ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পিত গণপরিবহন

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৩ মে ২০১৬

পরিকল্পিত গণপরিবহন

প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নেতৃবৃন্দ। সেখানে অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানীর গণপরিবহন। রাজধানী হিসেবে ঢাকার আয়তন ও সমৃদ্ধি বাড়ছে দিন দিন। সর্বশেষ ঢাকার আশপাশের ১৬টি ইউনিয়ন দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করে এর আয়তন দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকা- ও জনসংখ্যা। মহানগরী সম্প্রসারণের ফলে অতিরিক্ত আরও কয়েক লাখ লোক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেবার আওতায়। এর মধ্যে গণপরিবহন অন্যতম। অতঃপর ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এই বিপুলসংখ্যক নগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট ছোট যানবাহনের পরিবর্তে বড় বাসের মাধ্যমে গণপরিবহন চালুর প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহ ইতিবাচক। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সমন্বিত যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রস্তাবিত মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন আবশ্যক। এছাড়া টঙ্গি-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ডবল ট্র্যাকে উন্নীত করা এবং ১ ঘণ্টা পর পর শাটল ট্রেন চালুর প্রস্তাব করা হয়। মহিলা ও স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাইম বাস সার্ভিস। এসবই উত্তম প্রস্তাব সন্দেহ নেই। তবে সবার আগে ভাবতে হবে যে, ঘন জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি মহানগরীর জন্য ঠিক কোন্্ ধরনের যানবাহন সর্বাধিক উপযোগী ও উপযুক্ত। বর্তমানে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় একরকম নৈরাজ্য চলছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা ও রাস্তাঘাট বিবেচনায় বর্তমানে রাজধানীবাসীর জন্য প্রয়োজন ১২ থেকে ১৩ হাজার বাস। বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী ঢাকার ১৬৮ রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে মিনিবাস তিন হাজার, বাস মাত্র ২ হাজার ২৮১টি। এক হিসাবে দেখা যায়, মোট যানবাহনের মধ্যে ঢাকায় চলাচলকারী মানুষের মাত্র ৬ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে। তবে এসব গাড়িই দখল করে আছে সড়কের ৮০ শতাংশ। ফলে রাজধানীর তীব্র ও অসহনীয় যানজটের দুর্ভোগটি সহজেই অনুমান করা চলে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বড় ও সুপরিসর যানবাহন ব্যবহার করা হলে। ঢাকায় বর্তমানে বিআরটিসির অধীনে কিছু দ্বিতল বাস এবং দ্বিস্তরবিশিষ্ট কিছু আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব কম। বেসরকারী পর্যায়ে এসব বাসের ব্যবহার নেই বললেই চলে। বেসরকারী খাতে চলাচলকারী যানবাহনের অধিকাংশই মিনিবাস। সেসবও লক্কড়ঝক্কড় মার্কা, চলাচলের অনুপযোগী। অধিকাংশের ফিটনেস সার্টিফিকেট পর্যন্ত নেই। জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চালানো হয় এসব গাড়ি। সরকারী পর্যায়ে যেহেতু প্রস্তাবটা দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠন ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সেহেতু বেসরকারী খাতে সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে বড়-সুপরিসর এবং আরামদায়ক দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড বাস আমদানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বিবেচনা করা যেতে পারে ট্রলিবাস বা ট্রলিকোচ পরিচালনার বিষয়টি। ব্যাটারি বা বিদ্যুত চালিত এসব বাস একই সঙ্গে অনেক যাত্রী নিয়ে মহানগরীর একস্থান থেকে সহজেই অন্যস্থানে যাতায়াত করতে পারবে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বিশ্বের ৪৩টি দেশের শহরে-নগরে ট্রলিবাস কার্যকর রয়েছে। মোটকথা, ছোট ও অকার্যকর মিনিবাসগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নিয়ে বড় ও সুপরিসর যানবাহন এ মুহূর্তে রাজধানীর জন্য সর্বাধিক উপযোগী হতে পারে।
×