ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের প্রয়াণবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৪ মে ২০১৬

কথাশিল্পী শওকত  ওসমানের  প্রয়াণবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজমনস্ক সব্যসাচী লেখক শওকত ওসমান। তাঁর সাহিত্য রচনায় বিষয় হিসেবে নানাভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা। আজ শনিবার স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ বরেণ্য এই কথাশিল্পীর ১৮তম মৃত্যুবার্ষির্কী। ১৯৮৮ সালের ১৪ মে তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। তাঁর প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার হলে স্মরণসভার আয়োজন করেছে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ। স্মরণানুষ্ঠানে পিতৃস্মৃতিচারণ করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। ভাষা সংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু। বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালীদের একজন। মূলত উপন্যাস ও গল্পের মাধ্যমে পাঠকের মনে বোধ সৃষ্টির পাশাপাশি সমৃদ্ধ করেছেন এদেশের সাহিত্য ভুবনকে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী এই মানুষটি আজন্ম শোষকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন শোষিতের কথা। শুধু তাই নয়, আজীবন সংগ্রাম করেছেন দেশদ্রোহী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে। তাঁর রচিত উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি আজও যে কোন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনজাগরণের দিশারী। তাঁর বহুল আলোচিত ও সমাদৃত জননী উপন্যাসটি ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যে। শওকত ওসমান প্রধানত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতি কুড়ান। তবে এর বাইরেও প্রবন্ধ, নাটক, রম্য রচনা, স্মৃতিকথা ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনায়ও রেখেছেন মুনশিয়ানার ছাপ। অনুবাদেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য উপন্যাস, গল্প ও নাটক অনুবাদ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলোÑ জননী, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, চৌরসন্ধি, রাজা উপাখ্যান, জাহান্নাম হইতে বিদায়, রাজপুরুষ, নেকড়ে অরণ্য, আর্তনাদ ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, মনিব ও তাহার কুকুর, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি। লিখেছেন স্মৃতিকথা। এগুলো হলোÑ স্বজন সংগ্রাম, কালরাত্রির খ-চিত্র, অনেক কথন, গুডবাই জাস্টিস-মাসুদ, উত্তর পূর্ব ও মুজিব নগর। নাটকের মধ্যে রয়েছে আমলার মামলা ও পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা। সৃষ্টিশীলতার নেশায় সব সময় নিজেকে বিভোর রেখেছিলেন শওকত ওসমান। সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরমেন্স পদক, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় জন্ম নেন শওকত ওসমান। পারিবারিকভাবে শেখ আজিজুর রহমান নাম রাখা হলেও পরবর্তীতে সাহিত্য ভুবনে শওকত ওসমান নামে পরিচিত হন। বাবা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও মা গুলজান বেগম। ১৯৩৮ সালে সালেহা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁর পাঁচ ছেলে হলেন বুলবন ওসমান, আশফাক ওসমান, ইয়াফেস ওসমান, তুরহান ওসমান (প্রয়াত), জাঁ-নেসার ওসমান ও এক মেয়ে আনফিসা আসগর। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের প্রভাষক ও ঢাকা কলেজে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত কথিকা পাঠ করেছেন। জীবন ও মৃত্যুর মাঝের দীর্ঘ সময় বিচরণ করেছেন সাহিত্যে আঙিনায়। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ভা-ারকে।
×