ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৯০ ভাগ প্লট ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ;###;বার, পার্লার, গার্মেন্টস, মার্কেট, প্রেস সবই আছে আবাসিক এলাকায় ;###;সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ;###;কোচিং সেন্টার রাতারাতি স্কুলে রূপ নিচ্ছে

বাণিজ্যিক রাজধানী গুলশান!

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ মে ২০১৬

বাণিজ্যিক রাজধানী গুলশান!

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বারিধারার ১২ নম্বর সড়কে দুটি ভবনের নিচে গাড়ি রাখার জায়গায় কুপারস নামের একটি বেকারি প্রতিষ্ঠান রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছে। আছে একটি লন্ড্রিও। অনুমোদনহীন এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে তিন দিনের সময় দেয়া হয় চলতি বছরের নয় মার্চ। অভিযানে রাজউকের আদালত ভবনের নিচে অফিসকক্ষ স্থাপনের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা করে। এই সড়কের অন্তত ১০টি ভবনে পাওয়া গেছে নানা অনিয়ম। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা রাজউকের জোন-৪ এর অথরাইজড অফিসার আদিলউজ্জামান বলেন, ১২ নম্বর সড়কের প্রায় সব ভবনের র‌্যাম্প রাস্তা পর্যন্ত চলে আসায় সড়কটি সরু হয়ে পড়েছে। এখানে সবাই যেন রাস্তা দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ইচ্ছেমতো ভবনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরো গুলশান-বারিধারার অবস্থা ঠিক এরকমই। আবাসিক চরিত্র হারিয়ে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপ নিয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান। অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক ব্যাংক, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, গার্মেন্টস, ক্লাবসহ কত কিছু। আবাসিক ভবনগুলো রাতারাতি বাণিজ্যিক ব্যবহারে রূপান্তর করা হচ্ছে। আরেকটু গভীরে গেলে বলতে হয়, বাণিজ্যিক এলাকার নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবাসিক এলাকায় চলছে জমজমাট ব্যবসা। সব মিলিয়ে শান্তি নেই এখন আর গুলশানের মানুষের। ছায়া সুনিবিড় শান্ত জনপদ এখন ব্যস্ত ও কোলাহলমুখর। বাড়ছে অশান্তি। অপরাধ। এ নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট। তাই এলাকার আবাসিক চরিত্র ফেরাতে বিভিন্ন সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন স্থানীয় লোকজন। ফলাফল তেমন কিছুই নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের আইন ও নীতিমালা ভেঙ্গে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে অভিজাত এলাকা গুলশানকে। আগ্রাসনের কারণে ধ্বংসের পথে গুলশান লেক। কিন্তু কর্তৃপক্ষের যেন টনক নড়ছেই না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গুলশানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এলাকা সুরক্ষায় গুলশান সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করা হলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত কাজ। ঢাকা শহরের বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়মতান্ত্রিক রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরা, গুলশান, বনানী এবং ধানম-ি এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজউক। অথরাইজড অফিসাররা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৮ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর ধানম-ি, গুলশান ও উত্তরায় একযোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে রাজউক। প্রথম দফায় দু’শ’র বেশি ভবনে অভিযান চালানো হয়। দ্বিতীয় দফায় আলাদাভাবে কিছু অভিযান চালানো হলেও ৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৃতীয় দফা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য নতুন একটি কর্মপরিকল্পনা করা হয়। এখন চলছে চতুর্থ দফার অভিযান। এতে চিহ্নিত করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভবন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, গুলশান ও বারিধারার ৯০ শতাংশ প্লটই ব্যবহার হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে, যার কোন বৈধতা নেই। আর অন্যান্য আবাসিক এলাকায়ও ৫০ থেকে ৭০ ভাগ প্লট বা ভবনই ব্যবহার হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। গুলশানের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, এলাকার আবাসিক পরিবেশ নষ্ট করার পেছনে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীসহ সন্ত্রাসী চক্র জড়িত। যারা আইন ও নীতিমালাকে তোয়াক্কা করেন না। এজন্য রাজউক ও ডিসিসিসহ সরাসরি সরকারকে দোষারোপ করলেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, আইন ও নীতিমালা অমান্য করার অপরাধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে আবাসিক এলাকা দিন দিন বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে রূপ নিচ্ছে। অবৈধ পার্কিং, অবৈধ ভবনসহ যানজটে নাকাল গুলশানের মানুষ। ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ২২তলা কিন্তু দেখার কেউ নেই। গুলশানে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের বিরুদ্ধেও রয়েছে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, রাস্তা দখল করে বিভিন্ন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ চেকপোস্ট ও নিরাপত্তা কক্ষ বসিয়েছে। তেমনি যেখানে সেখানে পার্কিংয়ের কারণে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে পথচারীদের। এলাকার সার্বিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে গুলশান সোসাইটির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল জনকণ্ঠকে বলেন, কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই এই এলাকায় দিন দিন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। স্কুল-কলেজ, বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টার, বার, গার্মেনস্টসসহ কি নেই গুলশান আবাসিক এলাকায়? যে যার ইচ্ছেমতো বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যেন কিছু বলার নেই। এটা কেমন কথা। তিনি বলেন, আমরা গুলশান সোসাইটির পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রাজউক থেকে শুরু করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে গুলশানের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে অনেক আগেই। মাঝে মাঝে রাজউকের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা লোক দেখানো। এখন পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানও উচ্ছেদের নজির নেই। তিনি বলেন, পুরো গুলশান এলাকায় নতুন সমস্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রভাবশালীরা একের পর এক বিভিন্ন বাসা বাড়িতে স্কুল, কলেজসহ কোচিং সেন্টার খুলে বসছেন। এতে বিভিন্ন সড়কে যেমন যানজট হচ্ছে তেমনি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি স্কুলে এক হাজার শিক্ষার্থী থাকলে একহাজার গাড়ি এসে সকালে ঐ রাস্তায় হাজির হয়। আবার বাসায় যায়। ছুটির সময় আবারও আসে। অর্থাৎ চারবার এসব প্রাইভেটকারের যাতায়াতে যানজটে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কে মানারাত স্কুলের পাশে একটি কোচিং সেন্টার রাতারাতি স্কুলের রূপ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কোথা থেকে ছাত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে তারাই জানে। অথচ এ নিয়ে কারও কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। রাজউকের বিজ্ঞপ্তি ॥ রাজউকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মহানগরীরর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার গুলশান শূটিং ক্লাব থেকে গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত এবং বনানী কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ, গুলশান-বনানী ব্রিজ থেকে গুলশান-বারিধারা ব্রিজ পর্যন্ত উভয় পাশের প্লটসমূহ বনানী ১১ নং রোড, উত্তর এয়ারপোর্ট রোডের উভর পাশের প্লটসমূহ, ধানম-ি এলাকার মিরপুর রোড, ২নং রোড, সাত মসজিদ রোড এবং ২৭ নং রোডের প্লটসমূহ বাণিজ্যিক, অ-আবাসিক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।’ আবাসিক এলাকার চিত্র ॥ গুলশান-২ নম্বরের ৫৫ নম্বর রোডে নয় নম্বর বাড়িটি আবাসিক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি আছে রাজউকের কাগজপত্রে। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে সেখানে দেখা গেছে ‘খাজা-খাজানা’ নামে একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট। অনুসন্ধানে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গুলশান শূটিং ক্লাব অর্থাৎ বাণিজ্যিক এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া হয়েছে। কিন্তু রেস্টুরেন্টটি স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকায়। এর ফলে এই সড়কের আবাসিক চিত্র এখন আর আগের মতো নেই। একই সড়কে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া একটি আবাসিক বাড়িতে ‘প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ড্রাগসেল স্কুল’। এমন চিত্র গুলশানের পথে-পথে। সাত নম্বর সড়কে বারণ মার্কেটের সামনে প্রাইভেট কারের যেমন কমতি নেই তেমনি প্রতিটি আবাসিক বাড়ির সামনে রাস্তায় ওপর এলামেলোভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এই সড়কেও ছোটবড় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেখা গেছে। ৫০ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িতে অবৈধভাবে একটি কোয়ালিটি ইন নামে হোটেল করা হয়েছে। ১০৮ নম্বর রুটের ১৪ নম্বর বাড়িতে এসকে টাইলস, একটি ফ্যাশন হাউস, বই-বিচিত্রাসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। গুলশান সোসাইটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১১ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১১৮ নম্বর রুটের ১২ নম্বর বাড়িতে ভাই-ভাই জেনারেল স্টোর, ১৩২ নম্বর সড়কের ৫৪/১, ৫৪/এ নম্বর দুটি বাড়িতেই ভাড়া দেয়া হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ১৩৩ নম্বর সড়কে আয়োজন বিরাণী হাউসসহ অবৈধভাবে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ১২৬ নম্বর সড়কে ফ্যাশন হাউস, ৬/৭টি রেস্টুরেন্টসহ বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চলছে দিনের পর দিন। ৩৪ নম্বর সড়কে স্কুল, ৩৫ নম্বর সড়কে স্কিন কেয়ার, হোটেল, টাইম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বিওএল অফিস রয়েছে। যার একটিরও বৈধতা নেই। ৪১ নম্বর সড়কে আছে স্টুডিও ৪৫, মেডিসেন অফিস, ৪৭ নম্বর সড়কে জেনিটিক, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, ১১৩ নম্বর সড়কের ২৩/বি প্লটে হলিডে গেস্ট হাউস, ১০৩ নম্বর সড়কে ওয়েস্টার্ন গ্রিল রেস্টুরেন্ট, এমআর বেকারি এ্যান্ড কনফেকশনারি, ১০৯ নম্বর সড়কে ক্যালিফোর্নিয়া ফ্রিড চিকেন এ্যান্ড পেস্ট্রি সোপ, হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট, ১০৯ নম্বর সড়কে হ্যান্ডিক্রাপটের দোকান, ১১১ নম্বর সড়কে কার শো-রুম, তুর্কিস হোপ স্কুল, ১০৩ নম্বর সড়কে পিংক সিটি বাণিজ্যিক ভবন। এছাড়া গুলশান-২ নম্বরের ৪৬ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর প্লটে স্থাপন করা হয়েছে ডেল্টা, সিডকোসহ তিনটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। আছে কোয়ালিটি ফ্যাশন, ৩৩ নম্বর প্লটে আছে এ্যাপলাইন গার্মেন্টস ও নিরালা গার্মেন্টস। এছাড়া ৫১ নম্বর সড়কের ৪২ নম্বর প্লœটে আছে এডনিস গার্মেন্টস, ৬ নম্বর প্লটে ডিএসএল গার্মেন্টস নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ৭১ নম্বর সড়কে পাকিস্তান হাইকমিশনের গাড়িতে রাস্তা বন্ধ থাকে সব-সময়। একই সড়কে এসেট ডেভেলপমেন্টের কারণেও রাস্তা বন্ধ করে অবৈধ পার্কিং করা হচ্ছে নিয়মিত। একই সড়কে ১২ নম্বর বাড়িতে ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে, ৯ডি নম্বর বাড়িতে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট। ৭৫-৭৭ নম্বর সড়কটি অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। ৭৪ নম্বর সড়কের নেদারল্যান্ড এম্বেসির যত্রতত্র পার্কিংসহ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের কারণে আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ৭৯ নম্বর সড়কে রাশিয়ান এম্বেসি ও ইতালিয়ান এম্বেসির ফুটপাথ দখল করে চেকপোস্ট নির্মাণ ও যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যার। ৯২ নম্বর সড়কে প্রসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিসহ বিএফসির অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজটসহ সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক নানা জটিলতার। গুলশান এ্যাভিনিউ এলাকায় ব্যাংক আল আরাফাহ, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনসহ স্কলাস্টিকা স্কুলের কারণে যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ৭৯ নম্বর সড়কের মাথায় স্কলাস্টিকাসহ আরেকটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারণে এই রাস্তা দিয়ে যারা চলাচল করেন তারা শান্তিতে নেই। গুলশান-১ ॥ তিন নম্বর সড়কে আছে কেএফসি, আছে পিজা হাট। মূল সড়কের পাশেই এরকম অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক নম্বর গোল চত্বরের পাশে নাভানা টাওয়ার, হাবিব মার্কেট, উদয় টাওয়ার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কমতি নেই। মার্কেটে নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। ৮, ১০, ৪২, ১২৩, ১৩৮ নম্বর সড়কে আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে বেশিরভাগ গলির মুখে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেখা গেছে। এলাকার শিশুদের জন্য খেলার মাঠসহ বিনোদনেরও নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। শতকরা ৯৫ ভাগ পরিবারের শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। আবাসিক/অনাবাসিক এলাকা গুলশানে আবাসিক অনাবাসিক এলাকা চিহ্নিত করে সর্বশেষ ২০০৮ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজউক। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার গুলশান শূটিং ক্লাব থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হবে বনানী কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ, গুলশান-বনানী সেতু থেকে গুলশান-বারিধারা সেতু পর্যন্ত উভয় পাশের প্লটসমূহ বাণিজ্যিকসহ অনাবাসিক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এছাড়া গুলশানের সকল এলাকা আবাসিক। যেখানে কোনভাবেই অনাবাসিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। রাজউকের পক্ষ থেকে কয়েক দফা এমন বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক এলাকায় অনাবাসিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাজউক। রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত অনাবাসিক এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো অনাবাসিক এলাকাতেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আবাসিক প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক হিসেবে অবৈধভাবে রূপান্তর করা হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার কথা জাানান কর্মকর্তারা। ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গুলশানের আবাসিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুলশান সোসাইটির পক্ষ থেকে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। এছাড়া একই বছরের একই দিনে গুলশানের অবৈধ স্থাপনার কারণে সৃষ্ট যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। চিঠিতে সমস্যার সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হলেও পরিবর্তন আসেনি। গুলশান সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সিএম শফি সামি জনকণ্ঠকে এ প্রসঙ্গে জানান, গুলশানকে রক্ষায় ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হলেও এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।
×