ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্যানিটেশন প্লাসের হার দ্রুত বাড়াতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ মে ২০১৬

স্যানিটেশন প্লাসের হার দ্রুত বাড়াতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

সমুদ্র হক ॥ স্যানিটেশনে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে। বর্তমানে স্বচ্ছ ভারত মিশনে যখন প্রতিটি রাজ্যে শৌচাগার নির্মাণের সরকারী প্রচার শুরু করেছে বাংলাদেশ তখন সহস্র্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এমডিজি) স্যানিটেশনে শতভাগ সাফল্য অর্জনের পর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলে (এসডিজি) স্যানিটেশন প্লাসে (বাথরুমসহ স্যানিটেশন) সাফল্যের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে আশা করা হয়েছে, উল্লিখিত বিষয়েও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে বাংলাদেশ এসডিজির শতভাগ টার্গেট পূর্ণ করবে। উন্নয়নের এই কাজে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে সহযোগিতা দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিই) ও ইউনিসেফ। বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে স্যানিটেশনের সফলতার হার বর্তমানে ৯৯ শতাংশ। প্রায় এক যুগ আগে ২০০৩ সালে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার ছিল ৪২ শতাংশ। বর্তমানে তা এক শতাংশে নেমে এসেছে। এই সময়ে প্রায় শতভাগ সাফল্যের পাশাপাশি উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও স্যানিটেশনের সঙ্গে বাথরুম সংযুক্ত থাকার হার ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও ৪৫ শতাংশ স্যনিটেশন ব্যবস্থা অতি উন্নতমানের নয় এবং স্যানিটেশন ও বাথরুম এক সঙ্গে নেই। বাংলাদেশ যখন ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা করা হয়েছে তখন উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও মধ্যম আয়ের দেশের একটি অংশ। এই লক্ষ্যেই স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে সফলতা পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সহযোগী ভূমিকা রাখবে। এই কাজে সরকারকে সহযোগিতা দিচ্ছে আইডিই, সুইজ এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কোঅপারেশন ও ইউনিসেফ। সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে প্রায় শতভাগ স্যানিটেশনের সফলতার হারের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারত এখন মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালে (প্রায় দেড় যুগ আগে) স্যানিটশনের যে হার ছিল বর্তমানে ভারতের হার তার থেকেও কম। আইডিইর সানমার্ক এস প্রজেক্টের ফিল্ড টিম লিডার মোল্লা সাবিহা সুলতানা জানালেন, স্যানিটেশন প্লাস বা উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রথম পর্যায়ের কাজ এ বছর এপ্রিলে শেষ হয়েছে। চলতি মে মাসের মধ্যভাগ হতে দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে যা চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এই সময়ে দেশের ৬ জেলা বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সুনামগঞ্জে স্যানিটেশন প্লাস ব্যবস্থা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছরের (২০১৭) জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল জেলায় উন্নত স্যানিটেশন প্লাস ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হবে। সেই হিসাবে আশা করা যায় শতভাগ উন্নত স্যানিটেশন প্লাস ব্যবস্থা রূপকল্প ২০২১ সালের আগেই পূরণ হবে, যা মধ্যম আয়ের দেশ পরিণত করতে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। মাঠ পর্যায়ের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়- গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে পাকা স্যানেটারি ল্যাট্রিন আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তার মেইনটেন্যান্স ভাল নয়। প্লাস্টিকের প্যান ব্যবহারের হার এখনও বেশি। তারওপর ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। স্যানিটেশনে পানির ব্যবহার কম। অবস্থার উত্তরণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি কোম্পানির বাজারজাত করা আধুনিক সাতো প্যান ও সানবক্স সরবরাহ করা হচ্ছে। সাতো প্যানের মূল্য মাত্র ১শ’২০ টাকা ও এক সেট সানবক্সের (স্যনিটেশন সরঞ্জাম) দাম ৭শ’ টাকা। গ্রামের লোকের পক্ষে এই মূল্য বহন করা সহজ। যাদের প্যান ও রিং পুরনো হয়েছে এবং যারা এখনও উন্নত স্যানিটেশন প্লাস ব্যবস্থার আওতায় আসেনি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সিরামিক প্যান স্যানিটেশনের সঙ্গে বাথরুম তৈরি করতে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। লক্ষ্য করা যায় গ্রামের পাঁচ বছর বয়সী অনেক শিশু এখনও উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে। আবার অনেক বয়স্ক ব্যক্তি যাদের হাঁটু ও কোমরে ব্যথা আছে তাদের প্যান ব্যবহারে অসুবিধায় পড়তে হয়। এই ধরনের বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতে কমোড ব্যবহার করতে পারে এই বিষয়টি স্যানিটেশন প্লাসে স্থান পেয়েছে। আইডিইর কানাডিয়ান কর্মকর্তা জেসিকা জানালেন, বাংলাদেশের গ্রামের স্যানিটেশন ব্যবস্থা পার্শ্ববর্ত্তী দেশ ভারত থেকেও অনেক উন্নত। বিদ্যুতায়িত উন্নত গ্রামে তিনি কমোডের ব্যবহারও লক্ষ্য করেছেন। বগুড়ার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুফিয়া নাজিম বললেন, লোকজন নিজের অধিকার সম্পর্কে যত সচেতন দায়িত্ব সম্পর্কে তত সচেতন নয়। উন্নত স্যানিটেশনের অধিকার ও দায়িত্ব সমান্তরালভাবে পালন করা যায় সেই দিকেও সচেতন করা দরকার।
×