ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাশুড়ি ননদের জ্বালা থেকে বাঁচতে ক’দিনের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৪ মে ২০১৬

শাশুড়ি ননদের জ্বালা থেকে বাঁচতে ক’দিনের স্বস্তি

আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য ও রূপের নাম নাইওর। এই নাইওর শব্দের সঙ্গে পরিচিত কম বেশি সবাই। স্বামীর বাড়ি থেকে কিছুদিনের জন্য বধূকে বাপের বাড়ি নেয়ার রেওয়াজই হচ্ছে নাইওর। এই নাইওরকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক গল্প ও কবিতাসহ বাংলা চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। রচিত হয়েছে অনেক গান। যুগে যুগে এসব গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে নদী ও খাল বিল শুকিয়ে যাওয়ায় নাইওর যাত্রার চেহারা বদলে গেছে। একসময় নৌকায় করে বধূর বাপের বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়লেও এখন আর এটি নেই বললেই চলে। গরুর গাড়ি ও পালকিতে করে নাইওর যাত্রাও হারিয়ে গেছে। এসবের বদলে আধুনিক যানবাহনে বিশেষ করে ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে দেখা মেলে নাইওর যাত্রার। নতুন ধান কাটার পর কিংবা পূজা ও উৎসব পার্বণে এখনও এই নাইওর যাত্রার রেওয়াজ রয়েছে। এসবের বাইরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিবছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম জয়ন্তী উৎসবকে ঘিরে নতুন আদলে নাইওরের দেখা মিলেছে। ত্রিশাল ও এর আশপাশে বিয়ে সূত্রে আত্মীয়তা রয়েছে এমন সবাই এই নজরুল জন্মজয়ন্তীর উৎসব উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি কিংবা বাপের বাড়ি বেড়াতে আসে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জেলা প্রাচীন ময়মনসিংহ অঞ্চলে এক সময় ছিল হাওড় বাঁওড় নদীনালায় ভরা। গ্রামগঞ্জের মানুষের অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। ‘বর্ষায় নায়ে, শুকনায় পায়ে’- এ ছিল গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার চেহারা। আউশ আর আমনই ছিল একমাত্র ফসল। তার ওপর বর্ষায় বন্যায় আর খরায় ফসলহানি ছিল নিয়মিত ব্যাপার। এরকম অবস্থায় কন্যা দায়গ্রস্ত বাবার সুপাত্রে কন্যাদান ছিল অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। যদিও এখন সেদিন আর নেই। সে সময়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব বধূর কল্প কাহিনী নিয়ে রয়েছে নানা গল্প, কবিতা, নাটক ও বাংলা চলচ্চিত্র। তিতাস একটি নদীর নাম গল্প ও চলচ্চিত্রেও আবহমান বাংলার সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রকাশিত ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থে খগেশ কিরণ তালুকদার রচিত ‘ময়মনসিংহের প্রেক্ষাপটে লোকায়ত শিল্পকলায় উল্লেখ আছে- বোন ভাগ্নিদের নাইওর আনার কাজে মধ্যবিত্ত পরিবারে এক সময় পানসী নৌকার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। এই পানসীর সঙ্গে এক সুতোয় গাঁথা ছিল ময়মনসিংহ অঞ্চলের মা বোনদের স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে ঘিরেই অসংখ্য মেয়েলি গীতিতে পানসীর উল্লেখ রয়েছে। মৈমনসিংহ গীতিকার নায়িকা রূপবতীকে বনবাসে দিয়ে পানসী যখন ফিরে আসছে রূপবতীও তখন সেই সুরে কাঁদছে, ‘বাপের বাড়ির পানসীরে কোথায় চল্যা যাও, মায়েরে আগে খবর কইও আমার মাথা খাও।’ ময়মনসিংহ বহুরূপী নাট্য সংস্থার সভাপতি শাহাদাত হোসেন খান হীলু জানান, ওই সময়ে গ্রামের বধূরা বিয়ের পর বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকত। বিশেষ করে শ্বশুর শাশুড়ি ননদের অত্যাচারে হাঁফিয়ে ওঠা বধূর দেহে নাইওর যাত্রার মাধ্যমে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। তবে এখন দিন বদলে গেছে। তেমনি বদলেছে ব্যস্ত জীবনের নাইওর যাত্রার ধরণও। -বাবুল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে
×