ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মার্চ শেষে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা

খেলাপী ঋণ বাড়ল ৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৮ মে ২০১৬

খেলাপী ঋণ বাড়ল ৮ হাজার কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ গত বছর গুণগত মানের ঋণ বিতরণ ও তদারকির ফলে ডিসেম্বরে প্রান্তিকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ অনেক কমেছিল। তবে পুনঃতফসিল করা ঋণের একটি অংশ আবার খেলাপীতে পরিণত হওয়ায় তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। মাত্র তিন মাসে ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ বেড়েছে আট হাজার ৪০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। এর পরিমাণ ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর আগে গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা কমে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকায় নেমেছিল, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জানা গেছে, গত বছর গুণগত মানের ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়া ঋণ পুনঃতফসিলের ফলে খেলাপী ঋণ কমে আসে। তবে পুনঃতফসিল করা ঋণের একটি অংশ আবার খেলাপীতে পরিণত হওয়ায় সর্বশেষ হিসাবে তা বাড়তে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। খেলাপী ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সর্বশেষ (জানুয়ারি-মার্চ ’১৬) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি ২২ লাখ, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই ৫০ হাজারের ওপরে খেলাপী ঋণ ঘুরপাক খাচ্ছে। আদায়ের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না থাকায় নতুন নতুন খেলাপী ঋণে যুক্ত হয়ে টাকার অংক বেড়েই চলেছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছর গুণগত মানের ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো হয়েছিল। এতে এক খাতের ঋণ অন্য খাতে বিতরণের সুযোগ কমেছিল। ফলে ওই সময়ে খেলাপী ঋণও কমেছিল। বছরের শুরুতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়লেও বছর শেষে তা আরও কমে আসবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বরাবরের মতো রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ বেশি বেড়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা; যা এ ৫৬ ব্যাংকের মোট খেলাপী ঋণের প্রায় অর্ধেক। এটি আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্তও এই ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৭৪৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে যা বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। বেসরকারী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায়; যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিদেশী ৯টি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ তিনটি ভাগে শ্রেণীকৃত করা হয়। এর মধ্যে মন্দমানে শ্রেণীকৃত ঋণকে বেশি উদ্বেগজনক হিসেবে ধরা হয়। কেননা এ ধরনের খেলাপী ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা থাকে একেবারে কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণ আদায় করতে না পেরে ব্যাংকগুলো তা অবলোপন বা আর্থিক বিবরণী থেকে বাদ দিয়ে হিসাব করে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে মন্দমানে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে মন্দমানে শ্রেণীকৃত রয়েছে ৪৭ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে যা ছিল ৩৯ হাজার ৪ কোটি টাকা। সন্দেহজনক মানে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে চার হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে ছিল পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এছাড়া সাব স্ট্যান্ডার্ড বা নিম্নমানে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে ৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে ছিল পাঁচ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।
×