ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্র চিত্রকর্মে সুন্দর ফিরে দেখা

গাঢ় বাদামী ও কালো রঙের শিল্পভাষা, অমূল্য স্মারক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ মে ২০১৬

গাঢ় বাদামী ও কালো রঙের শিল্পভাষা, অমূল্য স্মারক

মোরসালিন মিজান ॥ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রবীন্দ্রনাথ আশ্চর্য প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সঙ্গীতেও তার তুলনা কেবলই তিনি। আরও বিস্ময়কর যে, অত্যন্ত নিখুঁত এক চিত্রকরের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! প্রচুর ছবি এঁকেছেন। মনের যত ভাবনা, খেয়াল, কবিতা উপন্যাসে যেমন, রংতুলিতেও ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। অমূল্য শিল্পকর্ম একই সঙ্গে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। বার বার দেখা ছবি বটে। নতুন করে দেখতে ইচ্ছে করে। আর সে সুযোগটিই করে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এখন রবীন্দ্রনাথের আঁকা চিত্রসম্ভার। মূল ছবি না হলেও, দেখে মন ভরে যায়। শনিবার পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, পুরোটাজুড়ে রবীন্দ্রনাথ। নিজের আঁকা ছবির রেপ্লিকা কবিগুরুর শিল্পী প্রতিভাকে তুলে ধরছে। আছে বিভিন্ন আলোকচিত্র। নিজের হাতে লেখা চিঠির মূলকপি সংরক্ষিত আছ জাতীয় জাদুঘরে। ব্যবহার করা হুঁকো, বয়াম রাখা হয়েছে। সাজানোটা এত সুন্দর যে, খুব সহজেই একাত্ম হওয়া যায়। কবিগুরুর আঁকা ছবি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়েছে। একপাশে কেবল নারী মুখ। চিত্রকর তার কল্পনায় নারীদের স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষা দিয়েছেন। কখনও লাল শাড়িতে অপূর্ব হয়ে ওঠা রমণী। কখনও জানালার পাশে বসে থাকা নারীকে অনুসরণ করে তার রংতুলি। নৃত্যনাট্যের চরিত্রগুলোকেও অসাধারণ এঁকেছেন। কাছাকাছি দূরত্বে কবিগুরুর আঁকা বেশকিছু প্রতিকৃতি। মুখ যেমন এঁকেছেন, তেমনি আছে মুখোশ। নিজের আঁকা রবীন্দ্র প্রতিকৃতিগুলোও অদ্ভুত ব্যঞ্জনা নিয়ে সামনে আসে। পাশাপাশি সাজানো প্রতিকৃতিগুলো রবীন্দ্রনাথের মুখের ছবি নয় শুধু, মনে হয়, মনেরও। পাশেই জ্যামিতিক চিত্রকর্ম। তার পাশে ফুলের কী যে মিষ্টি হাসি! প্রকৃতিপ্রেমী রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় নানা রকমের ফুলের কথা এসেছে। আর রং-রূপ নিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে চিত্রকর্মে। প্রাণিকুলের ছবিগুলোও যেন ছবি নয় শুধু। ভরপুর প্রাণ! বিশেষ করে তার আঁকা পাখিরা দারুণ নজর কাড়ে। ফিগারেটিভ কাজের পাশাপাশি আছে বিমূর্ত ভাবনার বিস্তার। এখানে রবীন্দ্রনাথকে পরিপূর্ণ শিল্পী হিসেবে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ সাধারণত কলমের কালি ব্যবহার করেছেন। গাঢ় বাদামী ও কালো রঙের প্রতি বিশেষ টানও লক্ষ্যণীয়। প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে বেশকিছু আলোকচিত্র। এখান থেকে বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে নেয়া যায়। দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো বিশ্বকবির জদ্বিখ্যাত বন্ধুদেরও দেখা মেলে এক ফ্রেমে। আছে তার কাটাছেঁড়া করা পা-ুলিপির কপি। গীতবিতানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক রচনা বই আকারে আছে। সব মিলিয়ে বেশ একটি আয়োজন। আরও অনেকের মতো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও মিলনায়তনে প্রবেশ করেই পুরোটা ঘুরে দেখেন। তারপর বিস্ময় প্রকাশ। বলেন, রবীন্দ্রনাথ কোনদিকে যে কাজ করেননি! সত্যি হিসাব পাওয়া মুশকিল। চমৎকার বিষয় এই যে, তিনি জীবনসায়াহ্নে এসেও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেননি। বরং ৬৩ বছর বয়সে শুরু করেন ছবি আঁকা। তার বলাটি হচ্ছেÑ সব সময় কাজ করে যাও। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে কাজ নেই। সে যখন আসার, আসবে। কবিগুরুর জীবন-তৃষ্ণা ছিল। যাদের এ তৃষ্ণা থাকে তারা সব সময় নবীন থাকেন। মানুষের রুচি অনবরত পরিশীলিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, রুচির বিকাশে এ ধরনের আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। রবীন্দ্রনাথের আঁকা মূল ছবি সংগ্রহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। জবাবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা কবিগুরুর আঁকা মৌলিক চিত্রকর্ম সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এখন অনেক ফেইক ছবিও বাজারে চলে এসেছে। নিশ্চিত না হয়ে কেনা যাবে না। দামও অনেক। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথকে চিন্তায়-চেতনায় সংগ্রামে সঙ্কটে ধারণ করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তার সম্পর্কে সার্বিক ধারণা দিতে পারলে আমাদেরও ভাল লাগবে। রবীন্দ্র চিত্রপ্রদর্শনী বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×