ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহের তীর ধর্মীয় উগ্রপন্থী ও সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের দিকে

বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ মে ২০১৬

বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১৪ মে ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে এবার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষুর নাম মং শু ইউ (৭০)। টেকনাফে আনসার কমান্ডার খুন ও অস্ত্র লুটের ১২ ঘণ্টার মাথায় বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সন্দেহের তীর ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দিকেই। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারির ওপর চাকপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। মন্দিরের ভেতরেই মং শু ইউর লাশ পাওয়া যায়। তিনি চাকপাড়া এলাকার মৃত অংথোয়াই চাকের ছেলে। সূত্র জানায়, ভোর পাঁচটায় পুত্রবধূ মানুংচিং চাক শ্বশুরকে ভাত দিতে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। কাঠের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরে শোয়া অবস্থায় ঘাড়ের পেছনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কারও সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোন শত্রুতা ছিল না বলে দাবি করেছেন নিহত ভিক্ষুর পরিবার। স্থানীয়রা জানায়, ওপর চাকপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরটি দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্দিরের নির্জন স্থানে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের অংশ হিসেবে তিনি দুই বছর ধরেই সেখানে ধ্যান করছিলেন। তিনি মন্দিরে একাই থাকতেন। ওপর চাকপাড়ার বাসিন্দা মং বাচিং চাক জানান, তিনি এলাকায় বাইট্যা মছু নামে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন, সহজ-সরলমনা মানুষ হওয়ায় এলাকার সবাই তাকে ভালবাসতেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরোহিত ও খ্রিস্ট ধর্মযাজক হত্যাকা-ের সঙ্গে এই ঘটনার কোন মিল খুঁজে পাওয়া গেছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার সেকেন্ড অফিসার কাজী আহসান বলেন, মিল পাচ্ছি, আমাদের সন্দেহের তালিকায় আনসারউল্লাহ বাংলাটিম থেকে শুরু করে অনেককে সন্দেহ করছি। তবে স্থানীয়রা মনে করছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য যে কোন মৌলবাদী গোষ্ঠী এই হত্যাকা- ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে দেশে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনকে সন্দেহের বাইরে রাখছে না স্থানীয়রা । এদিকে ঘটনার পর বাইশারি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আনিসুর রহমান, সহকারী ইনচার্জ উমর ফারুকসহ নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো ও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার পরপরই আতঙ্কিত ধর্মগুরুদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও বিজিবির ‘টহল জোরদার’ করা হয়েছে। বান্দরবানের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার ঘটনা এই প্রথম। তবে এই বৃদ্ধ ভিক্ষুকে কেন হত্যা করা হলো সে বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
×