ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে এবার হাড়িভাঙ্গা আমের ভাল ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৯ মে ২০১৬

রংপুরে এবার হাড়িভাঙ্গা আমের ভাল ফলনের সম্ভাবনা

স্টাফ রির্পোটার, নীলফামারী ॥ এবার রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছে আমচাষীরা। আঁশবিহীন, মাংসল ও সুমিষ্ট স্বাদের স্থানীয় জাতের হাড়িভাঙ্গা আমের নাম এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অনাবৃস্টির কারনে আমের উৎপাদনে ধ্বস নামার উপক্রম হয়েছিল। খরায় হাড়িভাঙ্গা আমের কিছুসংখ্যক গুঁটিও ঝড়ে পড়েছিল। তবে বেশ কিছুদিন ধরে মাঝারী বর্ষণের গাছে থাকা প্রচুর পরিমান কচি আমগুলো দ্রুত বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। জুন মাসে এই আম বাজারে উঠবে। আজ সোমবার রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খন্দকার মো. মেজবাহুল ইসলাম বলেন খরার পর বৃস্টিপাতের কারনে তাপমাত্রা কমেছে এবং বাতাসে আদ্রতার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় অভিজাত হাড়িভাঙ্গা জাতের আমের আশানুরূপ ভাল ফলন পাওয়া যাবে। বৃষ্টিপাত এই জাতের আমের ফলনে ব্যাপক সহায়ক হয়েছে। রংপুরসহ এই বিভাগের সর্বত্রই এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশে ও বিদেশে এ আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জানা গেছে রংপুর জেলায় এবার ছয় হাজার দু'শ ৫০ জনের বেশী কৃষক ও আগ্রহী লোক ক্ষুদ্র, মধ্যম ও বড় ধরনের চার হাজার দু'শ ৫০ টির বেশী বাগানে আম চাষ করেছে। জেলায় গত বছর ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ২১ হাজার টন আম উৎপাদনের পর চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার আট'শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা রংপুর বিভাগের পাশাপাশি জেলায় আম চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুমে কমপক্ষে গতবছরের ন্যায় হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। প্রসঙ্গতঃ আলহাজ্ব মো. আব্দুস সালাম সরকার বলেন রংপুরের বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়ীর বাগানে প্রজাবাৎসল, উদারমনা ও সৌখিন রাজা তাজ বাহাদুর শিং এর আমলে আমদানিকৃত ও রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। যা ১৯৮৮ সালের বন্যা ও ভাঙ্গনে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় । খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার, আমের ব্যবসা করতেন । তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন । জমিদার বাগানের আমদানীকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন । বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা উক্ত হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন । কালের বিবর্তনে বৃক্ষটি ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয় । মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তাবৃন্দ উক্ত গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে জানার অাগ্রহ প্রকাশ করে। তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম । গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাড়িভাঙ্গা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে ।
×