ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

জাজসঙ্গীত ॥ কিভাবে শুনতে হয়

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১০ মে ২০১৬

জাজসঙ্গীত ॥ কিভাবে শুনতে হয়

জাজসঙ্গীত আমেরিকার এক জনপ্রিয় আর্টফর্ম বা শিল্পরূপ। এর মর্মবস্তু স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এর সুর ও ধ্বনির মধ্যে অতীতের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণিত। তারপরও জাজসঙ্গীতকে দুর্জ্ঞেয় বলে মনে হতে পারে। কেননা এই সঙ্গীত বিশেষত বহিরাগতদের কাছে সম্মোহিতকর। মেলোডি ও টেম্পোর অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ও উত্থান-পতন তাদেরকে হতবিহ্বল করে দেয়। আবার অন্যদের কাছে এই সঙ্গীত কুহেলীর রহস্যময়তায় ঘেরা। জাজসঙ্গীতকে কেন মানুষের কাছে এত রহস্যময় লাগে তা জানেন টেড জিওইয়া। তাঁর ধারণা এর কারণটি হলো কেউ কখনো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেনি কোনটা ভাল জাজ কোনটা মন্দ জাজ, কিংবা এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটাই বা কোথায়। চার্লি পার্কার কিংবা জন কোলট্রেন এই দুইয়ের মধ্যে স্যাস্কোফোনিস্ট হিসাবে কে বেশি ভাল তা নিয়ে সমালোচকদের নিজস্ব জোরালো মতামত আছে। তবে তারা কিসের জন্য এবং কিভাবে জাজসঙ্গীত শুনছেন কখনো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেননি। সঙ্গীতের এক বিদগ্ধ প-িতজন ও পুরস্কার বিজয়ী টেড জিওইয়া সেই কাজটিাই করেছেন তার গ্রন্থ ‘হাউ টু লিসন টু জাজ মিউজিক’ গ্রন্থে। জাজসঙ্গীত শোনাটাও যে এক আর্ট বিশেষ, এরও যে কিছু কলাকৌশল আছে সেটা তিনি প্রাণবন্ত ও সহজসাধ্য ভাষায় তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। জিওইয়ার এই বইটি মুগ্ধতা সৃষ্টি করার মতো। বইটি পাঠককে জাজ সঙ্গীতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। যেমন, তিনি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন ‘সুইং’ কিভাবে সিনকোপেটেড, আঙ্গুল টেপা ছন্দের চাইতে বেশি কিছু। একজন বেইস মাদকও একজন ড্রামার যাদের পরস্পরের সাহচর্যে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে হয় সেটাই হলো সুইংয়ের একটা নিশ্চিত লক্ষণ। বইটিতে জাজ সঙ্গীতের ইতিহাস থেকে শুরু করে এর মৌলিক উপাদান ও কাঠামো পর্যন্ত সবকিছুই আছে। জিওইয়া দেখিয়েছেন জাজ সঙ্গীতের ঠিক কোন জিনিসটি শুনতে হবে। তিনি শোনার কিছু কলাকৌশলও বর্ণনা করেছেন যা পাঠকদের তাদের জীবনের বাকি সময়টুকু জাজসঙ্গীত বুঝতে ও মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে। অনভিজ্ঞদের কাছে এই বইটির সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো তাৎক্ষণিকভাবে ভাল কিছু উদ্ভাবন করা বলতে সত্যিকার অর্থে কি বুঝায় সে ব্যাপারে এতে কিছু টিপস্্ দেয়া আছে। সঙ্গীতের নানা দিক ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পাশাপাশি জিওইয়া তাঁর বইতে জাজ সঙ্গীতের বিবর্তনের একটা ইতিহাসও তুলে ধরেছেন। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিয়েন্সের আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী থেকে জাজ সঙ্গীতের উদ্ভব। ঐতিহ্যগতভাবে স্বাধীন ও জনপ্রিয় সঙ্গীতের ধারা হিসেবে এটি আবির্ভূত হয়েছিল। তবে আফ্রিকান-আমেরিকান ও ইউরোপীয়-আমেরিকান সঙ্গীতের মূলধারার সঙ্গে এটা অভিন্ন বন্ধনে অবদ্ধ হয়ে যায়। জাজের ব্যাপ্তিকাল একশ’ বছর। এই সময়ের মধ্যে নানা ধরনের সঙ্গীত এর সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছে যার ফলে একে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জাজসঙ্গীত তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনী, পলিরিদম, সিনকোপেশন ও সুইং নোটের এবং সেইসঙ্গে ইউরোপীয় সুরেলা ধ্বনি ও আমেরিকান লোকসঙ্গীতের নানা দিক, ব্রেইস ব্যান্ড ও আফ্রিকান সঙ্গীতের উপাদানগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকে। জাজ সঙ্গীতের ভিত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত হলেও অন্যান্য সংস্কৃতি ও তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও স্টাইল দিয়ে এই শিল্প রূপটিকে সমৃদ্ধ করেছে। সারা বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা জাজসঙ্গীতকে আমেরিকার অন্যতম মৌলিক শিল্পরূপ বলে অভিনন্দিত করেছে। জাজসঙ্গীত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সঙ্গীত সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে। সেগুলো থেকে বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করেছে এবং এর ফলে উদ্ভূত হয়েছে জাজ সঙ্গীতের বিভিন্ন স্বতন্ত্র ধারা। নিউ অলিয়েন্সের ব্যান্ড দল বিগ ইজির করনেট বাজিয়ে বাড়ি বোল্ডেনকে অনেকে জাজ (জাস) সঙ্গীতের আবিষ্কারক বলে কৃতিত্ব দিয়ে থাকে। বলাবাহুল্য ওই ব্যান্ড দলটির কোন সঙ্গীতের রেকর্ডিং নেই। তবে ট্রাম্পেট বাদক, গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বিশাল অবদান, রাখার জন্য লুই আর্মস্ট্রং (১৯০১-১৯৭১) কে জাজ সঙ্গীতের অন্যতম সেরা শিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়। বইয়ে আরও অনেক জাজশিল্পীকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা মাদকের নেশার কারণে অনেক আগেই অকাল মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বইয়ের শেষ দিকে লেখক দেড়শ’ সমকালীন জাজশিল্পীর একটি তালিকা দিয়েছেন যা মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×