ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কমার্স সাইট ॥ আমাজন.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ মার্চ ২০১৬

কমার্স সাইট ॥ আমাজন.কম

আমাজন.কম একটি মার্কিন ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য কোম্পানি যার সদর দফতর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে অবস্থিত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ইন্টারনেট ভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা। প্রথমে আমাজন.কম একটি অনলাইন বইয়ের দোকান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে এটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিভিডি, ভিএইচএস, সিডি, ভিডিও এবং এমপিত্রি ডাউনলোড বা স্ট্রিমিং, সফটওয়্যার, ভিডিও গেম, ইলেক্ট্রনিক্স, পোশাক, আসবাবপত্র, খাবার, খেলনা, এবং গহণা বিক্রির বিশাল অনলাইন সাইট হিসেবে প্রকাশিত হয়। আজ ডিজিটাল দুনিয়ার কাছে আমাজন এক পরিচিত নাম। অনলাইন বইয়ের দুনিয়া মানেই আমাজন। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে অনলাইনে ডিজিটাল বইয়ের রমরমা ব্যবসা করে চলেছে এই বিশ্বব্যাপী অনলাইন সাইট। ধরনের দিক হতে আমাজন একটি পাবলিক সাইট। যার ব্যবসা হিসেবে ন্যাসড্যাক-১০০ কম্পোনেন্ট, এস এ্যান্ড পি-৫০০ কম্পোনেন্ট এবং ন্যাসড্যাক এ এমজেডএন সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি ২২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাজন.কমের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস এবং অবাক হলেই এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও তিনি! এটি বর্তমানে ই-বুক সেবা ছাড়াও অনলাইন শপিং, ওয়েব হোস্টিং ও বিভিন্ন রকমারি বিষয়বস্ত বিতরণ করে থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ২০১৪ সালে এর আয় ছিল ৮৮.৯৮৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তখনকার হিসাবমতে এর মোট কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় ১,৫৪১০০ জন। আর এই ২০১৬ তে এসে এর কর্মী সংখ্যা অভাবনীয় পর্যায়ে বেড়েছে সন্দেহ নেই। ইংরেজী, ফরাসী, জার্মান, স্প্যানিশ, ইতালীয়, জাপানী, চীনা, ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, প্রমিত চীনা উপলব্ধ ভাষায় ব্যবহৃত এই সাইট সকলের নিকট নির্ভরযোগ্য একটা ই-কমার্স সাইট বলে বিবেচিত। মজার বিষয় হলো, প্রায় দুইযুগ ধরে সফল অনলাইন ব্যবসা করার পর এবার তারা খুলছেন বিপণিবিতান। হ্যাঁ, এই দোকানে বই-ই শোভা পাচ্ছে। তবে ডিজিটাল বই নয়, প্রিন্ট বইও। কয়েক বছর আগে আমেরিকার সিয়াটলে উদ্বোধন করা হয় আমাজনের এই বইয়ের দোকানের। জেফ বেজসের হাতে গড়ে তোলা এই বইয়ের দোকানে ইতোমধ্যে স্থান পেয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বই। আমাজনের এই বইয়ের দোকান খোলার পেছনে কাজ করছে অনলাইন পাঠকের ডিজিটাল বইয়ের প্রতি অনীহাও। কারণ পাঠক শুধু গ্যাজেটে নয়, বইয়ের পাতা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখতেও চায়। সে কারণেই বইয়ের এই বাজারটিও ধরতে আমাজন এই কৌশল। আর আমাজনের এই উদ্যোগ বই ব্যবসার সনাতন ব্যবস্থাকেই চাঙ্গা করার যেন ইঙ্গিত। অন্যদিকে আমাজন.কম খরচের ট্যাবলেট পিসি বিক্রি করছে এখন। ট্যাবলেট পিসির বাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ্যাপলের আইপেড উন্মোচনের পর আরও প্রস্তুতকারী বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে। আমাজন.