ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদের হাতেই থাকছে জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৪ মে ২০১৬

এরশাদের হাতেই থাকছে জাতীয় পার্টির  সর্বময় ক্ষমতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হলেও দল পরিচালনায় সর্বময় ক্ষমতা থাকছে চেয়ারম্যানের (এইচ এম এরশাদ) হাতেই। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে দুটি পদ। চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ চার গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন পরিবর্তন আসছে না। দলের তিনটি সর্বোচ্চ পদই এরশাদের পরিবারকেন্দ্রিক। এসবের মধ্যেই আজ শনিবার দীর্ঘ সাত বছর পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিরোধী দল জাপার অষ্টম জাতীয় সম্মেলন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনে দলছুটসহ এরশাদবিরোধী সব নেতাকেই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। স্বপদে বহাল থাকছেন বেশিরভাগ সংসদ সদস্য। এরশাদের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাফর) অংশ। এছাড়াও এরশাদের নেতৃত্বে জাপার অপর তিনটি অংশকে নিয়ে একসঙ্গে পথ চলার অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে। চার পদে পরিবর্তন আসছে না ॥ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবারের সম্মেলনে দলের গুরুত্বপূর্ণ চার পদে পরির্বতন আসছে না। সম্মেলন মানেই নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু সে রকম কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। শীর্ষ চার পদ ছাড়া অন্যান্য কিছু পদে পরিবর্তন আসবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্বয়ং এরশাদই নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে পরিবর্তন হবে না। এমপিদের কি হবে? ॥ এবারের কাউন্সিলে দলের এমপিদের ভাগ্যে কি আছে? এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। এরশাদের অনুসারীদের মধ্যে অনেকের মতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার। আবার কারো মত, সব ভুলে এক হয়ে পথ চলার। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জাপার ৪০ এমপির ৩৪ জনই রওশনের অনুসারী। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রওশনের সঙ্গে তারা আছেন। অনেক আহ্বানের পরও তাদের কাছে টানতে ব্যর্থ হন এরশাদ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় দলের বৈঠকে রওশনের পক্ষ নিয়ে এরশাদের সভা-সমাবেশ বর্জনের ঘোষণা দেন এমপিরা। তাদের দাবি ছিল, রওশনকেও কো-চেয়ারম্যান করতে হবে এবং জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। এরশাদ শুধু প্রথম দাবিটি মেনে নিয়েছেন। জিয়াউদ্দিন বাবলুকে পদ ফিরিয়ে দেননি। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার বিরোধিতা ও এরশাদকে বাদ দিয়ে রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় গত ১৯ জানুয়ারি মহাসচিবের পদ হারান জিয়াউদ্দিন বাবলু। জাতীয় পার্টিতে এক হচ্ছে জাফরপন্থীরা ॥ এরশাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে নতুন করে জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন কাজী জাফর আহমেদ। যোগ দেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে। সর্বশেষ কাজী জাফরের মৃত্যুর পর দলের নেতারা অনেকটাই অভিভাবক শূন্য। এই প্রেক্ষাপটে জাফরপন্থীদের নিজের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে আজকের সম্মেলনে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনÑক্ষমতা এরশাদের হাতেই ॥ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির অন্তত পাঁচ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বেশ কয়েকটি ধারা গঠনতন্ত্রে যুক্ত হয়েছে। সংশোধনী হিসেবে গঠনতন্ত্রে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে যুক্ত হয়েছে রওশন ও জিএম কাদেরের নাম। পাশাপাশি সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান পদটিও নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি জিএম কাদেরকে কো চেয়ারম্যান করে দলের ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ঘোষণা করার পর নানা বিতর্ক শুরু হয়। গত ২৪ এপ্রিল স্বামীর স্বৈরাচারী আচরণের সমালোচনা করে রওশন অভিযোগ করেন, এরশাদ জাপাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন। গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারায় পাওয়া ক্ষমতায় যাকে খুশি পদোন্নতি দিচ্ছেন, যাকে খুশি বহিষ্কার করছেন। দলের সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। পরদিন এরশাদও রওশনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
×