ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সুফিয়ান কবির

ভুল বলার অভ্যাস পরিহার করুন

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৬ মে ২০১৬

ভুল বলার অভ্যাস  পরিহার করুন

আড্ডা ভালোবাসেনা এই ধরনের মানুষ খুজে পাওয়া খুব কঠিন। রাজনীতি, খেলাধুলা বা সংস্কৃতিক অঙ্গনের বিষয় নিয়ে আড্ডা বেশ জমে উঠে হর হামেশাই। আর আড্ডা মানেই খোশ গল্প। কিন্তু আমরা কি জানি এই খোশ গল্প করতে করতে গিয়ে আমরা অনেক ভুল করে থাকি। বিশেষ করে যারা কথার মাধ্যে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করি তাদের ভুল হয়ে সবচেয়ে বেশি। এই ভুলগুলো হয়তো আমরা খুব একটা ধরতে পারি না। কিন্তু একটু সচেতন ভাবে খেয়াল করে দেখলে বুঝতে পারবেন আপনি প্রতিনিয়ত কত ভুল কথা বলেছেন। ধরুন আপনি জনকন্ঠ অফিসে বসে আছেন। আপনার এক বন্ধু আপনার সঙ্গে দেখা করতে আপনার অফিসে আসছেন। সে ফোনে আপনার কাছে জানতে চাইলো ঠিকানাটা। আপনি তাকে বললেন, তুমি বাংলা মোটর থেকে সোজা মোগবাজারের দিকে আসলে পায়ে হেঁটে চার মিনিট এলেই রাস্তার ডান দিকে পেয়ে যাবে জনকন্ঠ ভবন। এখানে আপনি কি ভুল করলেন বলুনতো। প্রথমেই দেখুন আমরা হাঁটা বলতে বুঝি আমাকে কিভাবে আসাতে হবে। এখা পায়ে হেঁটে বলার কোন যুক্তি নেই। কিছুক্ষন পর দেখলেন আপনার বন্ধু আপনার অফিসে এসেছে তার নববিবাহীতা বধুকে নিয়ে। জনতে চাইলেন কবে কোথায় বিয়ে করেছে। বিয়ের দাওয়াত কেন পেলেননা। বন্ধুটি বললো ‘কালকেই হঠাৎ বিয়ে করেছি, তাছাড়া আমাদের তো লাভম্যারেজ করে বিয়ে তাই দাওয়াত দিতে পারিন,। এখনে বন্ধুটির ভুলটি কি ধরতে পেরেছেন। দেখুন লাভম্যারেজ মানেই তো ভালোবাসার বিয়ে। এখানে বলা উচিত ছিল আমাদের লাভম্যারেজ তাই হঠাত সব কিছু হয়ে গেলো। যাক এভাবে আড্ডা দিতে দিতে দুপুর হয়ে গেল। আপনি বন্ধু দম্পতিকে বললেন চল দুপুরের লাঞ্চটা আজকে আমাদের ক্যান্টিনে কর। এখানেও আপনার একটা ভুল হয়ে গেল। কেননা লাঞ্চ মানে তো দুপুরের খাবার । এখানে শুধু লাঞ্চ করে নাও বললেই হত। বিছুক্ষনের মধ্যে আপনারা মঞ্জুর ক্যান্টিনে লাঞ্চ সেরে নিলেন। নানা কথায় বন্ধুটি আপনার কাছে জানতে চাইলেন তুমি কি এখনও গানের চর্চা কর। বা তোমার কয়টি অ্যালবাম বেরিয়েছে। তারপর আপনার বন্ধু তার স্ত্রীকে জানালেন আমার বন্ধুর গানের গলার ভয়েসটা খুব মিষ্টি। এখানেও ভুল। এখানে শুধু বলা উচিত ছিলো গলাটা মিষ্টি। মঞ্জুর ক্যান্টিন থেকে আপনি আবার বন্ধু ও নববধু সহ গেস্ট রুমে বসলেন। আবার শুরু হল নানা গল্প। জনকন্ঠে তার চাকরি কত বছর হল। তার কোন বই বেরিয়েছে কি না ইত্যাদি। এক সময় বন্ধু বললেন গত পরশু আমি নীলাদের বাসায় গিয়েছিলাম। ও একটা সুন্দর একটা বাচ্চা আছে। বাচ্চাটা দেদখতে ডল, পুতুলের মত হয়েছে। এখানেও বন্ধুটি একটা ভুল করেছে ডল মানেই তো পুতুল। তাই তার বলা উচিত ছিল ওর মেয়েটা পুতুলের মত সুন্দর। বন্ধুটি আপনার কাছে জানতে চাইলো প্রতিদিন কিভাবে অফিস যাওয়া আসা করা হয়। আপনি বললেন আমি প্রতিদিন নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসি ট্রেনে। তারপর আপনি বললেন, এই ঘরমে যাত্রীদের ভিড়ে আমার প্রতিদিন আর ডেইলি পেসেঞ্জারি করতে ভালো লাগছেনা। এখানেও আপনি বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে একটা ভুল করে ফেললেন। আপনি বলতে পারতেন প্রতিদিনের যাতায়াত আর ভালো লাগে না। এই কথা শেষ না হতে আপনি আবার বললেন প্রতিদিন নারায়নগঞ্জ থেকে যাতায়ত করতে গিয়ে আমার সকালের মনিং ওয়ার্ক টার আর হয়ে উঠছেনা। আপনার বলা উচিত ছিল মনিংওয়ার্কটা আর হয়ে উঠছেনা। বন্ধুটি আপনাকে বললো চল আজ তুই আমাদের সঙ্গে রবীন্দ্রসরবরে খোলা আকাশের নিচে বসে আড্ডা দিবি। এখানে বন্ধুটির বলা উচিত ছিল আকাশের নিচে বসে থাকবো। কেননা আকাশ সব সময় খোলাই থাকে। ওর কথার প্রতিউত্তরে আপনি বললেন না আজ রাতে আমার নাইট ডিউটি আছে। এখানেও ভুল, আপনি বলতে পারতেন আজ আমার নাইট ডিউটি আছে। রাতে বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। শেষে ওদের বিদায় দিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে বললেন, আগামী সোমবার আমার অফ ডে তোরা নারায়নগঞ্জে চলে আয়। গোটা দিন ঘোরঘুরি করে রাতে আমার বাসায় ডিনারটা খেয়ে ঢাকায় চলে আসবি। এখানেও একটা ভুল করলেন ডিনার মানেই তো রাতের খাবার তাই ডিনারটা সেরেই ফিরবি বললেই হতো। প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের দিনের নানা কথায় ভুল করে যাচ্ছি। আর এই ভুলটা বেশি হচ্ছে তখন যখন আমরা বাংলার সঙ্গে ইংরেজি শব্দ জুড়ে দিচ্ছ তখন। তাই আমাদের বাক্য ব্যবহারে আরও সচিতন হতে হবে। আশুন আমরা শুদ্ধ ভাবে কথা বলা শিখি। আর শুদ্ধ বাংলায় কথা বিল। নিজেকে স্মাট দেখানোর জন্য কথায় কথায় ইংরেজী শব্দ না ব্যবহার করাই ভালো। আপনার সন্তানকেও আপনি সেই শিক্ষাই দিন। ছবি : তাহসিন মডেল : রাসেল ও নিহারীকা
×