ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি দুষল সরকারকে জমি বিক্রেতারা বলেছেন প্রকল্পের বিষয়টি জেনেই তারা এগিয়েছেন, প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে

স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে রক্তক্ষয় বাঁশখালীতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ এপ্রিল ২০১৬

স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে রক্তক্ষয়  বাঁশখালীতে

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির/ জোবাইর চৌধুরী ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ-ামারায় দেশী-বিদেশী বিপুল পরিমাণ অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজের শুরুতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে এর জের বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তার শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নানাভাবে নানা কথা নিজেদের স্বার্থে বা হীনস্বার্থে বলা এক কথা, আর যারা এসব বিষয়ে সচেতন তাদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক বক্তব্য জনসম্মুখে তুলে ধরা ভিন্ন কথা- এমন কথাই এখন চাউর হয়েছে বাঁশখালীসহ সংশ্লিষ্ট উৎসুক মহলে। এদিকে, দেশজুড়ে বছরের পর বছর ব্যাপক বিদ্যুত ঘাটতি থাকার পর যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে দেশে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাধাদানে ইন্ধনদাতাদের অপতৎপরতাকে রহস্যময় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল। জয়েন্ট ভেঞ্চারের মালিকানার বাংলাদেশী পক্ষ দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ শুক্রবার সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে, শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সংস্থার মাধ্যমে সমীক্ষা চালিয়ে চীনা দুটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিশ্চিত করে বাঁশখালীতে এ বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ, এ প্রকল্পটি হওয়ার কথা ছিল চকরিয়ার উজানটিয়ায়। কিন্তু এলাকার উন্নয়নে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের জনসাধারণের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিদ্যুত কেন্দ্র গন্ডামারায় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া এ জন্য ব্যক্তি মালিকানায় জমি কেনা হয়েছে ৮৫৫ একর। এসব জমি এলাকার প্রকৃত মূল্যের চাইতে আরও বেশি দামে ক্রয় করে প্রকারান্তরে জমি মালিকদের লাভবান করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটি চালু হলে এতে প্রত্যক্ষভাবে এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরোক্ষভাবে লাভবান হবে আরও ৫ হাজার লোক। আর সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দেশের বিদ্যুত সেক্টর। এছাড়া প্রথম পাঁচ বছরে এ প্রকল্পের জন্য কাজ করবে ৭ হাজার মানুষ। দু’বছর আগে থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ এমনকি পরিবেশ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র গ্রহণের পর গত শনি ও সোমবার এমন লঙ্কাকা-ের জন্ম হওয়ায় উদ্যোক্তাগোষ্ঠীর সকল সদস্য রীতিমতো হতভম্ব। ফলে যাদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট জমি ক্রয় করা হয়েছে তাদের সকলের সঙ্গে শুক্রবার এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ ও অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তা বৈঠক করে পুনরায় মতামত গ্রহণ করেছেন। একজন জমি বিক্রেতারও কোন ভিন্নমত মেলেনি। অথচ, এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এলাকার বাইরের স্বার্থান্বেষী চক্রের সদস্যরা নানাভাবে ইন্ধন যুগিয়ে বাঁশখালীর গন্ডামারাকে রক্তাক্ত করেছে। ঝরে গেছে চারটি তরতাজা প্রাণ। যার জন্য এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে, তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ঘটনার জন্য দোষারোপ করা হয়েছে সরকারকে। তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে তা সত্য নয় বলে স্পষ্টভাবে দাবি করা হয়েছে। ঘটনার পর শুক্রবার তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা কমিটির শীর্ষ দুই নেতা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও আনু মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকার দায়ী। অপরদিকে, গন্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে শুক্রবার এলাকার মুজিবকেল্লার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়ার পর এবং জমি কিনে কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত কোন মহলের কোন আপত্তি ছিল না। বাঁশখালীর অধিকাংশ মানুষ এলাকার উন্নয়ন এবং বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত সরবরাহ পাবে এ আশায় ছিল উদ্বেলিত। কিন্তু আকস্মিকভাবে গত শনিবার থেকে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্ম হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সোমবার তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয় এবং এতে চারজনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি শুক্রবার পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানা গেছে। কেন পারেনি তার কোন ব্যাখ্যা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। বাঁশখালীতে এ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ও সংঘটিত ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ও স্বার্থানেষী মহলের ইন্ধনে মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। একটি পক্ষ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে। অপরটি এর বিরুদ্ধে। বিরোধিতাকারীদের ইন্ধন দিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। আবার পক্ষে সরকারী দলের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিতরাও রয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, জনসমর্থন