বই সরবরাহ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হবে। নতুন বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) নতুন দশটি বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি নতুন দশটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি ডেভেলাপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপাইল (ডিপিপি) প্রণয়ন করেছে মাউশি। মন্ত্রণালয় ডিপিপি অধিকতর যাচাই বাছাই করে প্রকল্পের জনবল অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে, যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদনের পর ডিপিপি ‘একনেক’র চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায়) বলা হয়েছে, নতুন দশটি প্রতিষ্ঠানই হবে দুই শিফটের। বর্তমানে ঢাকার মোট ৪৯টি থানায় ৩১টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১১টি সরকারী কলেজ রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের প্রায় অর্ধেক থানায় কোন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ নেই। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরীতেও জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও নতুন কোন সরকারী স্কুল-কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বহুবছর। এ অবস্থায় গত মহজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ “ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মহাবিদ্যালয় (সরকারী) স্থাপন” প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ১১টি নতুন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি কলেজের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমার কারণে বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে- হাজারীবাগ থানার অধীন কালুনগর মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর থানার বরাব মৌজায় একটি মহাবিদ্যালয়, মিরপুর পল্লবী থানার অধীন দুয়ারীপাড়া মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়। এছাড়া আছে সবুজবাগ থানার অধীন রাজারবাগ মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়, বাড্ডা থানার অধীন দক্ষিণখান মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর ঢাকা গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তরা থানার অধীন উত্তরখান মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর থানার অধীন জুরাইন মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিরপুর দারুস সালাম থানার অধীন জহুরাবাদ মৌজায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পে একটি বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়। নতুন দশ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকার ১১ প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও আধুনিক সুবিধা প্রদানেরও চিন্তা ভাবনা চলছে। যেখানে দশতলা ভবনের থাকবে আধুসিক কম্পিউটার ল্যাব। নতুন পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটিতে প্রধান শিক্ষকের জন্য থাকবে কোয়ার্টার। প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, কমনরুম এবং শিক্ষক মিলনায়তন থাকবে। প্রতিটি ভবনে ১০টি শ্রেণীকক্ষ থাকবে। প্রতিটি কক্ষের শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা কম পক্ষে ৪০ জন। তবে প্রয়োজনে বাড়ানোর মতো অবকাঠামো থাকবে। প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ডাবল শিফটসহ) অন্তত ৫০ জন শিক্ষক ও সাত জন কর্মচারী থাকবে। নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, বই-পুস্তক, অফিস যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য ডিজিটাল বোর্ড ও বিনোদনের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। কমবেশি এক একর জমির ওপর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। এদিকে ঢাকার আশপাশে নতুন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা খুব জরুরী বলে মন্তব্য করলেন জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির। একই সঙ্গে তিনি দেশে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি করারও পরামর্শ দিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক, তবে মাসসম্মত প্রতিষ্ঠান সেভাবে নেই। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় দেখা যায় সব সময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে। একই অবস্থা কলেজেও।
×