বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করেছে বলেই পাসের হার বাড়ছে। আর শিক্ষাজীবন শেষে যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং বেকার না থাকে সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বুধবার সকালে গণভবনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল গ্রহণকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে পরীক্ষার ফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঝালকাঠি এবং পঞ্চগড় জেলার জেলা পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, কোনভাবেই পরীক্ষায় ফেল করার কোন মানে হয় না। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই পরীক্ষায় ভাল করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠে আরও মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি সেখানে শিক্ষার্থীদের বেশি মাত্রায় ফেল করার কোন মানে হয় না।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, বৃত্তি প্রদান এবং প্রতিবছর মাধ্যমিক পর্যন্ত সারাদেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সরকারী উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সরকার নি¤œ মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা প্রদানে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে বৃত্তি চালু করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে পিতামাতার বোঝাও আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমাদের সরকার বিনা পয়সায় বই দিচ্ছে। এখন আমরা প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই উন্নত হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্যই সরকার সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষারও বন্দোবস্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বে চাহিদার কথা বিবেচনা করেই সরকার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। যাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজš§ বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে। এ কারণে সরকার শিক্ষকদের জন্যও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার স্কুলপর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। যাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ গড়ে উঠতে পারে। কারণ ভবিষ্যত নাগরিকদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং বৃত্তি চালুর সরকারী উদ্যোগের ফলে অভিভাবকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ অনেকাংশেই কমে এসেছে। সরকারীভাবে দেশে বিশাল পরিমাণে মেধাবৃত্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত মেধাবৃত্তি অন্য কোন দেশ দেয় কিনা আমি জানি না।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় ফেল করবে না বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী। তাই আর যাই হোক তারা পরীক্ষায় ফেল করতে পারে না। পরীক্ষায় ভাল ফলকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে, যদিও কেউ কেউ কৃতকার্য হতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে। যাতে তারা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে পারে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামী প্রজš§ নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আর কারও কাছে হাত পাতবে না। বাংলাদেশ তার জনশক্তি এবং নিজস্ব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে নিজের পায়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার তাঁর সরকারের লক্ষ্যের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। গণভবনে অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইনসহ সকল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, সারাদেশের ৮টি শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীনে এ বছর অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য এফেয়ার্সের সৌজন্য সাক্ষাত ॥ ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য এফেয়ার্স ইউসেফ এস ওয়াই রমাদান বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর গণভবনের বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে তাঁরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে আলাপকালে রমাদান বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানান। প্রেস সচিব বলেন, তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ আরবী সংস্করণ প্রকাশের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।