ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিমিয়ার লীগ উদ্বোধনকালে বিসিবি প্রধান পাপন, প্রতিমাসে হকি ফেডারেশনকে দেয়া হবে ১৫ হাজার ডলার

জাতীয় হকি দলের কোচের বেতন দেবে বিসিবি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৩ মে ২০১৬

জাতীয় হকি দলের কোচের বেতন দেবে বিসিবি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাক্কা দুই মৌসুম পর অবশেষে আবারও টার্ফে গড়িয়েছে প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগের আসর। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ‘গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগ।’ এর মধ্য দিয়ে আবারও দেশের হকির সব পরাশক্তিগুলো একসঙ্গে খেলতে নামে। নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার হকিতে অংশ নেয়নি মোহামেডান, মেরিনার, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং। তাদের দাবি ছিল খাজা রহমতউল্লাহ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক থাকলে তারা কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। এমন অচলাবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার প্রচেষ্টাতেই দূর হয় সব সঙ্কট। গত বছরের অক্টোবরে রহমতউল্লাহ পদত্যাগ করলে (খাজাকে দেয়া হয় সহ-সভাপতির পদ) আবারও সরব হয়ে ওঠে হকি অঙ্গন। তবে এখানেই শেষ হয়ে যায়নি পাপনের কার্যক্রম। তিনি হকির অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে তৎপর হন। সবচেয়ে বড় সমস্যা জাতীয় দলের ভাল কোন বিদেশী কোচ না থাকা এবং কোচের বেতন পরিশোধে অক্ষমতা। পাপন প্রতিশ্রুতি দেন তিনিই বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) নিয়োগপ্রাপ্ত কোচের মাসিক বেতনের খরচ বহন করবেন বিসিবির পক্ষ থেকে। এ জন্য তিনি প্রতি মাসে ফেডারেশনকে ১৫ হাজার ডলার করে দেবেন। বৃহস্পতিবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে লীগের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং ঢাকা রেলওয়ে স্পোর্টিং ক্লাব। খেলা শুরুর আগে পাপন লীগের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি হিসেবে। তখন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি হকির অচলাবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নিই মাধ্যম হিসেবে। প্রথম কথা হচ্ছে আমি কিন্তু হকি বিশেষজ্ঞ নই। আমি সেভাবে হকির কোন উন্নয়নে ভূমিকা রাখছি না। আমার তরফ থেকে যতটা করা যায়, তা আমি করব। যারা হকি ফেডারেশনের কমিটিতে আছেন, তারাই সব রকম পরিকল্পনা করবেন। বিসিবি থেকে আমরা চেষ্টা করব আর্থিকভাবে তাদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে। আমার জানা মতে, জাতীয় দলের কোচ নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তারা অনেক দূর এগিয়েও গেছেন। আমার মনে হয় তারা শীঘ্রই কোচের বিষয়টা চূড়ান্ত করে ফেলতে পারবেন।’ পপান আরও বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা হচ্ছে কোচের বেতন দেয়ার বিষয়টি যেন দীর্ঘমেয়াদী হয়। আমি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলে গেলাম আর কিছুই হলো না, সেটা যেন না হয়। আমি চাই এই প্রক্রিয়াটা যেন কমপক্ষে তিন বছর মেয়াদী হয়। তবে এটাই সব নয়। মাঠে নিয়মিত খেলা রাখা, খেলোয়াড়দের আর্থিক নিশ্চয়তা ... এগুলোও তো দেখতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে খেলা চালাতে হবে, খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে হবে, একটা সুন্দর হকি স্টেডিয়ামের জন্য ফ্লাডলাইট থাকাটা অত্যাবশ্যক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অসম্ভব খেলাপাগল। এ রকম খেলাপাগল প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে আর নেই। আমার দৃঢ় বিশ^াস, আমরা সবাই মিলে যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই এবং হকির এই সমস্যাগুলো তুলে ধরি, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সচেষ্ট হবেন।’ হকির প্রধান সমস্যা স্পন্সর। এ প্রসঙ্গে পাপনের ভাষ্য, ‘আমাদের যারা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তারা কিন্তু সঠিক জায়গায় টাকা দিতে কখনই কার্পণ্য করে না। যদি হকি ফেডারেশন প্রমাণ করতে পারে, তারা নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পারবে, তাহলে হকিতে কখনই স্পন্সরের অভাব হবে না।’ কোচের বেতন প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘জাতীয় হকি দলের কোচের বেতন দেবে বিসিবি। এজন্য যদি কোন ফান্ডের দরকার হয়, তাহলে সেই ফান্ডেরও ব্যবস্থা করে দেবে বিসিবি। বিসিবি ইতোমধ্যেই বিদেশী ও উন্নতমানের হকি কোচের সন্ধান করতে অস্ট্রেলিয়া ও হল্যান্ডে যোগাযোগ করেছে। হকি ফেডারেশনও তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। কোচ যারাই আগে পাক, এক্ষেত্রে হকি ফেডারেশনের প্রাধান্যই থাকবে আগে। যদি এ বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু না থাকে বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তখন আমরা সাহায্য করব। কোচ হিসেবে যিনিই আসুন, আশা করি কোন সমস্যা হবে না তার বেতন পরিশোধ নিয়ে।’ খাজা রহমতউল্লাহকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরানোর পেছনে পাপনের হাত ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, ‘এটা ভুল ধারণা, আমার হস্তক্ষেপে হকি ফেডারেশনের কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। যা ঘটেছে তা ফেডাশেনের নিয়ম অনুয়াযীই হয়েছে। এখানে আমার কোন হাত নেই।’ কর্পোরেট লীগ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্ট যদি হকি ফেডারেশন সফলভাবে এবং নিয়মিত আয়োজন করতে পারে, তাহলে তাদের একটি আয়ের উৎস নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন পাপন। উল্লেখ্য, ডাচ্ কোচ বার্নাড গাইয়ের সঙ্গে হকি ফেডারেশনের ইতোমধ্যেই কথা বার্তা হয়েছে। ফেডারেশন তার কাছ থেকে অনুর্ধ ১৪, ১৬ ও ১৮ জাতীয় দলের জন্য একটি পরিকল্পনা চেয়েছে, যেটি হবে ২০২২ বিশ্বকাপ হকি খেলার লক্ষ্য। ইতোমধ্যে গাই একটি খসড়া পরিকল্পনা হকি ফেডারেশনের কাছে পাঠিয়েছেন। যেখানে তিনি সপ্তাহের তিন দিন বিকেএসপি ও তিন দিন মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে দলগুলো নিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। তার সঙ্গে পূর্ণ আলোচনা হওয়ার পর এশিয়ান হকি ফেডারেশনের অনুমোদনক্রমে তাকে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া আরেক কোচের সঙ্গেও প্রাথমিক কথার্বাতা চালিয়ে যাচ্ছে বাহফে।
×