ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বল এখন শাসক দলের কোর্টে ॥ খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ এপ্রিল ২০১৬

বল এখন শাসক দলের কোর্টে ॥ খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সঙ্কট নিরসনে সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, বল এখন শাসক দলের কোর্টে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। জনগণের সরকার নেই। সুশাসন নেই। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। সবখানে নৈরাজ্য। আইনশৃঙ্খলার সীমাহীন অবনতি ঘটেছে। কারো কোন নিরাপত্তা নেই। জাতীয় অর্থনীতি ছত্রখান হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জনগণের অর্থ-সম্পদ নিরাপদ নয়। ডিজিটাল ডাকাতি করে সে অর্থ লুটে নিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ রয়েছে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, নারীর সম্ভ্রম হরণ, দুর্নীতি ও লুণ্ঠন অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি বিপন্ন। আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ক্ষমতাসীনদের কোন উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন করে ফেলা হয়েছে। বন্ধুত্বের বদলে গোলামীর পথ বেছে নিয়ে শাসকরা তাদের গদি রক্ষায় ব্যস্ত। ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং আলেম সম্প্রদায় নানাভাবে নিগৃহীত ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অন্য ধর্মের লোকদেরও কোন নিরাপত্তা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্য ধর্মের নাগরিকদের ভোটই শুধু চায় না, তাদের সহায়-সম্পদও দখল করে নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়, সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পেতে চায়। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সঙ্কট নিরসনে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। বল এখন শাসক দলের কোটে। তারা সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের পথে সমস্যার সমাধান করবে বলে আমি আশা করি। দেশের চরম সঙ্কট উত্তরণে আমি আজকের সম্মেলন থেকে সম্মানিত আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানাই। এদেশে হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমির ও ফকির মজনু শাহরা ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামেও আলেম সমাজ পিছিয়ে ছিলেন না। স্বাধীন দেশের মানুষের অধিকার ও ইনসাফ কায়েমের জন্য আপনারা অকাতরে জীবন দিতেও পিছপা হননি। আগামীতেও আপনাদের সে ভূমিকা দেশবাসী আশা করে। আপনারা জানেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে স্পষ্ট কথা বলাও উত্তম জিহাদ। দেশে শান্তি, সুশাসন, গণতন্ত্র জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়, আলেমসহ সকলের সম্মান রক্ষায়, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায়, জুলুমের অবসান কল্পে আপনারা ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হোন। এই সম্মেলন আপনাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে পথ দেখাক, আমি সেই দোয়া করি। এই ঢাকার রাজপথেও ওলামা মাশায়েখ, হাফেজ ও মাদরাসার গরিব শিক্ষক-ছাত্রদের রক্ত ঝরেছে। সেই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। লোভ ও ভয়ের মুখে ঈমান নষ্ট না করে আপনারা যারা ইসলামী ঐক্যজোটের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন তাদের ধন্যবাদ। খালেদা জিয়া বলেন, ক’দিন আগেই আমরা দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করেছি। কাউন্সিলের পর আমরা এখন দল পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত রয়েছি। ওই কাউন্সিলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা আমি তুলে ধরেছি। এ সমস্যা ও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ-নির্দেশনাও আমরা তুলে ধরেছি। আমরা মনে করি, যে অসুস্থ রাজনৈতিক যে ধারা এদেশে চালু করা হয়েছে সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেখাতে হবে নতুন সম্ভাবনার পথ। জাতির বিরাজমান সমস্যাবলী সমাধানের জন্য সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে। সেইসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখন একটি ভিশন ও কর্মসূচী চূড়ান্ত করার কাজ করে যাচ্ছি। আলেম সম্প্রদায়সহ সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আমরা সেই কর্মসূচীতে রাখছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। কিন্তু তারা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে আক্রান্ত নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এ দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আবহমানকাল থেকে পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে। এটা আমাদের পরম গৌরবের বিষয়। সে ঐতিহ্য ও গৌরবকে ক্ষুণœ করার জন্য বিভিন্ন সময় কায়েমী স্বার্থবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে থাকে। আমাদের সম্মানিত আলেম সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে, যাতে আমাদের বদনাম না হয়। ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আপনারা সে শান্তির ধর্মের নেতা। হিংসা, হানাহানি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান ইসলামে নেই। ইসলাম শান্তির পক্ষে, মজলুমের পক্ষে, ইনসাফের পক্ষে, সুশাসনের পক্ষে, মৈত্রীর পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক সন্ত্রাস, প্রতিহিংসা ও নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইসলামের পবিত্র শিক্ষার আলোকে আপনারা শান্তির পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন, এই কাউন্সিলে আপনাদের প্রতি সেটাই আমার আহ্বান। আপনারা জানেন বাংলাদেশেও পবিত্র ইসলামের নামে বিপথগামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে আমরা তাদের কঠোর হাতে দমন করতে পেরেছিলাম। আমাদের সেই অভিযানে সম্মানিত আলেম সম্প্রদায় সন্ত্রাসবিরোধী জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেজন্য আমি আপনাদের মোবারকবাদ জানাই। আমি আশা করি পবিত্র ধর্মের নামে সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে আপনাদের এই দৃঢ় ভূমিকা আগামীতে আরও জোরদার হবে। শিক্ষার ওপর ইসলাম অনেক গুরুত্বরোপ করেছে। ইসলাম দিয়েছে নারীর মর্যাদা। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে পবিত্র আমানত ভাবতে শিখিয়েছে ইসলাম। পবিত্র ইসলাম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি এবং বৈষম্য নিরসনের পথ দেখিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে আপনারা আপনাদের নীতি নির্ধারণ ও কর্মতৎপরতা পরিচালনা করবেন বলে আমি আশা করি। ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমি আপনাদের এ সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি। জাতীয় জীবনের এক কঠিন দুঃসময়ে আপনাদের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা সকলে দোয়া করবেন, যাতে দেশের জনগণ এই কঠিন সঙ্কট থেকে মুক্তি পায়। দেশে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। জনগণ তাদের সকল অধিকার ফিরে পায়। জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটে। আপনারা পবিত্র কোরানে কারীমের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। আমিও তার উল্লেখ করে মুনাজাত করিÑ সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হোক। ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সভাপতি নূর হোসেন কাশেমী, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল করিম খান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনালের (অব.) সৈয়দ মোহাম্মাদ ইবরাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়েত ওলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি আবদুর রউফ ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক জালালাবাদ প্রমুখ। মওদুদ গুরুতর অসুস্থ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গুরুতর অসুস্থ। বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ভিসার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দ্রুতই তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
×