ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ মার্কিন মিডিয়ার

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৪ মে ২০১৬

পাকিস্তানকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ মার্কিন মিডিয়ার

অনলাইন ডেস্ক॥ পাকিস্তানকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করতে শুরু করেছে মার্কিন মিযিয়া। পাকিস্তান বিরোধী মতামত ক্রমশ তীব্র হচ্ছে আমেরিকায়। এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের অধিকাংশই পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে আমেরিকার সবচেয়ে ‘প্রতারক এবং বিপজ্জনক’ সঙ্গী বলে উল্লেখ করা হল। মার্কিন মিডিয়া মনে করে অবিলম্বে পাকিস্তানকে সব রকমের সাহায্য দেওয়া বন্ধ করা উচিত। পাকিস্তান যে আমেরিকার সব মহলে সব সময় প্রশংসিত হয়, তা নয়। কিন্তু আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তানের এত কড়া সমালোচনা সচরাচর শোনা যায় না। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের দ্বিচারিতা আমেরিকার প্রশাসনকে দীর্ঘদিন ধরেই হতাশ করছে এবং পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। ওয়াশিংটন এখন চেষ্টা করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উপর চাপ বাড়াতে।’’ ১৫ বছর ধরে আফগানিস্তানে লড়াই চালিয়েও য়ে তালিবানদের নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, তার জন্য পাকিস্তানই মূলত দায়ী বলে আমেরিকা এখন মনে করছে। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মনোভাব এখন পাকিস্তান সম্পর্কে কী রকম, সম্পাদকীয় প্রতিবেদনটি থেকে তা বেশ স্পষ্ট। তালিবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমেরিকা পাকিস্তানকে বার বার চাপ দিলেও যে পাকিস্তান তা করেনি, তা এখন ওয়াশিংটনের কাছে পরিষ্কার। বছর খানেক আগে চাপ খুব বাড়ায় আফগান সীমান্তে তালিবানদের বিরুদ্ধে অভিযানে কিছু দিনের জন্য নেমেছিল পাক সেনা। তবে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে কোনও ভাবেই আঘাত করেনি পাকিস্তান। তাই সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে পাকিস্তানের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে ৩৩০০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য দিয়েছে আমেরিকা। জঙ্গি দমনে সক্রিয় হওয়ার জন্য বার বার বলেছে। কিন্তু পাকিস্তান কিছুতেই সক্রিয় হয়নি। এই কারণেই পাকিস্তানকে আমেরিকা ও আফগানিস্তানের জন্য ‘প্রতারক এবং বিপজ্জনক’ দেশ হিসেবে মনে করছে মার্কিন মিডিয়া। ওবামা প্রশাসন এত দিন পর কেন কঠোর হচ্ছে, আগে কেন কড়া পক্ষেপ নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত কমিটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসে। কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্মার সম্প্রতি পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন। মার্কিন নাগরিকদের করের টাকা পাকিস্তানকে ঋণ হিসেবে আর দেওয়া হবে না, সাফ জানান কর্কার। এই ঋণ আটকে যাওয়ায় আমেরিকার কাছ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও কিনতে পারছে না পাকিস্তান। পাকিস্তানের মতো দেশকে ঋণ এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করার প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়ে কর্কার যথার্থ কাজ করেছেন বলে আমেরিকার বৃহত্তম সংবাদপত্রটির মত। আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব যাতে না বাড়ে, তার জন্যই তালিবান আর হাক্কানিকে বাড়তে দিচ্ছে পাকিস্তান। মনে করছে ওয়াশিংটন। পাকিস্তানের সরকার জঙ্গি দমনে কখনও সখনও উৎসাহ দেখালেও ক্ষমতাবাদ সেনাবাহিনী এবং আইএসআই-এর চাপেই যে তা সম্ভব হচ্ছে না, মার্কিন প্রশাসন তা এখন বেশ স্পষ্ট করেই বলছে। জঙ্গি দমনে তাই এ বার শুধু পাক সরকার নয়, পাক সেনার উপরেও চাপ বাড়ানোর নীতি নিয়েছে আমেরিকা। না হলে ‘প্রতারক এবং বিপজ্জনক’ সঙ্গীকে ঝেড়ে ফেলতেও যে আর দ্বিধা করবে না আমেরিকা, সেই ইঙ্গিত হোয়াইট হাউজের আশেপাশে এখন বেশ স্পষ্ট।
×