ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লোহালিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ দেড় বছর ধরে বন্ধ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৯ মে ২০১৬

লোহালিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ দেড় বছর ধরে বন্ধ

মোখলেছুর রহমান, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া নদীর উপর লোহালিয়া সেতুর নির্মান কাজ দেড় বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ৫৫ শতাংশ কাজ শেষে হওয়ার পর লোহালিয়া নদীপথ দিয়ে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে জাহাজ চলাচলে সেতু কম উচ্চতার কারণে লোহালিয়া সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়। ফলে পানিতে গেল ভূমি অধিগ্রহন ও সেতু নির্মাণের ২৯ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা। এছাড়াও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে পটুয়াখালীর আট উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগসহ ভোলা ও বরগুনা জেলাবাসির সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ করার মহা পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। এলজিইডি সুত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলার আট উপজেলার সঙ্গে সহজে যোগাযোগসহ ভোলা ও বরগুনা জেলার সঙ্গেও সড়ক পথে যোগাযোগে সহজ করার দাবি দীর্ঘ দিনের। জেলা বাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার ২০০৮ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা-কলাগাছিয়া সড়কের লোহালিয়া নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৪৬৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই গার্ডার সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর কার্যাদেশ নিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। শুরুতেই ৪ দশমিক ৯৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় করা হয়। এদিকে সেতু নির্মাণ ৫৫ শতাংশ কাজ শেষে হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের আন্তঃ মন্ত্রনালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোহালিয়া সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে দীর্ঘ দেড় বছর সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ঠিকাদারকে তার কাজের অনুকূলে ২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। ভূমি অধিগ্রহন ও সেতু নির্মাণের মোট ব্যয় হয় ২৯ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা। এদিকে পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হতো এই সেতুটি। সেতু না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ট্রলারে লোহালিয়া নদী পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলাবাসির। পটুয়াখালী একেএম কলেজের ছাত্র মাসুদুল আলম জানায়, সে লোহালিয়া গ্রাম থেকে ট্রলারে লোহালিয়া নদী পাড় হয়ে কলেজে এসে লেখাপাড়া করছে। প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে লোহালিয়া নদী পার হয়ে আসতে হয় তাঁকে। উন্নয়ন কর্মী স্বজন ইসলাম নাহিদ বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে ট্রলারে নদী পার হয়ে কর্মস্থল জেলার দশমিনা উপজেলা সদরে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সেতুটি নির্মাণ ছিল এই এলাকার মানুষের প্রানের দাবি। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন জানান, দক্ষিণ জনপথের স্বপ্ন এই লোহালিয়া সেতু। এই সেতু নির্মাণে আমরা জনগণের কাছে ওয়াদা বদ্ধ। এই সেতু নির্মিত হলে পটুয়াখালী জেলা শহরের সঙ্গে আটটি উপজেলাবাসী ও ভোলা, বরগুনার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে খেয়া নৌকায় নদী পার হতে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তারিকুজ্জামান বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরে পণ্য বহনের জন্য যে জাহাজ চলাচলে সেতুর উচ্চতা কমের কারনে সেতু নির্মান বন্ধ হয়েছে। তবে এখন লোহালিয়া নদীতে এমনিতেই চর পরে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এ নদী দিয়ে সাধারণ লঞ্চ চলাচলে অসুবিধা হয়। তারপরও কোটি কোটি টাকা খরচের পর সেতু নির্মান বন্ধ না করে সেতুর মাঝখানটা যদি উঁচু করে স্টিল প্লেট ব্যবহার করে সেতুটির নির্মাণ শেষ করা হলে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ কোটি কোটি টাকা অপচয় থেকে রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. হানিফ বলেন, সেতুর উঁচ্চতা বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছিল ৯ দশমিক ৫৭ মিটার। সেই অনুযায়ী সেতু নির্মান কাজ শুরু হয়। লোহালিয়া সেতু অনুমোদনের সময় পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হয়নি, যা বর্তমানে হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে লোহালিয়া নদী দিয়ে পন্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের স্বার্থে লোহালিয়া নদীর মূল চ্যানেলে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (নদীর সব্বোর্চ পানি থেকে সেতুর উচ্চতা) ১৮ দশমিক ৩০ মিটার প্রয়োজন। লোহালিয়া সেতুর কম উচ্চতা হওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। তবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনিয়ে কয়েক দফা বসা হয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায় থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
×