ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবি মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কট মোকাবেলার আধুনিক যন্ত্র

ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা বেড়েছে ৫ গুণ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৪ মে ২০১৬

ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা বেড়েছে  ৫ গুণ

এমদাদুল হক তুহিন ॥ চলতি বোরো মৌসুমে আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হাওড় এলাকায় তলিয়ে যায় মাঠের পর মাঠ। মৌসুমের শেষদিকে এসে ফসল সংগ্রহে মহাবিপর্যয়ে পড়েন কৃষক। কেবল হাওড় এলাকা নয়, দেশের সর্বত্রই কৃষি শ্রমিক সঙ্কটহেতু নির্দিষ্ট সময়ে মাঠের ফসল ঘরে তুলতে বেগ পোহাচ্ছেন কৃষক। আর এ সমস্যা সমাধানে অল্প সময়ে সাশ্রয়ী ব্যয়ে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র রিপারের প্রতি কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। মাঠে মাঠে চলছে রিপারের প্রদর্শনী। চলতি মৌসুমেই ৭৭২ মাঠ দিবস ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে যন্ত্রটির ব্যবহার সম্পর্কে কৃষককে দেয়া হয়েছে সঠিক দিকনির্দেশনা। শুধু তাই নয়, আকস্মিক বিপর্যয়ের কথাটি মাথায় রেখে কৃষকের দোরগোড়ায় কিভাবে যন্ত্রটি পৌঁছে দেয়া যায়, তা নিয়েও চলছে পরিকল্পনার ছক। আর গত রবি মৌসুমের বিপরীতে চলতি বোরো মৌসুমেই রিপারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ গুণ। গত রবি মৌসুমে ৩০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তায় কৃষক মাত্র ১০০ রিপার কিনলেও চলতি মৌসুমে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০০। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বোরো ধানের কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। হাওড় এলাকায় বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তারতম্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমটিতে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুহু জনকন্ঠকে বলেন, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমে ৮০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওড় এলাকায় ক্ষতির কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিছুটা এদিক সেদিক হবে- তবে হয়ত তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছবেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মারাত্মক কোন সমস্যা না হলে এবং ৭-৮ দিন যদি ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যতে ধান কর্তনে কৃষক যাতে কোনরূপ সমস্যায় না পড়েন, অল্প অর্থে উৎপাদিত ধান সংগ্রহ করতে পারেনÑসে লক্ষ্যেই ধান কর্তনে রিপারের প্রতি কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ মোঃ নাজিম উদ্দিন। কৃষি যন্ত্রপাতি বিশেষজ্ঞদের ধারণাও একই রকম। অল্প সময়ে ধান কর্তন সম্ভব হলে আকস্মিক বিপর্যয়ের কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। কৃষি যন্ত্রপাতি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী সুরজিৎ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, ধান ও গম কাটার ক্ষেত্রে রিপার একটি নতুন প্রযুক্তি। অল্প সময়ে যন্ত্রটি দিয়ে ফসল কাটার জুড়ি নেই। প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে যন্ত্রটি ব্যবহারে খরচও কম। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় যন্ত্রটি কৃষকের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ১৯৩ উপজেলায় ৭৭২ মাঠ দিবস ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, হালুয়াঘাট, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি ও সিলেটে চলতি মৌসুমে মাঠ দিবস ও যন্ত্রটির প্রদর্শনী হয়। রিপারের সুবিধা ॥ রিপারে জ্বালানি খরচ খুবই কম। যন্ত্রটি দিয়ে ধান কাটতে ঘণ্টায় ১ লিটারেরও কম জ্বালানি তেলের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া হেলে পড়া ধানও কাটা যায়। শুধু হেলে পড়া ধান নয়, জমিতে কিছুটা পানি থাকলেও যন্ত্রটি কার্যকর। এছাড়া এই যন্ত্র দিয়ে কাটা যায় গম। যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কাটা ধান বা গম ডান পাশে সারিবদ্ধভাবে পড়ে, যাতে সহজে আঁটি বাঁধা যায়। যন্ত্রটি স্থানান্তরেও রয়েছে সহজ সুবিধা।
×