ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গরিব ঘরে চাঁদের আলো

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৭ মে ২০১৬

গরিব ঘরে চাঁদের আলো

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ অজপাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের সন্তান শ্রাবণী ও রাসেল। একজনের বাবা পাথর শ্রমিক আর অন্যজনের বাবা রিক্সা-ভ্যানচালক। অভাব তাদের চিরসঙ্গী। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের সন্তানের আবার লেখাপড়া? শ্রাবণী আক্তার জেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিরগড় মোমিনপাড়া গ্রামের দরিদ্র নুর জামাল। মাত্র তিন শতক জমির ওপর ঘর তুলে দিনযাপন করছেন পরিবার নিয়ে। পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনে পাথর ভাঙ্গার কাজ করেন তিনি। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর আয় করেন আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ টাকা। টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে না পারায় বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। দ্বিতীয় মেয়ে জামিলা উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও অর্থাভাবে তার লেখাপড়া এখন বন্ধ। আর ছোট মেয়ে শ্রাবণী মীরগড় ময়নউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এসএসসি পাস করেছে। শ্রাবণীর পিতা নুর জামাল বলেন, আমাদের অভাবের সংসার। আমি শ্রাবণীর লেখাপড়ার কোন খবর নিতে পারিনি। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়ার পর তার মা মুরগি পালন করে খাতা-কলম কিনে দিয়েছে। প্রাইভেট না পড়াতে পারায় সে জেএসসিতে ভাল ফল করতে পারেনি। নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় ভাল ফল করায় স্কুলের শিক্ষকরাই বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়েছে। ফরম পূরণের সময় কয়েকজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি। আমি খুব খুশি শ্রাবণী জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু তাতে কী হবে। তাকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নেই। শ্রাবণীর ইচ্ছা সে বড় হয়ে শিক্ষক হবে। রাসেল ইসলাম জেলা সদরের মাহানপাড়া গ্রামের রিক্সা-ভ্যানচালক সাইফুল ইসলামের ছেলে রাসেল ইসলাম। সে এবার দেওয়ানহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। লেখাপড়ার খরচ যোগাতে তাকে ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতে হয়েছে। অনেক সময় বাবার অবসর সময়ে ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছে। রাসেলের ইচ্ছা লেখাপড়া শেষ করে সে প্রকৌশলী হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে যার লেখাপড়ার খরচের ব্যবস্থা নেই, তার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া কী করে সম্ভব। আরিফুল ইসলাম নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ১৬ মে ॥ ছিল না কোন গৃহশিক্ষক। ছিল না গাইড বই কেনা বা কোচিং করার সামর্থ্যও। এমনকি ঘরে বসে পড়ার উপযোগী টেবিল-চেয়ারও ছিল না। চরম অভাব-অনটনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। আর এভাবেই অদম্য ইচ্ছার জোরে এসএসসিতে পেয়েছে জিপিএ-৫। এ কিশোরের নাম আরিফুল ইসলাম। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছোট ইলাশপুর গ্রামের আশরাফুল আলমের ছেলে। পূর্বধলা জগৎ মণি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। আরিফের বাবা আশরাফুল আলম দিনমজুর। বাড়ির এক চিলতে ভিটে ছাড়া কোন জমিজমা নেই তাদের। টিনের ছাউনি আর বাঁশের বেড়ার ছোট ঘরটির মধ্যে এক চৌকিতে থাকতে হয় মা-বাবা, ভাই-বোনসহ চারজনকে। দারিদ্র্য জর্জরিত এমন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েনি আরিফ। তার ছোট বোন শারমিনকেও পড়ায় সে। শারমিনও ওই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী।
×