ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বিএনপির হাইকমান্ড বিব্রত

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১১ মে ২০১৬

নেতাদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বিএনপির হাইকমান্ড বিব্রত

শরীফুল ইসলাম ॥ দলকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জাঁকজমকভাবে জাতীয় কাউন্সিল করেও এর সুফল পায়নি বিএনপি। বরং জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে গেছে। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড বিব্রত হলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। তাই দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সূত্র মতে, ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের দিন থেকে শুরু করে ৪ দফায় ৪২ নেতার নাম ঘোষণার পর অপেক্ষাকৃত যোগ্য নেতাদের ডিঙিয়ে কারও কারও নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। কারও কারও বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও ওঠে। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ যেতে থাকে। এছাড়া ৪ দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও কারও কারও বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টি নিয়েও দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং-কোন্দল থামাতে হিমশিম খেতে হয় বিএনপি হাইকমান্ডকে। সেই সঙ্গে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের গতি থেমে যায়। জাতীয় কাউন্সিলের পর একদিকে বিএনপির গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে যাওয়া এবং অপরদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ থেমে যাওয়ায় নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে হতাশ না হতে তাদের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেক নেতা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দলীয় কর্মকা-ে অংশ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের নির্বাহী কমিটির পদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে কোন কোন নেতার নামে যে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টি সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের আগের কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠককালে আলোচনায় আসে। তবে খালেদা জিয়া এসব অভিযোগ শুনে বিব্রত হলেও বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং-কোন্দল সংশ্লিষ্ট বুঝতে পেরে তা আমলে নেননি। বৈঠকে দলের পদ ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব অভিযোগ অমূলক বলে তা আমলে না নেয়ার কথা বলেন। এ সময় খালেদা জিয়া এসব অপপ্রচার বলে মন্তব্য করে এমন অভিযোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকাতে নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেন। তবে কখনও কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সম্পর্কে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন। জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং দলের কমিটি গঠনের বিষয়ে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে বিএনপির আগের কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নির্বাহী সদস্য বেলাল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত উত্থাপন করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠায় দলের একটি অংশ। এর সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মোঃ শাজাহানসহ আরও ক’জন নেতাও জড়িত বলে কেউ কেউ অভিযোগ উত্থাপন করে। তবে এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে অভিযুক্তরা। সূত্র মতে, বিএনপিতে এখন অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে গেছে। এক পক্ষকে ঘায়েল করতে আরেক পক্ষ বিভিন্ন কায়দায় অভিযোগ উত্থাপন করছে। আর এতে দীর্ঘদিন ধরে নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আসা দলের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। কারণ নেতায় নেতায় গ্রপিং-কোন্দলের কারণে সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ হচ্ছে এবং দলীয় কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রসঙ্গত ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের কর্ম অধিবেশনে প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও তার লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানকে পুনরায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আর ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে পুনরায় কাষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ৯ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির ১৬ নেতার নাম। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল চতুর্থ দফায় ঘোষিত তালিকায় স্থান পান আরও ২১ নেতা। সূত্র মতে, এই ৪ দফা কমিটি ঘোষণার পর অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন ক’জন নেতার নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে দলের কিছু নেতাই প্রশ্ন তুলেন। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের কাছে মহিলা দলের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু বিষয়টি খালেদা জিয়ার কানে গেলে ওই মহিলা দলের নেতার প্রতি তিনি ক্ষুব্ধ হন। এ ধরনের আরও ক’টি ঘটনা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির সিনিয়র নেতা লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে নানান মত ও পথের লোকজন জড়ো হন। তাই দল করতে গিয়ে কখনও কখনও এক নেতার সঙ্গে আরেক নেতার মতপার্থক্য হতেই পারে। তবে কারও কোন কর্মকা- নিয়ে যদি অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তা দুঃখজনক। কারণ দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই সকল সমস্যার সমাধান করা উচিত। আর তা না করে যদি কেউ দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।
×