ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরের তাগিদ সংসদীয় কমিটির

খোকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত ॥ ব্যবস্থার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০১৬

খোকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত ॥ ব্যবস্থার সুপারিশ

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। পাশাপাশি ইতোপূর্বে দুর্নীতি মামলায় ১৩ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত পলাতক এই বিএনপি নেতাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরেরও তাগিদ দিয়েছে কমিটি। রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী, ফজলে হোসেন বাদশা ও রহিমা আকতার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, সাবেক মেয়র খোকার দুর্নীতি তদন্তে সংসদীয় সাব কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দোকান ও খালি জায়গা বরাদ্দ, ভবন নির্মাণ এবং দরপত্র আহ্বানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি (মেয়র) ওই সকল অনিয়ম করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, বিগত দিনে সকল সিটি কর্পোরেশনে যত মেয়র ছিলেন সমস্ত আমলে উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। সেটা সম্পর্কে আমরা তদন্ত করছি। এই তদন্তের মধ্যে ঢাকার দুটো বিভক্ত করা হলো, সেখানে সব সরকারী আমলারা কাজ করেছেন। একটাতে ৪০ জন এবং আরেকটিতে ৪২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সাদেক হোসেন খোকা ১১ বছর অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। তখনকার কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত করেছি। তদন্ত করে অনেক অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটিতে উত্থাপিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন মার্কেটে ২৬টি দোকান ও খালি জায়গা বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয়নি। ওইসব স্থান বরাদ্দের জন্য সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সুপারিশ করেছেন। এ সব জায়গা ও দোকান বরাদ্দের কারণে চলমান মামলার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অনেক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কমিটি সূত্র জানায়, মালিটোলার ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারের নিচে, লেডিস হকার্স মার্কেট, জিন্দাবাহার লেইন, সিদ্দিক বাজার জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, ধোলাইখাল রোড, নর্থ-সাউথ রোডের পাশে পতিত জমি, সূত্রাপুর থানার পূর্ব দিকে লোহার ব্রিজ, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, সায়েদাবাদ দরবার শরীফের রাস্তা প্রবেশ পথ, ৭৫ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারের খালি জায়গা, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গ্রামীণফোনের যন্ত্রপাতি বসানোর জায়গা, গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ল্যাবএইড হাসপাতালের সংযোগ সেতু, ঢাকা নিউমার্কেট ১নং গেট, ঢাকা মেডিক্যালের ১নং গেট, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের খালি জায়গা, স্কয়ার হাসপাতালের দুই ভবনের মধ্যে সংযোগ, চক বাজার পাবলিক টয়লেট এবং নিমতলী মার্কেটের পূর্ব পাশে জায়গা বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রমনা শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পাওয়া মাসুদ কর্পোরেশনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ দেয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয় তাতে সিটি কর্পোরেশনের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। দিলকুশায় বহুতল বিশিষ্ট কার পার্কিং কাম বাণিজ্যিক ভবন সানমুনস্টার টাওয়ার নির্মাণের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে আর্থিক বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওই ভবন নির্মাণের সময় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল অনুসরণ করা হয়নি। ওই ভবন নির্মাণের চুক্তিতেও সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ কাজের জন্য মন্ত্রণালয় সাদেক হোসেন খোকা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করেছে। প্রসঙ্গত, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে গত বছরের অক্টোবরে সাদেক হোসেন খোকাকে ১৩ বছরের কারাদ- দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। সাদেক হোসেন খোকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তাকে পলাতক দেখিয়ে এই বিচার হয়েছে।
×