ও সরকারী যথাযথ অনুমোদন সর্বোপরি পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে এত বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগে দেশী-বিদেশী জয়েন্ট ভেঞ্চারে একটি প্রকল্প করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম কেন হলো এবং কি উদ্দেশ্যে করা হলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে তদন্তে বিষয়টি উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে শুক্রবার এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাবিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭০ শতাংশই আসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে। ভারতে ৭০, চীনে ৯০ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে। আমেরিকা, জার্মানি ও জাপানের মতো উন্নয়ত দেশেও এ ধরনের প্রকল্প চালু ও সচল রয়েছে। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ আরও জানান, এলাকার পরিবেশের দিকে সর্বোচ্চ লক্ষ্য রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কয়লার ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক মেশিন স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষে ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত নানামুখী সংবাদের প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। শুক্রবার সকালে জমি বিক্রেতা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। তিনি বলেন, এ কেন্দ্রটি হবার কথা ছিল কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায়। পরে বাঁশখালীর মানুষের আগ্রহ ও অনুরোধ বিবেচনা করে গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকাকে বেছে নেয়া হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের সরলতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থে পুঁজি করে এলাকার একটি কুচক্রী মহল এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। পরিবেশের বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় রেখেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে, জমি বিক্রেতারা জানান, তারা কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্যই জমি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের উপর কোন ধরনের চাপ ছিল না। জমির বিপরীতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান তাদের ন্যায্যমূল্য পরিশোধ করেছে। বাঁশখালীর গন্ডামারায় গত ৪ এপ্রিল সোমবার ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা। বিদ্যুত কেন্দ্র পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারী দুটি গ্রুপ এবং পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের চারদিন পর নিজের অবস্থান তুলে ধরল এস আলম গ্রুপ। চট্টগ্রাম নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এ মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন জমিদাতা ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্যই জমি দিয়েছি ॥ শুক্রবার মতবিনিময় বৈঠকে উপস্থিত জমি বিক্রেতারা জানান, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলেই তাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করা হয়েছে। এলাকার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি ভেবে তারা স্বতঃফূর্তভাবে ন্যায্যমূল্যে জমি বিক্রি করেছেন। তারা বলেন, এলাকার উন্নয়নে যখন এস আলম গ্রুপ এ প্রকল্প হাতে নেয় তখন দলমত নির্বিশেষে সকলেই উৎসাহিত হয়েছিলেন। ভূমি সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে প্রকল্প কাজে। কিন্তু একেবারে কাজ শুরুর পর্যায়ে এসে এলাকার একটি মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর গুজব ও প্রচার চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বাঁশখালীর সাধারণ মানুষ এখনও বিদ্যুত কেন্দ্র চায় বলে তারা মত ব্যক্ত করেন। এস আলম গ্রুপের বক্তব্য ॥ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য কৃষি জমি, লবণ মাঠ, বসতভিটা ও কবরস্থান বেদখল হয়ে যাবে বলে যে প্রচার চালানো হয়েছে তা মোটেও সত্য নয় বরং স্বল্পভূমিতে ৩৭টি মাটির ঘরের জন্য ১৫০টি পাকা ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে, যাতে এসব পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্ম বসবাস করতে পারে। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় কোন কবরস্থান থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। পরিবেশের বিষয়ে জানানো হয়, কোন ধরনের বিরূপ প্রভাব যেন না পড়ে সেজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের কাজে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করা হবে না, নলকূপও স্থাপন করতে হবে না। প্রকল্প এলাকার ৩০ শতাংশ জায়গায় সবুজ গাছপালা রোপণ করা হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবারকে চাকরির সুযোগ দেয়া হবে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালায়। ত্রিমুখী সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখানে এস আলম গ্রুপের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি বলেন, শুধু ন্যায্যমূল্যই নয় বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে জমির মালিকদের। কাউকে ঠকানো হয়নি। কতিপয় দুষ্কৃতকারী রাজনীতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই লেয়াকত এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন সে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও টাকা চায়। না পেয়ে জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করি। ব্যবসা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। চীন, ভারত, কোরিয়া ও জাপনাসহ অনেক দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বিশ্বে ৭০ ভাগ বিদ্যুতই উৎপাদন হয়ে থাকে কয়লা থেকে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা হবে না। তিনি সংঘর্ষে নিহতদের ১০ লাখ টাকা করে ও আহতদের ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাঁশখালীর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সরকারকে দূষল তেল গ্যাস রক্ষা কমিটি ॥ শুক্রবার দুপুরে বাঁশখালীর গন্ডামারায় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তারা এ ঘটনার জন্য প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন। অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের মতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই অবশ্যই সরকারকে সকল উন্নয়ন কাজে জনগণের মতকে প্রাধান্য দিতে হবে। গন্ডামারায় জনগণের মতকে প্রাধান্য না দেয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নিজের ভিটেমাটি রক্ষার জন্য নিরপরাধ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে প্রকল্প পরিবেশ বিপন্ন করে, মানুষ মারতে সহায়ক ভূমিকা রাখে, সেই প্রকল্পের দরকার নেই। জনগণের মতকে প্রাধান্য না দেয়ায় গন্ডামারায় সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নেমেছে। সরকারের উচিত ছিল ওই এলাকার জনগণের সাথে আলাপ-আলোচনা করে প্রকল্পটি গ্রহণ করা। কিন্তু সরকার এবং প্রকল্পের নীতিনির্ধারকরা সেটি করেনি। তিনি গন্ডামারায় নির্মাণাধীন বিদ্যুত প্রকল্পটির জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে কিনা, সন্দেহ প্রকাশ করেন। প্রতিনিধি দলটি বিকেল ৩টায় বাঁশখালী গন্ডামারার হাদিপাড়া মুজিব কেল্লার মাঠে পৌঁছে। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা জনগণের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেন। তারা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, জীবন ও পরিবেশ বিপন্ন করে এমন কোন প্রকল্প করা যাবে না। উদ্যোক্তারা নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে জমি হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। এমনও অভিযোগ আছে, টাকা কড়ি না দিয়েই অনেকের নিকট থেকে জায়গা দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন করতে হবে, তবে সেটি পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিবেশ রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে। না হয় মানুষ এভাবে আন্দোলনে নামবে। ‘গন্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন’ এর ব্যানারে এদিন একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ও গন্ডামারা এলাকার বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক লেয়াকত আলী তালুকদার, পার্শ্ববর্তী সরল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদসহ এলাকার বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষ। প্রকল্প সমন্বয়কের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ ॥ বাঁশখালীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার নেপথ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন চৌধুরীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দায়ী বলে অভিযোগ করেন এলাকার অনেকে। তাদের অভিযোগ, ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে তারই নির্দেশে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তিনি ভূমির মালিকদের কমমূল্য পরিশোধ করেছেন। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের মাধ্যমে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। তবে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, এলাকাবাসী ন্যায্যমূল্যের বিনিময়ে এ জমি বিক্রি করেছেন। কয়েক বছর ধরে চলেছে জমি কেনার কাজ। কিন্তু সে সময় কোন বিরোধিতা আসেনি। আন্দোলন কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ॥ রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার জন্য নতুন একটি ব্যানারের আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘গন্ডামারা বাঁচাও আন্দোলন’ নামে। শুক্রবার ছিল এ কমিটির প্রথম সমাবেশ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ‘বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী তালুকদারও। সমাবেশ শেষে কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিরোধ। মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা চান তাকে নেতা বানাতে। অপরদিকে লেয়াকত আলী চান তিনি নেতা হতে। এ অবস্থায় কমিটি ঘোষণার কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি। এলাকা পরিদর্শন ও কমিটি নিয়ে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে আজ শনিবার বাঁশখালীতে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে কমিটি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টির নেপথ্যে যে বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতির খেলা রয়েছে, তা আরও পরিষ্কার হয়েছে। গ্রেফতার ৯ ॥ বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৯ জনকে মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেনÑ মাসুদ আলী (৬২), শাহ আলম (৪৮), রফিক আহমেদ (২২), আকতার হোসেন (১৮), হুমায়ুন কবির (২৪), আবদুল আলীম (১৯), লোকমান (১৮), মোঃ ইকবাল (১৮) ও আলী আহমেদ। এরা সকলেই গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা। সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা তিন মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছিল। বিদ্যুত কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আল্টিমেটাম ॥ বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বাতিল করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠন বসতভিটা রক্ষা কমিটি। শুক্রবার বিকেলে সেখানে আয়োজিত এক শোক সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেন সংগঠনটির নেতা লেয়াকত আলী। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা না এলে উপজেলা প্রশাসন ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
×