ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা তখন চিৎকার করে চলেছে, ‘‘আক্রাম, ক্যালিস।’’

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ১০ মে ২০১৬

উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা তখন চিৎকার করে চলেছে, ‘‘আক্রাম, ক্যালিস।’’

অনলাইন ডেস্ক ॥ ওয়াসিম আক্রামের মুখে হাসি। ‘সুলতান অব সুইং’ ফিরে যাচ্ছেন নিজের স্কুলজীবনের সেই ক্লাস নাইন-টেনের স্মৃতিতে। এই দুটো ক্লাসেই নাকি সবচেয়ে বেশি মজা করেছিলেন। কেন? ‘‘আরে তখন মেয়েরাও পড়ত স্কুলে!’’ জাক ক্যালিস নিজের চেনা গুরুগম্ভীর অবতারে। মিতভাষী তিনি বরাবরই। কেরিয়ারে এত কিছু করেছেন। তাও বাবার বলা কথা ভুলতে পারেননি। ‘‘আমার বাবা বলতেন যদি কোনও দিন বড় হতে পারো তা হলে লোকের উপকার কোরো।’’ সোমবার রাতে এমনই টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজে তখন রঙিন হয়ে উঠছে লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুলের অডিটোরিয়াম। মঞ্চে তখন একই সঙ্গে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এবং সেই বোলার যিনি রিভার্স সুইংকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা তখন চিৎকার করে চলেছে, ‘‘আক্রাম, ক্যালিস।’’ সত্যি, প্রতিদিন তো আর দুই কিংবদন্তিকে একসঙ্গে দেখার সৌভাগ্য হয় না। তার উপরে আবার সাপোর্টিং কাস্ট অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন টেস্ট তারকা সাইমন কাটিচ, যিনি আবার কেকেআর সহকারি কোচও বটে। দলের সিইও বেঙ্কি মাইসোর। এবং আইপিএলে ভারতের হার্টথ্রব হয়ে ওঠা সঞ্চালক অর্চনা বিজয়। বক্তারা তখন মঞ্চে বসে একটার পর একটা বাউন্সার সামলাচ্ছেন। কোনও সময় তাঁদের অনুপ্রেরণার কথা জানতে চাওয়া হচ্ছে। কখনও আবার মজার সব গল্প পাওয়া যাচ্ছে। যা আজও ভাবলে তাঁদের হাসি পায়। আক্রম চলে গেলেন তাঁর প্রথম ভারত সফরের স্মৃতিতে। যখন তিনি সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন। ক্রিকেটের কিংগ খান সে সময় তাঁর মেন্টর ছিলেন। আক্রাম বলছিলেন, ‘‘১৯৮৭-তে তখন ভারতে ট্যুর করতে এসেছি। আমি জুনিয়র। ইমরান ভাই বহোত মদত করতে থে মুঝে। মুম্বইয়ের এক হোটেলে আমরা ছিলাম। তখন তিন দিনের একটা ট্যুর ম্যাচ খেলতে যাবে পাকিস্তান। ইমরান ভাই বলল তুমি আমার সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকবে। তিন দিন পার্টি করলাম। জিনাত আমন, রেখা, ডিম্পল কাপাডিয়া। সবাইকে দেখেছিলাম। ইমরান ভাইকে বলেছিলাম এ রকম লাইফ হলে ভাল হত।’’ আইপিএল মানেই তো ক্রিকেটারদের নাইট-পার্টি আর স্পনসরদের ফটোশ্যুট। এ সমস্ত বিনোদন থেকে কী করে ক্রিকেটারদের লক্ষ্যে স্থির রাখা সম্ভব হয়? লা মার্টিনিয়ারের এক ছাত্র যখন প্রশ্নটা করল, আক্রাম হতবাক। যেন কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তারপর হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আরে এখানে পার্টি হয় না। শুধু ক্রিকেটাররা একে অন্যের সঙ্গে বসে বসে কথা বলে। মানে গেট টুগেদার। গত এক মাস ধরে তো তাই দেখছি।’’ জাক ক্যালিস নিজেই অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা। তিনি যখন স্কুলের ক্যাম্পাসে ঢুকলেন তখন সেই ভক্তরা তাঁর অটোগ্রাফ নিতে ছুটছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডারের কাছে অনুপ্রেরণা কে? ‘‘অবশ্যই মা-বাবা। বব উলমার। আর এখন যেমন কেকেআর মালিক শাহরুখ খানকে দেখি। ও কিন্তু মাটির মানুষ। কোনও সময় ওকে খারাপ ব্যবহার করতে দেখি না,’’ বললেন কোচ ক্যালিস। আর সোমবার রাতের কালিসকে দেখে তখন একটু হলেও অবাক আক্রম। কারণটাও পরিষ্কার করে দিলেন, ‘‘এত কথা ওকে আমি আগে কখনও বলতে শুনিনি।’’ আর এই সন্ধে শুধু নস্ট্যালজিয়ার নয়, ছিল রহস্য উদ্ঘাটনেরও। কাটিচ যেমন বললেন, ‘‘আমি মাস্টারশেফের শেষ ছ’য়ের মধ্যে ছিলাম। রান্না ভালবাসি।’’ আর ক্যালিস জানালেন, তাঁর রান্না খেলে নাকি কেকেআর পরের দিন মাঠে নামতে পারবে না! এটাও শোনা গেল, স্কুলজীবনের আক্রাম নাকি তাঁর মায়ের থেকে প্রতি মিনিটেই বকা খেতেন! ‘‘আমাকে মা থাপ্পড় মেরে মেরে বলত পড়াশুনো কর ঠিক করে।’’ আর কেকেআর ড্রেসিংরুমের সেই মজার লোকটা কে, যে সব সময় জমিয়ে রাখে? একটাই উত্তর এল— ব্র্যাড হগ। কাটিচ বললেন, ‘‘ওর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, জানেন। শাহরুখের গায়ে আমের রস ফেলে দিয়েছিল ও। আমি ভাবলাম এই বুঝি ও বাদ গেল দল থেকে।’’ আক্রাম থামিয়ে বললেন, ‘‘আরে হগ একবার আমাকে জিজ্ঞেস করল লাল না সবুজ, কোন লঙ্কা বেশি ঝাল। আমি বললাম দুটোই। ও দুটোই খেয়ে তখন বক্ত্বৃতা দিল।’’ কিন্তু মজা, নস্ট্যালজিয়ার মধ্যেও অনুষ্ঠান শেষে সবার একটাই আবেদন ছিল, ‘‘আমরা তৃতীয় খেতাব চাই।’’ সূত্র : বিবিসি বাংলা
×