ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি অনুস্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ মে ২০১৬

বৃহস্পতিবার ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি অনুস্বাক্ষর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য প্রায় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি অনুস্বাক্ষর হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। প্রায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। ইতোমধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির সমীক্ষাসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে রাশিয়া ১১ দশকি ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দেবে। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে সোমবার ১৮ সদস্যের একটি দল রাশিয়ার রাজধানী মস্কো গেছে। ঋণচুক্তি অনুস্বাক্ষরের আগে মঙ্গল এবং বুধবার রাশিয়া-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৫০ বছর ধরে উৎপাদন করবে। ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২৮ বছর। সর্বাধুনিক ভিভিআর ১২০০ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। উৎপাদন শুরু ২০২৩-এর অক্টোবরে। মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। রাশিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। লাইবরসহ ঋণের সুদের হার হবে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পের ১০ ভাগ অর্থ সরবরাহ করবে, যার পরিমাণ এক দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার। গত ২৫ ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এর পর মূল বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে এ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে এর এক বছর পর দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪-এর অক্টোবরে উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৫০ বছর ধরে বিদ্যুত উৎপাদন করবে। যদিও প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদনে আনতে রাশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বলছে, ওই সময়ে মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতির বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণকে দেখাতে সক্ষম হবে তারা, যা দেখে বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবে প্রবেশ করছে। কেন্দ্রটির জন্য পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হবে। ব্যবহার শেষে ওই জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেবে রাশিয়া। এজন্য পৃথক একটি জ্বালানি লিজ চুক্তি হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব থাকবে রাশিয়ার। এজন্য আলাদা কোন খরচ ধরা হবে না। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের খরচের মধ্যেই এ খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের যে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্য থেকেই বাংলাদেশের এক হাজারজনকে প্রশিক্ষণ দেবে রাশিয়া। বিদ্যুত কেন্দ্রের সকল যন্ত্র পানিপথে আনা হবে। এজন্য সুবিধাজনক স্থান দিয়ে নৌরুট খনন করা হবে। মোট ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল্য ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ২৫৩ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুত কেন্দ্রের ভূমি উপযুক্ত করার জন্য ৫৪৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার জন্য ব্যয় হওয়া ৫৫১ মিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যয়েন সম্ভাবনা বিবেচনা করে ৪০০ মিলিয়র ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় ছয় মাসের লাইবর ছিল দশমিক ৪৯ ভাগ, কিন্তু এখন তা বেড়ে হয়েছে দশমকি ৮০ শতাংশ। সে হিসাবে এখন সুদের হার দাঁড়ায় দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ। লাইবরের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে দেখা গেছে, আগামী ৫-৬ বছরে লাইবর খুব বেশি বৃদ্ধি পাবে না। তবে লাইবর যতই বৃদ্ধি পাক সুদের হার কোন সময়ই বছরে ৪ ভাগের বেশি হতে পারবে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আগেই সম্ভাব্য যাচাই শেষ করা হয়েছে। করা হয়েছে নক্সা। ভূমিকম্প, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিবেচনায় নিয়ে এ কেন্দ্র স্থাপনের নক্সা করা হবে। রূপপুরের মাটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উপযোগী নয়। এজন্য জার্মানির প্রযুক্তিতে সেখানকার মাটি যথাযথ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ৫৪৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশে ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তি রিএ্যাকটর ব্যবহার করা হবে। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রযুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে কোন্ কোন্ বিষয়ে সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনায় এনে এ প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা খুবই কম। তার পরও কোন দুর্ঘটনা হলেও তার কোন তেজস্ক্রিয়তা বাতাসে সহসা ছড়াবে না। এমনকি দুর্ঘটনা হলেও ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুত কেন্দ্র নিজেই তার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকতে পারবে। ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এটি তৃতীয় প্রজন্মের রিএ্যাকটর। সুতরাং সবচেয়ে নিরাপদ হবে। আর তাছাড়া যে কোন পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রধান বিষয় থাকে নিরাপত্তা। নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করতে গেলে প্রতিটি ধাপে ধাপে জাতিসংঘের তদারকির মধ্য দিয়েই যেতে হয়। জাতিসংঘের পারমাণবিক বিভাগ নিশ্চিত করলে বা তারা নিরাপদ মনে করলেই তা বাজারজাত করা সম্ভব হয়। নিরাপত্তার বিষয়টি তারাও যাচাই করবে। এ প্রযুক্তিতে ভিভিইআর-১০০০ থেকে অনেক ভাল হবে।
×