ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দালালদের কারসাজিই মূল কারণ

পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হতে পারল না বাহরাইনে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ এপ্রিল ২০১৬

পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হতে পারল না বাহরাইনে

ফিরোজ মান্না ॥ দালালদের খপ্পরে পড়ে বাহরাইনে বৈধ হওয়ার সুযোগ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী বঞ্চিত হয়েছেন। তারা দালালের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। ফলে এখন তাদের দেশে ফিরতে হবে। যে কোন সময় কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে পাঠাবে। বর্তমানে দেশটিতে ৪৩ হাজার বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গত বছরের ডিসেম্বর ছিল বৈধ হওয়ার শেষ সময়। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে কর্তৃপক্ষ আরও তিন মাস সময় বাড়িয়েছিল। সর্বশেষ সময় বেঁধে দেয়া হয় এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত। কিন্তু বাড়ানো সময়ের মধ্যেও বিরাটসংখ্যক কর্মী সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেননি। তাদের এখন দেশে ফেরা ছাড়া আর কোন পথ নেই। দেশটিতে ৩৮ হাজার বাংলাদেশী কর্মী বাহরাইন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করেছেন। এখন বাহরাইন কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ মাসের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। কর্মীরা বৈধ হয়ে পেশা বা চাকরির স্থানও পরিবর্তন করতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশটির কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাহরাইন লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) অবৈধদের বৈধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে বন্ধ শ্রমবাজার বাহরাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই বাজারটি খুলে গেলে অনেক কর্মী চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএ’র সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধিদল দেশে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল কয়েক দফা দেশটি সফর করেছেন। এরপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সঙ্গে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তারা বেশ কিছু শর্ত দিয়েছি। এই শর্ত পূরণ করার পর কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। প্রথমতও সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করেছে। এতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারেনি। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করেছে। যার কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েছিল। দরিদ্র মানুষও প্রতারণার শিকার হবে না। এলএমআরএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুল্লা আল আবছি সম্প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাটি অক্টোবর থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে না পারলে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর নবায়ন না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেন। জানা গেছে, কর্মীরা বৈধ হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য তারা যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে যদি কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে দেশেও ফিরতে পারবেন। বাহরাইন ইমিগ্রেশন তাদের কোন বাধা দেবে না। যদি সাধারণ ক্ষমার সময় পার করে কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যে সব কর্মী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারা আবার সাধারণ ক্ষমা বলবত থাকা অবস্থায় আবার বাহরাইনে যেতে পারবেন। অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য এলএমআরএ’র একটি কল সেন্টার খুলেছিল। এই কল সেন্টার থেকে বৈধ হতে কি কি করতে হবে তার তথ্য জেনে কর্মীরা আবেদন করেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের এই শ্রমবাজারটি বন্ধ ছিল। এ কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে তারা এখন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর বাহরাইন কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় চার বছরের চেষ্টার ফলে বাহরাইনে অবৈধ কর্মী বৈধ হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল একাধিকবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বাহরাইনের শ্রম বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) তথ্যানুযায়ী দেশটিতে বিভিন্ন দেশের ৬১ হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী আছেন। এরমধ্যে প্রায় ৪৩ হাজারই বাংলাদেশী নাগরিক। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈধ না হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একযোগে গোটা বাহরাইনে অভিযান চালানো হবে। যারা অবৈধ কর্মী তাদের হয় দেশে পাঠানো হবে না হয় জেলে যেতে হবে।
×