ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর পরিশ্রম, ভিডিও বিশ্লেষণ করেই এ বাঁহাতির বিরুদ্ধে সফল দিল্লীর ব্যাটসম্যানরা; টানা ম্যাচ ;###;খেলার চাপ ও ক্লান্তি প্রভাব ফেলেছে মুস্তাফিজের ওপর?

মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখছেন মুস্তাফিজ!

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৪ মে ২০১৬

মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখছেন  মুস্তাফিজ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চাপ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল। টানা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার মধ্যেই আছেন মুস্তাফিজুর রহমান। টি২০ বিশ্বকাপ খেলে কয়েকদিনের বিরতি দিয়েই আবার টানা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) মতো উত্তেজনাপূর্ণ টি২০ ক্রিকেট আসরে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন টানা ১১ ম্যাচ। ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং এবং মিতব্যয়িতা দেখিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এক বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ২০ বছর বয়সী এ তরুণের ওপর চাপটা বেশিই হয়ে গেছে সম্ভবত। সেই চাপটার প্রভাব পড়েছে বৃহস্পতিবার দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে। এদিন মুস্তাফিজকে চেনাই যায়নি তার চিরাচরিত রূপটা একেবারেই না দেখতে পাওয়ার কারণে। ৪ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৩৯ রান। ম্যাচের দ্বিতীয় সর্বাধিক খরুচে বোলার কিনা এ কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। এ কারণে মুদ্রার উল্টোপিঠটাও দেখে ফেললেন তিনি। যদিও ম্যাচশেষে দিল্লীর পক্ষ থেকে দাবি মুস্তাফিজকে বেশি বেশি ভিডিও ফুটেজে বিশ্লেষণ করেই তার রহস্য উন্মোচন করেছে তারা এবং সেজন্যই তার বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিং করতে পেরেছে তারা। আসল কথাই হচ্ছে বেশি চাপ। প্রত্যাশার চাপটা যেমন বেড়েছে তেমনি টানা ম্যাচ খেলার পরিশ্রমটাও প্রভাব ফেলেছে ‘ফিজের’ ওপর। সেই চাপটা যাতে কম থাকে তরুণ এ বাঁহাতি ‘সেøায়ার’ ও ‘কাটার’ মাস্টারের ওপর সেজন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) বেশ সতর্ক। সেজন্য ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) টি২০ আসরে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রেখেছিল। সঙ্গে ছিল সামান্য ইনজুরি সমস্যাও। ওই ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ টি২০ আসরের শেষ কয়েকটি ম্যাচ এবং টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম দিকে কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। তবে বিশ্বকাপে মাঠে নামার পর থেকেই আর বিশ্রাম নেয়ার ফুরসত পাননি। আইপিএলে সানরাইজার্সের হয়ে খেলছেন অপরিহার্য ও নির্ভরযোগ্য একজন বোলার হিসেবে। পুরো বোলিং বিভাগই মুস্তাফিজ নির্ভর হয়ে পড়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির। তবে টানা দুই ম্যাচে তেমন কিছুই করতে পারলেন না ‘ফিজ’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ তরুণ। ৩ চার ও ২ ছক্কা যেমন খেয়েছেন তেমনি ডট বল করতে পেরেছেন মাত্র ৬টি। এটি এখন পর্যন্ত চলতি আইপিএলে মুস্তাফিজের সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের দৃষ্টান্ত। রাস্তাটা দেখিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। আইপিএলে প্রথমবারের মতো নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন মুস্তাফিজকে। গত মাসের শেষে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে দুই ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। মুস্তাফিজকে একাই চার চার মেরেছিলেন স্মিথ। কীভাবে তিনি ভয়ানক মুস্তাফিজকে সফলভাবে মোকাবেলা করেছিলেন, সেই ভিডিওগুলো এখন মহামূল্যবান হয়ে উঠেছে ব্যাটসম্যানদের কাছে। সেগুলো বার বার দেখেই তাকে ভালভাবে খেলার কৌশল রপ্ত করেছিল দিল্লী। এমনটাই দাবি করেন দিল্লীর অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস। অথচ চলতি আইপিএলের শুরু থেকে দারুণ বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করে গেছেন মুস্তাফিজ। রীতিমতো রহস্যে পরিণত হয়েছিলেন ব্যাটসম্যানদের জন্য। তার সেøায়ার, কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বিরাট কোহলি, শেন ওয়াটসন, মিচেল মার্শ, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের মতো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানরা। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে আন্দ্রে রাসেলকে যেভাবে ভূপাতিত করেছিলেন, তা এখনও চোখে লেগে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু আইপিএলের সর্বশেষ দুই ম্যাচেই সফলতা পাননি মুস্তাফিজ। পুনে সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে উইকেট না পেলেও অবশ্য কৃপণতা দেখিয়েছিলেন (৪ ওভারে ২৬ রান)। এ বিষয়ে অলরাউন্ডার মরিস ম্যাচ শেষে বলেন, ‘স্মিথ তাকে কীভাবে খেলেছিলেন, সেটা বিশ্লেষণের জন্য আমরা অনেক সময় দিয়েছি। গত ম্যাচে অশ্বিনও তাকে ভালমতোই খেলেছিলেন। অনেকেই জানে না, কিন্তু পর্দার পেছনে আমাদের অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক বিশ্লেষণের পর আমরা একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। আর সৌভাগ্যবশত, সেটা কাজে লেগে গেছে।’ কিন্তু ১১ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে এখনও সর্বাধিক উইকেট শিকারির তালিকায় পাঁচে মুস্তাফিজ। টানা দুই ম্যাচ খারাপ করলেও তার সামর্থ্য ও বিস্ময়কর প্রতিভার কথাটাও বললেন মরিস, ‘মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি যা করছেন, সেটা অবিশ্বাস্য। তার বোলিং খুবই ভীতিকর। প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে এসে তিনি খুবই ভাল করছেন।’ আইপিএল শেষেই মুস্তাফিজ যাবেন ইংল্যান্ডে। এবার সাসেক্স কাউন্টি ক্লাব তাকে দলে ভিড়িয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই কাউন্টি খেলতে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শুধু এই টানা খেলার চাপ মাথায় আসার কারণে। মুস্তাফিজও নাকি নিকটজনদের বলছেন বিশ্রাম নিতেই চান তিনি। অবশ্য, সাসেক্স আশাবাদ জানিয়েছে মুস্তাফিজকে পাওয়ার। তাহলে বিশ্রাম এবং টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি থেকে মুক্তির সুযোগ কোথায়? এত চাপ নিতে পারবেন ২০ বছর বয়সী এ তরুণ?
×