ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কে আসছে সব টেলিফোন একচেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কে আসছে সব টেলিফোন একচেঞ্জ

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও এক্সচেঞ্জগুলোতে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন। এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে সরকারের তহবিল থেকে ৪০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পে চীন সরকার ঋণ দেবে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। কাজটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের গ্রাম পর্যায়ে ল্যান্ড টেলিফোন সেবা পৌঁছে যাবে। বর্তমানে এক হাজার ৪টি ইউনিয়ন ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু ল্যান্ড টেলিফোন সংযোগ তৈরি করা হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন পলিসি (আইসিটি) ২০০৯ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে ব্যবস্থাকরণ, জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্তকরণ ও ইন্টারনেট (আইপিপি) টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং চালুর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিটিসিএলের বিদ্যমান ল্যান্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পুরনো টেকনোলজিনির্ভর হওয়ায় তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভয়েস কল ছাড়াও যুগের চাহিদা অনুসারে ইন্টারনেট, ডাটা ও ভিডিও আদান-প্রদানের সুযোগ নেই। এজন্য দেশব্যাপী বিদ্যমান পুরনো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি এবং ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) ও চীন সরকার নির্বাচিত মেসার্স চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে এরই মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিটি এক্সচেঞ্জের পুরনো ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও কপার-বেজড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। এর আগে রাজধানীর ১ লাখ পুরনো টেলিফোন ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনাসহ ৭১ হাজার নতুন সংযোগ দেয়ার কাজ বাস্তবায়ন করছে বিটিসিএল। সারাদেশে বিটিসিএলের ৯ লাখ ৩০ হাজার ল্যান্ডফোন গ্রাহক রয়েছে। এখনও ৬ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরেই রয়ে গেছে। এজন্য চীনের অর্থায়নে নেয়া এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সাত লাখ গ্রাহককে ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সারা দেশেই ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে ভয়েস-ডাটা ও ভিডিও সুবিধা পাওয়া যাবে। ঢাকায় কয়েকটি এলাকায় ত্রিমাত্রিক সুবিধা চালু করেছে বিটিসিএল। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে একটা সংযোগ দিয়েই এই তিনটি সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন (১৭১ কেএল) প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি এই সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে গত বছরের শেষ দিকে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) শেরে বাংলা নগর এক্সচেঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার নামে পরিচিত প্রকল্পের আওতায় ত্রিমাত্রিক সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন প্রকল্পটি ১৯ জুলাই ২০০৯ সালে হাতে নিয়েছিল বিটিসিএল। ২০১৪ সালে বিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এজন্য প্রচলিত কপার কেবলের ব্যবহার সীমিত রেখে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যন্ত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভবন, এমনকি বাসা পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আমদানিকৃত বৈদেশিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং টেস্টিং ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। উত্তরা, গুলশান, শেরে বাংলা নগর, রমনা, মগবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এক লাখেরও বেশি টেলিফোন যে কোন সময় চালু করা যাবে। বর্তমানে নগরীর কয়েকটি এলাকায় এই সেবা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নগরীর সব এলাকায় সেবা পৌঁছে দিতে পারেনি বিটিসিএল। বিটিসিএল জানিয়েছে, তবে এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে রাজধানীসহ দেশের সব এলাকায় একযোগে এই সেবা চালু করা হবে। কারণ এখনও অনেক এলাকায় ল্যান্ডফোনের পুরনো পদ্ধতি চালু রয়েছে। ফলে আধুনিক সেবাটি দিতে এখনও বিটিসিএল পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ল্যান্ড টেলিফোনে সব ধরনের আধুনিক সেবা পাওয়া যাবে।
×