ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরাসরি ডাম্পিংয়ে বাসার ময়লা ডাস্টবিনমুক্ত শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরী

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৪ মে ২০১৬

সরাসরি ডাম্পিংয়ে বাসার ময়লা ডাস্টবিনমুক্ত শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরী

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্মব্যস্ত নগরজীবনে ঘর থেকে বের হলেই রাস্তার পাশে গলির মুখে চোখে পড়ে উন্মুক্ত ডাস্টবিন। বিশুদ্ধ বাতাসের পরিবর্তে নাকে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। ডাস্টবিনের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় আবর্জনার স্তূপ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বিগত বছরগুলোতে এমন দৃশ্য চিরচেনা মনে হলেও দিন দিন এ দৃশ্যের অবসান ঘটছে। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর পাল্টাতে শুরু করেছে আবর্জনা অপসারণের দৃশ্যপট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডাস্টবিনমুক্ত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। তখন মানুষ বাসা বাড়ি থেকে বের হলে সড়কের পাশে কোন ডাস্টবিন দেখতে পাবে না। বাসা বাড়ি থেকে সরাসরি ডাম্পিংয়ে আবর্জনা নিয়ে যাবে সিটি করপোরেশন। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নগরীতে উন্মুক্ত ডাস্টবিন রাখব না। ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করব। প্রতিটি বাসায় দুটি করে বিন দেব। একটিতে পচনশীল, অপরটিতে অপচনশীল বর্জ্য রাখতে হবে। সেগুলো ভ্যানচালকরা বাসা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে জুলাই মাসে প্রাথমিকভাবে ৬টি ওয়ার্ডে এ প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমের অবশিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতেও এ পদ্ধতি চালু করা হবে। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সব ওয়ার্ড এ প্রকল্পের আওতায় চলে আসবে বলে তিনি জানান। চসিক মেয়র বলেন, এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল হবে। এতে ১০ লাখ বিন, ২ হাজার রিকশা ভ্যান প্রয়োজন হবে। ১০ হাজার টাকা করে রিকশাভ্যান চালকের বেতন ও বোনাস ধরলে খরচ হবে ২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। চসিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় প্রায় ১ হাজার ৩৫০টি ডাস্টবিন আছে। এসব ডাস্টবিনের অধিকাংশ বসানো হয় রাস্তা, খাল-নালা, ফুটপাথ অথবা আবাসিক এলাকার মুখে। এতে সড়কে যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি, পথচারীদের ফুটপাথ ব্যবহারে বিঘœতা, আবর্জনা থেকে উৎকট গন্ধ ও অনেক সময় আবর্জনা সড়কে উপচে পড়াসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হতো। করপোরেশন প্রতিদিন আবর্জনা পরিষ্কার করলেও কোথাও না কোথাও বর্জ্য থেকে যায়। তাছাড়া ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা নিয়ে গেলেও দুর্গন্ধ যায় না। অন্যদিকে ডাস্টবিনের আবর্জনা নগরীর বিভিন্ন খাল-নালায় গড়িয়ে পড়ে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। তাই এসব সমস্যা সমাধানে নগরী থেকে ডাস্টবিনগুলো উঠিয়ে দিয়ে ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। চসিক সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে নগরীর ছয়টি ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। প্রথম ধাপে খুব শীঘ্রই ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নম্বর শুলকবহর, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলী, ৩১ নম্বর আলকরণ ও ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে চালু করা হবে। ইতোমধ্যে এসকল ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ঘর ও দোকান চিহ্নিত করা হয়েছে। পযার্য়ক্রমে প্রতিমাসে ৭টি ওয়ার্ড করে সব ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি শৈবাল দাস সুমন বলেন, এবার ডাস্টবিনমুক্ত শহর হবে চট্টগ্রাম। সেবকরা প্রতিবাসা থেকে রিকশা ভ্যানের মাধ্যমে আবর্জনা সংগ্রহ করে গাড়িতে নিয়ে আসবেন। গাড়ি আবর্জনা নিয়ে চলে যাবে ডাম্পিং স্টেশনে। প্রাথমিকভাবে আমরা ছয়টি ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের ১ হাজার ৮০০ কর্মী প্রতিদিন গড়ে ১২শ’ টন আবর্জনা অপসারণ করেন। ডোর টু ডোর আবর্জনা অপসারণ করতে হলে জনবল দ্বিগুণ করতে হবে। আবর্জনা পরিবহনের গাড়িও বাড়াতে হবে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে শুরু করতে যাওয়া ছয়টি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে ঘর ও দোকান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে ভ্যান লাগবে ৩৮৪টি, সেবক লাগবে ৭৬৮ জন। ভ্যান গাড়ি সংগ্রহে করপোরেশনের নিজ অর্থের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। রমজানের মধ্যে ভ্যান গাড়ি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এর পরপরই ডোর টু ডোর আবর্জনা অপসারণ শুরু হবে।
×