ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৫ পাক সেনার বিচার সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ মে ২০১৬

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৫ পাক সেনার বিচার সম্ভব

আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আলবদর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর এবার মানবতাবিরোধী অপরাধে জাড়িত ১৯৫ পাকিস্তানী সেনা সদস্যের বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে। এসব যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হলেও তাদের বিচারে বাধা নেই বলেই জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, যেহেতু ত্রিদেশীয় চুক্তিটি সংসদে পাস হয়নি, সে কারণে এ চুক্তির আইনগত ভিত্তি নেই। এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই ত্রিদেশীয় চুক্তির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর নিয়ে ১৯৭৪ সালের যে ত্রিদেশীয় চুক্তি লঙ্ঘনের কথা পাকিস্তান বলছে, সেই চুক্তির শর্ত তারাই ভঙ্গ করেছে। চুক্তিতে ছিল, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে নেবে পাকিস্তান। ওই চুক্তি তারা নিজেরাই লঙ্ঘন করেছে। আইন বলে, কোন পক্ষ যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তবে তা বাতিল হয়ে যায় বলেও মন্ত্রী জানান। সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চুক্তি স্বাক্ষরকারী ওই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বলেছেন, ঘটনার এত বছর পরও গণহত্যাকারীদের বিচার করা সম্ভব। যুদ্ধাপরাধীদের দ- কার্যকরে পাকিস্তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী দলের নেতারা বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহায়তায় ১৯৫ সেনার বিচার করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একাধিক সংগঠনও একই দাবি করে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানী সেনাদের বিচার করতে অবশ্যই বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনতে হবে। বিশ্বকে জানাতে হবে, মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কী ভয়াবহ অপরাধ করেছিল পাকিস্তানী সেনারা। স্বাধীনতার পর এসব পাকিস্তানী সেনার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ। চিহ্নিত করা হয়েছিল শীর্ষ অপরাধীদের। কিন্তু নানা বাস্তবতার কারণে বিচারিক উদ্যোগ থেমে যায়। এখন কেন তাদের বিচার করতে হবে, তার যৌক্তিকতাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান জাতিসংঘে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান একই রকম থাকবে বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান এখন যা আছে, তা-ই থাকবে। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা অভ্যন্তরীণ আইনে বিচার ও দ- কার্যকর করছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের কথা বলা উচিত নয়। তাদের মুখ বন্ধ রাখাই শ্রেয়। তারা যদি সে ম্যাচিউরিটি না দেখাতে পারে তাহলে পরে বিশ্ব তাদের নিন্দা করবে। এটাই আমার বিশ্বাস। উল্লেখ্য, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তবে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে স্বাক্ষরিত একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রেক্ষিতে ওই ১৯৫ যুদ্ধবন্দীকে ফেরত দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ওই ত্রিদেশীয় চুক্তি সই করেছিল। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করা সম্ভব। তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা যেতে পারে। ত্রিদেশীয় চুক্তির পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অঙ্গীকার করেছিলেন, ১৯৫ জনের বিচার করা হবে। সে ওয়াদা রক্ষা করেনি পাকিস্তান সরকার। সঠিক তথ্য নিয়ে তাদের বিচার করা উচিত। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ত্রিদেশীয় চুক্তি করে ১৯৫ সেনা সদস্যের বিচার হওয়ার কথা ছিল; পাকিস্তান করেনি। দরকার হলে জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে ওই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী সেনা সদস্যের বিচার করা হবে। অন্য এক অনুষ্ঠানে শুক্রবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে দেশটি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চাইবে বাংলাদেশ সরকার। তিনি বলেন, পাকিস্তান বার বার ১৯৭৪ সালের চুক্তি নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে। বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ॥ রবিবার এক বিবৃতিতে চিহ্নিত ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী ও মহাসচিব হারুন হাবীব বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার উপেক্ষা করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান বার বার হস্তক্ষেপ করছে। পাকিস্তান যদি এ ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জানানো হয়। সম্মিলিত নাগরিক সমাজ ॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ।
×