ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত সন্ত্রাসী দল-এবার অনুধাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ এপ্রিল ২০১৬

জামায়াত সন্ত্রাসী দল-এবার অনুধাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্র

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক কর্মকা-ের নামে কোন দলকেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৎপরতা চালাতে দেবে না বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ড. সারাহ সুয়লের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী কর্মসূচী বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটি। মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ড. সারাহ সুয়ল ও সহকারী সেক্রেটারি এ্যালান বার্সিন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচী পরিচালনা করার সুযোগ নিশ্চিত করতে বলে থাকে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচীর আড়ালে কোন কোন দল জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যুক্ত রয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী একটি সন্ত্রাসী দল, এটা তাদের আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র সহজে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারত না। এখন তারা সহজেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষিত জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচী বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা চেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতাও করছি। সন্ত্রাসবাদ দমনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নেয়া পদক্ষেপে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ও শক্তিশালী। ইতোমধ্যেই দুই দেশের চতুর্থ অংশীদারী সংলাপ, চতুর্থ নিরাপত্তা সংলাপ ও চতুর্থ সামরিক সহযোগিতা সংলাপ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় টিক্্ফা সংলাপ হয়েছে ও ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিতকরণে, সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণে, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ও সুশাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ জ্বালানি ইত্যাদি বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করছে দু’দেশ। বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে কাজ করছে। গণতন্ত্র এবং রাজনীতিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর হতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল স্থানীয় নির্বাচনসমূহে অংশগ্রহণ করছে। অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, ত্রিশটির বেশি টিভি চ্যানেল, এক হাজারেরও বেশি পত্র-পত্রিকা বাংলাদেশে যেভাবে মতপ্রকাশ করে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায় তাদের যে সংগঠিত মতামত তুলে ধরে তাও সরকার নজরে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বৃহত্তর শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে এর অপব্যবহারও সরকারের নজরে রয়েছে। ড. সারাহ সুয়ল বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কমিউনিটি পুলিশ এবং ইমামদের সাহায্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ খুবই চমৎকার বলে উল্লেখ করেন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত ‘কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী কর্মসূচী উপস্থাপন করেন। নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সারাহ সুয়ল এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু জাতিসংঘের সকল কার্যক্রমেই বাংলাদেশের সমর্থন থাকে এক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হবে না। বৈঠকে মার্কিন সহকারী সেক্রেটারি এ্যালান বার্সিন বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় গৃহীত ত্বরিত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ ড. সারাহ সুয়ল ও এ্যালান বার্সিন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ হয়ে যাওয়া ৩০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানিয়েছেন, আইনগত সব সহযোগিতা দেয়ার পরেও তারা বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। আদালত তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই ফেরত নিতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ফেরত নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি- ওই ৩০ জন বাংলাদেশী কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
×