ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

হানাদার সেনাদের বিচার

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৯ মে ২০১৬

হানাদার সেনাদের বিচার

খবরে দেখলাম দেড় শতাধিক পাকিস্তানী সেনা যারা একাত্তরে আমাদের নিধন করে পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করেছিল তাদেরও বিচার করা যাবে। হাজার হাজার পাকসেনা যাদের আমরা খানসেনা নামে চিনতাম তাদের এই অফিসাররা দুনিয়ার কলঙ্ক। হিটলার মুসোলিনী বা ভিয়েতনামের সঙ্গে এর তুলনা চলে। কম্বোডীয় জাদুঘরে দেখা বিভীষিকা ও ভিয়েতনামের ইতিহাস থেকে একথা বলতে পারি এদের মানে পাকসেনা অফিসারদের বিচার হওয়া ছিল জরুরী। পাকিস্তান সে মর্মে অঙ্গীকার করে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেও বিচার করেনি। ভারতও এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তাদের পরাজয়ের মাধ্যমে সারেন্ডারে বাধ্য করাই ভারতের গৌরব। তারা এর পর আর কিছুতে মাথা ঘামায়নি। ওই সময়ের বাস্তবতায় আমাদের শক্তি ছিল না। ’৭৫-এর পর উল্টো পাকিকরণের পথে ছুটে চলা দালাল রাজাকার ও বিএনপি এরশাদের বাংলাদেশ ছিল তাদের অনুসারী টাইপের। আজ বদলে যাওয়া সময়ে দেশের মাথা নামে পরিচিত অগ্রজ প-িত সুশীল নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা সে বিচার চাইতেই পারেন। কিন্তু সময়টা কি অনুকূলে? এই সরকারের আমলে আমাদের মাথা উঁচু সম্মান উন্নয়ন ও অগ্রগতির পাশাপাশি চলছে হানাহানি। একটার পর একটা খুন, গুম, হত্যা আর অঘটনে মানুষ ত্রাসের ভয়ে গুটিয়ে আছে। এত অপরাধ এ জাতি আগে কখনও দেখেনি। বিচার যা হচ্ছে তা সন্তোষজনক নয়। এমন বাস্তবতায় সমাজে নিরীহ মুসলমান আর সংখ্যালঘু নামের প্রাণীরা বলির পাঁঠা অথবা কোরবানীর পশু। একাত্তরের পরাজিত শক্তির মাধ্যমে বাড়ি ঘর হারানো এমনকি উপাসনালয়ে হামলা এখন হররোজকার ঘটনা। এ অবস্থা এতই প্রবল যে খালেদা জিয়াও ভড়কে গিয়ে দাবি করেছেন তার আমলেও এমন হয়নি। পাশাপাশি এদেশ মুক্ত করা মানুষগুলোর চেতনা ও আদর্শ বহনকারীরাও এখন নিরাপদে নেই। গাঁও গেরামে মৌলবাদ এমনভাবে গেড়ে বসছে তাতে এদেশের চেহারাই হয়ত একদিন আর চেনা যাবে না। এ প্রক্রিয়া দেশের বাইরেও চলমান। সিঙ্গাপুরের ঘটনা মিথ্যে কিছু নয়। এমন সব দেশে চলছে। খোলনলচে পচে গেছে আমাদের। তার বিহিত না করে রাজাকারী মূল্যবোধের সমাজ ও খুনোখুনির পরিবেশ নিয়ে আমরা কি পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের বিচার করতে পারব? বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সাধারণ মানুষ এখন বিপন্ন সংখ্যালঘু ও মুক্তচিন্তার বাঙালীদের মগজ-রক্ত রাজপথে দেখে প্রশ্ন করেন : কোথায় বুদ্ধিজীবী, কোথায় তাদের কলম কালি তুলি ও প্রত্যয়? এখন অনেকেই পাকিস্তানী সে সব সেনা অফিসারদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত। যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন। এমনকি নিয়াজীও বেঁচে নেই। তবু অপরাধ ও বিচার বলে কথা। বিবেকবান মানুষ তা চায়। তবে তারা এটাও জানতে চায় আজকের বাংলাদেশ যখন ক্রিকেট, রাজনীতি, সামাজিক আচারে পাকিস্তানপ্রেমী বেশিরভাগ মানুষ পোশাকে আহারে জীবনে ক্রমেই উগ্র, মানবতাবিরোধী ও অসহনীয় মেজাজের হয়ে উঠছে তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে এদেশ ও জাতিকে সুস্থ ধারায় না এনে এ জাতীয় বিচার চাওয়া কি সময়ের চাহিদা? বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের দেশ না বানিয়ে এ কাজ করা যাবে?
×