ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার বান্ডিলসহ ভুয়া উপপরিচালক ধৃত, পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১২ মে ২০১৬

টাকার বান্ডিলসহ ভুয়া উপপরিচালক ধৃত, পুলিশে সোপর্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়। খুব বেশিদিন হয়নি এখানকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাতে কি। দালালরা তো বসে নেই। তারাও এখানে আসেন। বলতে গেলে যাতায়াত প্রতিদিনের। অফিস করেন নিয়মিত। কখনও ভেতরে। কখনও বা বাইরে। রীতিমতো হর্তাকর্তা। সংশ্লিষ্ট অফিসের অনেক কর্মকর্তা কিংবা যারা এখানে লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র করতে আসেন তাদের সবার কাছেই প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক বলে পরিচিত ছিলেন দালাল লিটন। ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। বিশাল প্রভাব। হুমকি ধমকি দিয়ে অফিসের লোকদের দিয়ে কাজ করাতেন তিনি। বিনিময়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এটাই তার মূল পেশা। বিআরটিএ অফিসের অনেক কর্তার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য ছিল। যে কারণে তাকে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু অভিযোগ ছিল বাস্তব। সব মিলিয়ে অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন প্রতারক লিটন। তার সঙ্গে আছে আরও বেশ কয়েক সদস্য। তবে তিনিই প্রতারক চক্রের মূল হোতা। এই অভিযোগ ছিল খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর কাছেও। বুধবার সকালে অভিযানে বের হন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এবার রাস্তায় নয়, সরাসরি বিআরটিএ অফিসে। সেখানে কক্ষে কক্ষে ঢুকে মন্ত্রী খুঁজলেন দালাল। টাকার বান্ডিলসহ ধরলেন বিআরটিএ’র উপপরিচালক পরিচয়দানকারী ভুয়া একজনকে। পরে ওই যুবকের পকেট থেকে বের করলেন নগদ টাকার বান্ডিল। তখন উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন। শোনান তার কথিত প্রভাবের কথা। কাজ করে দিতে দেরি হলে এখানকার কর্মচারীদের বদলি করে দেয়াসহ চাকরি খাওয়ার হুমকি দিতেন লিটন। কখনও বরখাস্ত করারও ভয় দেখাতেন। কিন্তু মন্ত্রী তাকে হাতেনাতে ধরার পর লিটন অপরাধের কথা স্বীকার করে মাফ চান, ছেড়ে দেয়ারও অনুরোধ করেন। যার ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা খোদ মন্ত্রী পর্যন্ত জানেন তাকে কি এভাবে ছেড়ে দেয়া যায়? ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে লিটনকে সোপর্দ করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তারপর পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় অনেকেই প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্যের কথা তুলে ধরেন মন্ত্রীর কাছে। অনেকের অভিযোগ দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে অফিসে এসে কাজ করা যায় না। তাছাড়া টাকা ছাড়া কোন কাজও হয় না। এরপর তিনতলার বিআরটিএ অফিসের ওপর তলায় গিয়ে কর্মকর্তাদের ফাইল চেক করেন মন্ত্রী। অনিয়মের কারণ চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা বিআরটিএর আরেক কর্মকর্তা কীভাবে আগের অফিসে ফিরে এলো? এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হন ওবায়দুল কাদের। তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চান তিনি। তাঁর খুঁটির জোর কোথায় এ নিয়েও কথা বলেন। তাকে ঢাকায় ফেরাতে কোন নেতা কোন এমপির অনুরোধ ছিল, তা খুঁজে বের করবেন মন্ত্রী, এমনটি জানালেন। অভিযানের এক পর্যায়ে সিরিয়াল ছাড়া এক কর্মকর্তা চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছেন দেখে বেশ শাসালেন মন্ত্রী। আরও এক নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেন অনিয়ম আর দালালদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার। এ সময় মন্ত্রী তাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, ‘খাগড়াছড়িতে বদলি করে দেব। বাড়াবাড়ি করলে বিআরটিএ থেকে আউট করে দেব।’ লাইসেন্স নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শুনে আরেক কর্মকর্তাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোন অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। বিআরটিএ অফিসে মানুষ সেবা পেয়ে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরবেন তা দেখতে চাই। দালাল আর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিকার হয়ে মানুষ বাড়ি ফিরে যাক আমি তা চাই না। তিনি বলেন, এখন থেকে কোন সেকশনে অনিয়ম ধরা পড়লে সেকশন প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কোন আপোস করা হবে না। এসময় তিনি আঞ্চলিক কার্যালয়টি আরও বড় করার জন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। আসার পথে মন্ত্রী এয়ারপোর্ট এলাকায় বিআরটিসির একটি আর্টিকুলেটেড বাসে ওঠেন। সচল ফ্যান ও লাইট দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। চালক সহ যাত্রীদের কাছে ভাড়ার বিষয়ে জানতে চান। এসময় যাত্রীদের অভিযোগও শোনেন তিনি। পরে মন্ত্রী কেরানীগঞ্জে বিআরটিএ কার্যালয় পরির্দশন করেন।
×