ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিএসইর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১১ মে ২০১৬

সিএসইর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা দেওয়ার অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আর এই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস। সোমবার ইস্যু করা একটি চিঠিতে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। বিএসইসি ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কমিশনের কাছে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বক্তব্য হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জটির চেয়ারম্যানের পাঠানো একটি প্রতিবেদনের বস্তনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পর্ষদের বক্তব্য বলা হলেও তা কোনো পর্ষদ সভায় অনুমোদিত নয় বলে দাবি করেছে বিএসইসি। আর এ কারণে ওই প্রতিবেদনটিকে ‘কমিশনের নিকট মিথ্যা তথ্য প্রদানের শামিল’ বলে মনে করছে তারা। এদিকে সিএসইর একাধিক পরিচালক কাছে দাবি করেছেন, বিএসইসির কাছে পাঠানো তাদের চেয়ারম্যানের প্রতিবেদনটি যথার্থ। পর্ষদের বক্তব্য হিসেবে তাদের চেয়ারম্যান যা লিখেছেন, তা আসলেই তাদের বক্তব্য। এ বিষয়ে তাদের কোনো ভিন্ন মত নেই। তবে পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে ওই বক্তব্য লিখিত আকারে নেই সেটিও স্বীকার করেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিচালক বলেছেন, পরিচালনা পর্ষদের বেশ কয়েকটি বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর কিছু অংশ অস্বস্তিকর বলে তারা সভার কার্যবিবরণীতে তা লিখিত আকারে রাখতে চাননি। তাদের সম্মতির আলোকেই চেয়ারম্যান পর্ষদের হয়ে বিএসইসির কাছে আলোচিত চিঠি পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, সিএসইর পদত্যাগী এমডি ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেন। অন্যদিকে পর্ষদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। উল্লেখ, গত বছরের শেষভাগে সিএসইর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন হঠাৎ পদত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদ তার কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে, তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। তিনি বিএসইসির কাছেও এ ধরনের একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। অন্যদিকে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে মারুফ মতিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। তার নিয়োগপত্রে সিএসইর চট্টগ্রাম অফিসে বসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কার্যত তিনি তা করেননি। প্রধান কার্যালয়ের পরিবর্তে ঢাকা অফিসে বেশি সময় বসেছেন। অফিসের কাজ দেখিয়ে চট্টগ্রাম গিয়ে অফিসে যাননি, কিন্তু হোটেল বিলসহ সব ধরনের ভাতা নিয়েছেন। কেনা-কাটা, অফিস সংস্কারসহ অনেক কাজেই অননুমোদিত অর্থ ব্যয় করেছেন। নিজের পছন্দ অনুসারে অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই কমিটি যথাযথভাবে তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ, সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বক্তব্য গ্রহণ, প্রশ্ন-উত্তর-ব্যাখ্যা ইত্যাদি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি বলে মনে করছে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিএসইর পর্ষদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিএসইসির বলে, তদন্ত প্রতিবেদনে ওয়ালি-উল-মারুফ মতিনের করা অভিযোগের বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। এক্সচেঞ্জটির চেয়ারম্যান এবং কোনো কোনো পরিচালক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন, যা তাদের আওতা বহির্ভূত এবং ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের ধারণা, পরিচালনা ও আইন পরিপন্থী। চিঠিতে আরও বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদ এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় যথাযথ দিকনির্দেশনা এবং সিদ্ধান্ত প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে এক্সচেঞ্জের কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। বিএসইসি তদন্ত প্রতিবেদন আলোকে কিছু ব্যবস্থাও নেয়। এদিকে বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে আনা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিএসই চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ গত ৬ মার্চ বিএসইসির কাছে একটি চিঠি দেন। এ চিঠিতে তিনি আলোচিত তদন্ত প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট অংশ তাদেরকে সরবরাহ করার অনুরোধ জানান। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি যে সব পদক্ষেপ ও নির্দেশনা দিয়েছে, তা সঠিকভাবে পরিপালন করার জন্য ওই প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট অংশের অনুলিপি দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। সংশ্ষ্টিরা মনে করছেন, তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি চাওয়ার বিষয়টিকে হয়তো বিএসইসি সহজভাবে নিতে পারেনি। তারা এটিকে ‘ঔদ্ধত্য’ হিসেবে দেখছেন হয়তো। তারা মনে করেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে এর স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।
×