কম বলেছে তারা সাধারণ আইপেডের তুলনায় কম দামে নিজেদের তৈরি ট্যাবলেট পিসি বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে। তাদের তৈরি ট্যাবলেট পিসি বাজারে পাওয়া যাবে ১৯৯ ডলালে। যা কিনা এ্যাপলের আইপেডের তুলনায় কম। একটি এ্যাপল আইপেডে মূল্য ৪৯৯ ডলার। এখন শুধুই অপেক্ষা। দেখা যাক, আমাজন ট্যাবলেট পিসির বাজারে এ্যাপলকে পেছনে ফেলতে পারে কিনা। তবে এই বিশাল সাইটের কিছু সমস্যা বিশ্বের তাবত লোকদেরও কম পোহাতে হয়নি। খুচরা পণ্য বিক্রির এই ওয়েবসাইট আমাজনের ইউরোপীয় সাইটগুলো এর আগে বেশকিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। সেদিন বড়দিনের জন্য যখন ব্যাপক কেনাবেচা চলচিল, তখন ব্রিটিশ, ফরাসী, জার্মান, অস্ট্রীয় ও ইতালীয় সাইট আধা ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাজন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইউরোপের ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্কে হার্ডওয়্যারের ত্রুটির কারণে ইউরোপীয় সাইটগুলো বন্ধ হয়েছে। এটা কোন হামলা নয়। আধা ঘণ্টার জন্য আমাদের ইউরোপীয় সাইটগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাতেই গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে আধা ঘণ্টা পর সাইটগুলো সচল হওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।’ তবে এ কথা সত্য যে, মার্কিন গোপন তথ্য ফাঁস করে সারা বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দেয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসকে সমর্থন করে, এমন ওয়েবসাইটগুলোর বিরুদ্ধে কয়েকদিন ধরেই অজ্ঞাত হামলাকারীরা সাইবার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাজনের সাইটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকে ধারণা করেছিলেন, এ ক্ষেত্রে তেমন কোন ঘটনাই ঘটেছে। আমাজন ১ ডিসেম্বর উইকিলিকস ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু তার সার্ভার থেকে সরিয়ে দেয়। আমাজন জানায়, উইকিলিকস তার শর্ত ভঙ্গ করেছে। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সুখবর শোনা যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন ড্রোন দিয়েই আধা ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে বিক্রিত পণ্য ডেলিভারি দেবে ক্রেতার বাড়িতে। ক্রেতার বাড়িতে নিরাপদে এবং সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য এই ক্ষুদ্র আকাশযানটি প্রবল বাতাস, জ¦ালানি সঙ্কট এবং সম্ভাব্য সেন্সর বিভ্রাট মোকাবেলা করতে পারবে। সত্যিই এটি একটি বিশাল খবর সকলের জন্য। ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ের ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (বিমান প্রকৌশলী) আলী আকবার আগা মোহাম্মদী এবং তার সহকর্মীরা একটি কম্পিউটারের এলগোরিদম উন্নয়ন করেছেন, যা ড্রোনকে তার যন্ত্রপাতি এবং সেন্সরকে মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণের জন্য সক্ষম করে তুলবে। এদেশে বইয়ের এখন নানা সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যেমন- শক্তমলাট সংস্করণ, বুক ক্লাব সংস্করণ, পেপারব্যাক সংস্করণ, অডিও সংস্করণ, বৃদ্ধদের জন্য বড় হরফ সংস্করণ ইত্যাদি। আর আমাজন.কম এর এই ইলেক্ট্রনিক বুক বা ই-বুক সংস্করণ সত্যই অবিশ্বাস্য। ই-বুক এত সহজলভ্য ও সুলভ যে ইচ্ছা না থাকলেও পাতা উলটিয়ে দেখার জন্য অনেকে কিনে ফেলে। ফলে কাগজের বই যেখানে ১০টা বিক্রি হয় ই-বুক বিক্রি হয় ১০০টা। বাংলা ই-বুকের সম্ভাবনা বিশাল, বিষয়টি নিয়ে হয়ত অনেকে চিন্তাভাবনা করছে। তবে যারা বাংলা বইয়ের প্রকাশক তারা তেমন গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করছেন বলে মনে হয় না। কারণ তারা সত্যিকারের প্রকাশক না। তবে একবার কেউ আরম্ভ করলে সকলে তখন তাকে নকল করে দৌড়াতে আরম্ভ করবে। বাংলা ই-বুকের বাজার সারা দুনিয়ায়, কারণ বিদেশে কয়েক কোটি বাংলাভাষী শিক্ষত মানুষ রয়েছে। তারা বই পড়ে, ইংরেজী বই পড়ে। তাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলা বই সহজলভ্য হলে তারা বাংলা বই পড়ত। অথচ বাংলা বই সহজলভ্য তো নয়, দামও তুলনামূলক বেশি। দেশে যে বইয়ের দাম ৩০০ টাকা সে বই কানাডায় ২০ ডলার মানে ১৪০০ টাকা। এই বইটি যদি আমাজনে ই-বুক হিসেবে পাওয়া যেত তাহলে বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে অনেক কম দামে মাত্র ২ ডলারে কিনতে পারতাম। যদিও ২ ডলার মানে প্রায় ১৩০ টাকা। তবু বিদেশে ২ টাকার সমান, অনেক সস্তা; প্রায় বিনামূল্যে। এদেশে কাগুজে বইয়ের বাজার ছোট হয়ে আসছে, বড় হচ্ছে ই-বুকের বাজার।
×