ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রবীন্দ্রনাথের গানের সুরে স্নিগ্ধ বৈশাখ উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১১ এপ্রিল ২০১৬

রবীন্দ্রনাথের গানের  সুরে স্নিগ্ধ বৈশাখ  উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার সন্ধ্যায় যান্ত্রিক শহর ঢাকায় বেজেছে বৈশাখী গান। গাওয়া হয়েছে বাঙালীর মননের দিশারী কবিগুরু রবি ঠাকুরের গান। গেয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল ও খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা। বাংলা নববর্ষ আবাহনে ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ের অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সঙ্গীতাসর। বিশ্বকবির মায়াময় বাণীবহ গানের সুরে স্নিগ্ধ হয়েছে আয়োজন। সম্প্রীতি ও মানবতার বার্তাবহ উন্মুক্ত সঙ্গীতানুষ্ঠানটি উপভোগ করেন সুরের অনুরাগীরা। নববর্ষ উদ্্যাপনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পাঁচদিনব্যাপী বৈশাখ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অংশ ছিল এই সঙ্গীতসন্ধ্যা। চিত্ত জাগুক গানে গীতে কাব্যে কথায় প্রতিপাদ্যে শনিবার সূচনা হয় এ বর্ষবরণ উৎসবের। প্রথমেই গান নিয়ে মঞ্চে আসেন এ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সেমন্তী মঞ্জরী। নবীন গায়িকার মিষ্টি কণ্ঠে গীত হয়Ñ আমার এ পথ চাওয়াতেই আনন্দ/খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত/আমার এ পথ চাওয়াতেই আনন্দ...। তাঁর পরিবেশিত দ্বিতীয় গানের চরণ ছিলÑ আমার প্রাণে গভীর গোপন, মহা-আপন সেকি/অন্ধকারে হঠাৎ তারে দেখি...। এরপর গান শোনান সৈকত মুখোপাধ্যায়। পরিবেশন করেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’, ‘তোর আপনজনে ছাড়বে তোরে’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ শিরোনামের তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। অদিতি মহসিন গেয়ে শোনান ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে’সহ কয়েকটি গান। লাইসা আহমদ লিসার গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘কখন বসন্ত গেল’, ‘বসন্ত কি শুধুই কেবল ফোটা ফুলের মালা’ ও ‘ওহে সুন্দর মম গৃহে প্রেম’। লিখন তোমায় ধুলায় হয়েছে ধূলি/হারিয়ে গিয়েছে তোমার আখরগুলি শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শামা রহমান। বুলবুল ইসলামের গাওয়া গানগুলো হলোÑ ‘প্রখর তপন তাপে’ ‘বন্ধু রহো রহো সাথে’ ও ‘মধ্য দিনের যবে গান’। ফাহিম হোসেন চৌধুরী পরিবেশন করেন ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’, ‘মন যে বলে চিনি’, ‘পুব হাওয়াতে দেয়া দোলা’সহ পাঁচটি গান। মহিউজ্জামান চৌধুরীও শোনান ৫টি গান। এগুলো হলো ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন’, ‘আকাশভরা সূর্য তারা’, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায়’, ‘তুমি যেয়ো না এখনি’ ও ‘অনেক পাওয়ার মাঝে’। সব শেষে রবীন্দ্র সুর-সুধায় শ্রোতার মন রাঙিয়ে দেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। চিত্ত জাগানিয়া সঙ্গীতসন্ধ্যাটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। ১৪২২ বঙ্গব্দের শেষ দিন বুধবার পর্যন্ত চলমান এ সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রতিদিন শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আজ সোমবার তৃতীয় দিনের উৎসবে গাইবেন ফারহানা রহমান কান্তা, অলোক কুমার সেন, মাহমুদুল হাসান, অনিন্দিতা চৌধুরী, ঝুমা খন্দকার, তানভীর আলম সজীব, সুবীর নন্দী ও ইফ্ফাত আরা দেওয়ান। রাজশাহীর পুঠিয়ায় জাতীয় লোকনাট্য উৎসব শুরু কাল ॥ প্রায় তিন যুগ ধরে ঐতিহ্যবহী বাংলা নাটকের আঙ্গিক অনুসন্ধানের সংগ্রহ ও সংরক্ষণে কাজ করছে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। নিবেদিতভাবে মেলে ধরছে বাঙালীর হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরা। এবার সংগঠনটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩তম জাতীয় লোকনাট্য উৎসব। ১২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি মাঠে উৎসব উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা। প্রধান অতিথি থাকবেন কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন দুই সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ও অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না । রবিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে গ্রাম থিয়েটার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর হিমু, শিল্পকলা একাডেমির নাট্য ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ, ঢাকা থিয়েটারের কামাল বায়জীদসহ গ্রাম থিয়েটারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার কেন্দ্রীয় পরিষদ রাজশাহীর পুঠিয়া থিয়েটারকে এ উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছে। এবারের লোক নাট্যোৎসবে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যাকা-ে নিহত পুঠিয়া পৌরসভার শহীদ পরিবারবর্গকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সম্মাননা জানানো হবে। সেই সঙ্গে তিনদিনব্যাপী আয়োজনে থাকবে গ্রাম থিয়েটারের অন্তর্ভুক্ত দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে উদ্বোধনী শোভাযাত্রা, লাঠিখেলা, লোকনৃত্য, পুতুল নাচ, লালনের গান, বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা, নৃত্যনাট্য বেহালা, গীতিনাট্য রাধার মানভঞ্জন, ঝুমুর যাত্রাপালাসহ বহুমাত্রিক লোকজ পরিবেশনা। সেলিম আল দীন লোকনাট্য সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে অভিনয়শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ, জামালপুরের মেলান্দর উপজেলার নাট্যকার ও শহীদ সমর থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা আসাদুল্লাহ ফরাজী এবং রাজশাহী পুঠিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ রবিউল ইসলাম দুখুকে। এছাড়া এই উৎসবে সারাদেশ থেকে আগত সংস্কৃতিকর্র্মীরা অংশ নেবে। ১৪ এপ্রিল উৎসবের সমাপনী আয়োজনে অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গ্রাম থিয়েটারের কার্যক্রম তুলে ধরে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বাঙালীর হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পরম্পরা পুনর্নির্মাণ ও ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির অপঘাতমুক্ত জাতীয় সংস্কৃতির ইতিহাস রচনা। সেই লক্ষ্যে আমরা বাঙালীর নিজস্ব নাট্যাঙ্গিক মঙ্গল নাট, লীলানাট, ভাসান যাত্রা, পাঁচালি, জারি, মালি, গম্ভীরা, লেটো, ঘাটু, বিচার গান, শাস্ত্রগান, সঙকীর্তন, পুতুল নাচ ইত্যাদি লোকনাট্যে শত আঙ্গিকের পা-ুলিপি সংগ্রহ এবং পরিবেশনা রীতির নির্দশন অনুসন্ধানে সচেষ্ট।
×