ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাসিড সন্ত্রাসে অন্ধ মনি ও প্রতিবন্ধী সাবিলার কৃতিত্ব

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১২ মে ২০১৬

এ্যাসিড সন্ত্রাসে অন্ধ মনি ও প্রতিবন্ধী সাবিলার কৃতিত্ব

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ এ্যাসিড সন্ত্রাসে দুই চোখ হারিয়ে মাসুদা আক্তার মনি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সাল সাবিলার কৃতিত্বের সঙ্গে দিনাজপুর বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছে। মনি রংপুরের সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবিথী স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৩.৬৯ ও সাল সাবিলা রংপুরের মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২.৮৩ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছে। বুধবার এসএসসি পরীক্ষায় তারা পাস করায় পরিবারের সদস্যরা বেজায় খুশি। এ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার মনি রংপুরের দক্ষিণ বাবখাঁ গ্রামের মৃত মাহবুবুল আলমের মেয়ে। আর সাল সাবিলা মাহিগঞ্জ খোর্দ্দ রংপুর হাওয়াইয়াটারী গ্রামের শাহজাহান মিয়ার একমাত্র মেয়ে। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও একমাত্র মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে মা সুলেকা পারভীনের ইচ্ছার কোন কমতি ছিল না। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট বখাটের ছোড়া এ্যাসিডে সমস্ত মুখ ঝলসে যায় মনির। এরপর রংপুর ও ঢাকায় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠলেও চিরদিনের জন্য দু’চোখ অন্ধ হয়ে যায় তার। এ অবস্থায় লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠে মনি। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিধবা মা সুলেকা পারভীন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। আর্থিক অসচ্ছলতায় যেন থমকে না দাঁড়ায় এজন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছে মনি। সুলেখা পারভীন জানান, অনেক আগেই স্বামী মাহবুবুল মারা যান। নিজে পড়ালেখা শেখেননি আর দুই ছেলেকেও পড়ালেখা শেখাতে পারেননি। ভীষণ ইচ্ছে ছিল একমাত্র মেয়েকে সব দিক থেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি মেয়েকে ভর্তি করেন নাচ ও আর্টের স্কুলে। খেলাধুলাতেও বেশ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিল মনি। সবকিছুই যখন ঠিকঠাক চলছিল। ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট রাতে প্রতিবেশী আরিফুল, আলাল ও দুলাল ঘরের জানালা দিয়ে ঘুমন্ত মনির মুখের ওপর এ্যাসিড ছুড়ে মারে। এতে মনির মুখ, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। মেয়ের চিৎকারে সুলেকা পারভীন ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের ধাওয়া করতে গেলে তাকেও বখাটেরা এ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় মামলা হয়। মামলায় ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল আদালতের রায়ে প্রধান আসামি আরিফুল ইসলামের ফাঁসি ও তার সহযোগী আলাল এবং দুলালের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ হয়। সাল সাবিলার দু’হাতই অকেজো। পায়ের পাতাও স্বাভাবিক না। শারীরিক প্রতিবন্ধী সাল সাবিলা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৮৩ পেয়ে পাস করেছে। সে রংপুরের মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী ছিল।
×