ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গরিবের ঘরে চাঁদের আলো

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৩ মে ২০১৬

গরিবের ঘরে চাঁদের আলো

মৌলী স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ দারিদ্র্যকে জয় করে সেরাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ভূমিহীন ভ্যানচালকের মেয়ে মৌলী। কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কারণে কোন বাধাই তার সাফল্যের রথ থামাতে পারেনি। মৌলী আক্তার এ বছর এসএসসিতে রাজারহাট উপজেলার সিংহীমারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবা মফিজুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। নিজের জমি নেই। প্রতিবেশীর জমিতে মাথা গুঁজে আছেন। দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা আয়ে চার সদস্যের পরিবারের হাল কোনমতে ধরে আছেন দেবালয় গ্রামের এই ভ্যানচালক। মৌলীর মা আইভি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মৌলী পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিল। তার স্বপ্নযাত্রার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। দারিদ্র্যতার কারণে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তবে মৌলী মনে করে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা অনেক কঠিন। সাকিব মেধাবী সাকিবকে স্বপ্নপূরণের পথে নানা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু হতাশ না হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প করে সে। টিউশনী করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছে অষ্টম শ্রেণী থেকে। আর এভাবেই মেলতে থাকে তার স্বপ্নের ডানা। শত বাধা পেরিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবার নজর কেড়েছে সাকিব। সাকিব আল হাসান এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাড়ি ফকিরপাড়া গ্রামে। সাকিবের বাবা আব্দুল কুদ্দুছ কাঁঠালবাড়ী বাজারে দোকানে কাজ করেন। সামান্য আয়ে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সংসারে অভাব আর অনটনের কারণে এক সময় লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়। লেখাপড়ার ভার বাবার কাধে না দিয়ে অষ্টম শ্রেণী থেকে টিউশনী করে নিজের পড়ালেখার খরচ যুগিয়ে আসছে সাকিব। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু দীর্ঘ পথ কিভাবে পাড়ি দেবে জানে না সে। মৌসুমি মামুন-অর-রশিদ রাজশাহী থেকে জানান, অভাবের সংসারে শত কষ্ট আর রাশি রাশি প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে এবারের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে মৌসুমি। প্রায়ই না খেয়ে স্কুলে যেতে হতো মৌসুমিকে। স্কুলের ফাঁকে অবসরে মায়ের সঙ্গে বসতো ছোট্ট চা-স্টলে। আর রাতে কেরোসিনের কুপির মিটমিট আলোয় পড়াশোনা করেই এ সাফল্য মৌসুমির। মায়ের চায়ের ছোট্ট স্টলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা করত সে। বাড়িতে নেই বিদ্যুত। কুপির আলোয় পড়ালেখা করেই এ সাফল্য তার। অদম্য মেধাবী মৌসুমি রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার দিনমজুর আব্দুল মান্নান ও মা নাজিরা বেগমের মেয়ে। উপজেলার আকচা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তার এ সাফল্যে খুশি আব্দুল মান্নান ও নাজিরা বেগম এবং স্কুলের শিক্ষকরাও। মৌসুমির স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। তবে চরম দারিদ্র্য তার সেই স্বপ্নপূরণের পথে এখন বিশাল বাধা। ভাল কলেজে ভর্তি নিয়েও শঙ্কা তার। ফয়সাল নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, ফয়সাল আহমেদ এবার কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভাল ফলাফল তার দুঃখকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলাফল জানার পর সে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। বাবা-মাকে ফলাফল জানাতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছে ফয়সাল। বন্ধু-বান্ধব যখন পাসের আনন্দে হইচই করছে, তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার কপালে ভাঁজ পড়েছে। নাটোর সদর উপজেলার দক্ষিণ ছাতনী গ্রামের দিনমজুর বাবা ফয়েজুদ্দিনের ছেলে ফয়সাল। ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়েছে সে। দারিদ্র্যতা ছিল নিত্যসঙ্গী। তবে দারিদ্র্যতার কাছে হার মানতে চায়নি সে। মামা-মামির দেয়া প্যান্ট-শার্ট পরে তার স্কুলজীবন কেটেছে। প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারেনি সে। মাঝে মধ্যেই বাবার সঙ্গে দিনমজুরি খাটতে বাধ্য হয়েছে। তেলের অভাবে কোন কোন রাতে বাড়িতে বাতি জ্বলেনি। সে রাতে অন্যের বাড়ির আলোর নিচে বসে লেখাপড়া করতে হয়েছে তাকে। ফয়সাল নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু এসএসসি নয়, ২০১০ সালে পিএসসি এবং ২০১৩ সালে জেএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে বরাবরই মেধার পরিচয় দিয়েছে সে। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছেলে বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু তাদের সে আশা সফল হবে? দিনমজুর বাবার পক্ষে ছেলেকে ডাক্তার বানানো কি সম্ভব? স্কুলে সে পড়েছে বিনা বেতনে। মেধাবী হওয়ায় শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন।
×