ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বজ্রপাতকেও দুর্যোগ বিবেচনা করা হচ্ছে গত বছর থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৮ মে ২০১৬

বজ্রপাতকেও দুর্যোগ বিবেচনা করা হচ্ছে গত বছর থেকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্প্রতি দুইদিনে সারাদেশে বজ্রপাতে ৮১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১২ ও ১৩ মে দেশের ২৬ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় এসব ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। ঢাকায় চার, গাজীপুরে দুই, নরসিংদীতে সাত, টাঙ্গাইলে চার, কিশোরগঞ্জে পাঁচ, নেত্রকোনায় দুই, রাজবাড়ীতে চার, পাবনায় ছয়, দিনাজপুরে দুই, বগুড়ায় দুই, জয়পুরহাটে তিন, গাইবান্ধায় দুই, নাটোরে দুই, নওগাঁয় চার, রাজশাহীতে ছয়, নীলফামারীতে দুই, সিরাজগঞ্জে সাত, যশোরে এক, নড়াইলে দুই, সিলেটে চার, সুনামগঞ্জে এক, হবিগঞ্জ এক, চট্টগ্রামে দুই, বাহ্মণবাড়িয়ায় চার, পটুয়াখালীতে এক ও পিরোজপুরে একজন মারা গেছেন ওই দুইদিনের বজ্রপাতে। এছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে কিশোরগঞ্জের ইটনায় নৌকা ডুবে চারজন এবং দিনাজপুরে গাছচাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। নিহতের মধ্যে ৫৪ জন মাঠে, ১৫ জন উঠানে, তিনজন খেলার মাঠে, চারজন রাস্তায়, তিনজন বাড়ির পাশে এবং দুইজন ভবন নির্মাণ কাজের সময় বজ্রপাতে মারা যান। ২০১৫ সালে সারাদেশে মোট ১৭ জন বজ্রপাতে মারা গিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেন, বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করি না বলে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু তা সত্য নয়। আমাদের মন্ত্রণালয় গত বছর আগস্ট থেকে বজ্রপাতকেও দুর্যোগ বিবেচনা করছে। বজ্রপাত নিয়ে কী করণীয়- সে বিষয়ে কাজ করছি, ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য দিচ্ছি। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের সাড়ে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। সচিব বলেন, ওই দুইদিনে এত বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বজ্রপাতে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়- সে বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছে। বজ্রঝড়ের সময় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বজ্রপাতের ভয় থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের শঙ্কা আছে কি না, তার ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাস ১০৯৪১ নম্বরে ফোন করে জানা যাবে। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ॥ বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে না থাকাই ভাল। বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা বিপজ্জনক। একান্ত বের হতে হলে রাবারের জুতা ব্যবহার করা উচিত। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া উচিত। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ হবে। কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকেও দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে, ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। বাড়িতে থাকলে বজ্রপাতের সময় জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকা নিরাপদ হবে না। বজ্রপাতের সময় বাড়ির জানালা বন্ধ রাখা উচিত। ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকেও দূরে থাকা প্রয়োজন। মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। ধাতব হাতলের ছাতা ব্যবহার না করাই ভাল। বজ্রপাতের সময় ছাউনিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া নিরাপদ নয়। ওই সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে থাকা উচিত। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করাই নিরাপদ। বিপদ এড়াতে প্রতি ভবনে বজ্র নিরোধক দ- স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
×