ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৮ মে ২০১৬

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা

আইন না মানার সংস্কৃতি সমাজে প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠিত। একান্ত বাধ্য না হলে মানুষ নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণে উৎসাহী হয় না। এক ধরনের অলসতা, অনীহা এবং উপেক্ষার মানসিকতা কাজ করে আমাদের ভেতরে সাধারণভাবে। ‘আচ্ছা মানব’, ‘মানছি’, ‘যাক না দেখি কী হয়’Ñ এ ধরনের ভাবনাও কাজ করে থাকে অনেক সময়। কিন্তু যখনই আইন অমান্যের জন্য জরিমানা গুনতে হয়, তখনই মানুষ আমলে নেয় বিষয়টা। ট্রাফিক আইনের বিষয়টিই লক্ষ্য করা যাক। ফুটওভারব্রিজের ওপর দিয়ে পথচারী পারাপারের জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হলো ঢাকায়। কয়েকটি স্থানে আইন ভঙ্গের জন্য দোষী ব্যক্তিদের জরিমানাও করা হলো। তারপর যে সেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত উঠে যাওয়ার পর পরই আবার জনস্রোত চলমান গাড়িবহরকে ইশারায় থামিয়ে কিংবা তোয়াক্কা না করে রাস্তা পারাপার হতে শুরু করে দিল। খুব কম লোকই রাজধানীতে এখন পথচারী সেতু ব্যবহার করেন। তবে খাবারে ভেজালসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের বেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের প্রশংসা পেয়েছে, এটা বলতেই হবে। শুরুর দিকে নয়টি অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে করা গেলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩টিতে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। এটা অস্বীকারের কিছু নেই যে, যুগের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে। তাই পুরনো আইন নবায়ন বা সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুগোপযোগী আইন করা হবেÑ সেটাই প্রত্যাশিত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতাধীন বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা। শাস্তি বাড়িয়ে চার বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার চিন্তাভাবনা চলছে। শুধু তাই নয়, এটিকে আরও যুগোপযোগী করতে চালু হচ্ছে ই-ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত পরিচালনায় বিভাগীয় সদরে দেয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধাসংবলিত আধুনিক যানবাহন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সাত সদস্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স। সংশোধনী আনা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তফসিলভুক্ত প্রায় শত বছরের পুরনো ১২টি আইনে। এসবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি অনুযায়ী ২০০৯ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হওয়ায় খাদ্যে ভেজাল রোধ, মাদকদ্রব্য অপব্যবহার রোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। হরতাল অবরোধকালে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চলতে দেখি আমরা। তাৎক্ষণিকভাবে তা দমনের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত নিশ্চয়ই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তবে সেটিও স্বচ্ছতার সঙ্গে হতে হবে। সিসি ক্যামেরার ব্যবহার এখন অপরাধ শনাক্তে কাজে আসছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জায়গাটি সিসি ক্যামেরার বলয়ের ভেতর থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে অপরাধী অপরাধ স্বীকার করুক আর না করুক অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি বিষয়ে বিশ্লেষণ করা সহজতর হবে। তবে আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কোনক্রমেই যেন ক্ষমতার ভুল বা ইচ্ছাকৃত অপপ্রয়োগ না ঘটে। হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মোবাইল কোর্টের ব্যবহার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন উপেক্ষা করা সমীচীন হবে না।
×